দোষারোপের গর্তে খোদ ইসিএল
চারটি প্রাণের বিনিময়ে বেড়া
বশেষে ছাই দিয়ে ভরাট করা ধস এলাকার চারপাশে বেড়া দিল ইসিএল।
দিন দশেক আগে অন্ডালের পরাশকোলে একটি রাস্তার পাশে ধস নামে। তা ছাই দিয়ে ভরাট করে ইসিএল। শনিবার ও সোমবার সেই ছাই বসে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়। শনিবারের ঘটনায় চার জনের মৃত্যুও হয়। ধস ভরাটের পরে ওই এলাকায় ইসিএলের তরফে কোনও বেড়া দেওয়া বা সতর্কীকরণ বোর্ড লাগানো হয়নি কেন, সে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
সোমবার ফের ধসের পরে এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন ইসিএলের দুই আধিকারিক। বাসিন্দারা পুনর্বাসনের দাবি জানান। ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, ধস ভরাটের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সোমবার রাত থেকে এলাকায় বেড়া দেয় ইসিএল। ইসিএলের তরফে জানানো হয়, ওই এলাকায় ভূগর্ভের কী পরিস্থিতি, তা জানতে সমীক্ষা হবে।
তবে ইসিএলের আশ্বাসে আতঙ্ক কাটছে না বাসিন্দাদের। এলাকায় পরপর ধসের ঘটনার জন্য দায়ী ইসিএল-ই, দাবি বাসিন্দাদের। অন্ডাল পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সিপিআইয়ের প্রভাত রায় জানান, বছরখানেক আগে তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে সাঁকতোড়িয়ায় ইসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে ধস প্রতিরোধের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। প্রভাতবাবু বলেন, “কারা কয়লা কেটে নিচ্ছে তা ইসিএলের অজানা নয়। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।” তিনি জানান, ইসিএলের কাছে দাবি পেশের পরে পরাশকোলে পরিত্যক্ত খোলামুখ খনিটি ভরাট করা শুরু হয়। কিন্তু ২০ শতাংশ কাজ হওয়ার পরেই কাজ বন্ধ করে চলে যায় ইসিএল। এখন ধসে বিপর্যস্ত মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ইসিএলকেই করতে হবে বলে দাবি তাঁর।
ফাইল চিত্র।
পরাশকোলের বাসিন্দা প্রভাত চট্টোপাধ্যায়, মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়দের অভিযোগ, “কয়লা চোরদের দৌরাত্ম্যেই এমন অবস্থা হয়েছে। প্রতিবাদ করার উপায় ছিল না। এখন আমরা আতঙ্কে আছি, যে কোনও সময়ে মাটির তলায় চলে যেতে পারি।” তাঁরা বলেন, “ধস ভরাটের পরেও রাস্তা দিয়ে চলতে ভয় লাগছে। কতটা পদ্ধতি মেনে ভরাট করা হয়েছে, যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।” শনিবার ছাই ধসে মৃত ইসিএল কর্মী তারক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাকা অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “ইসিএল পুনর্বাসন না দিলে কিছু মানুষ হয়তো অন্যত্র বাড়ি করে উঠে চলে যেতে পারবেন। কিন্তু অধিকাংশেরই সে সামর্থ্য নেই। পরিণতি কী হবে, বুঝতে পারছি না। পায়ের তলার মাটি বসে যে কোনও দিনই সব তলিয়ে যেতে পারে।”
এলাকার আইএনটিটিইউসি নেতা গুরুপ্রসাদ চক্রবর্তী জানান, ইসিএলের আইন অনুযায়ী পাথর, প্রয়োজনে গাছের গুঁড়ি, তার উপরে মাটি ফেলে ভরাট করার কথা। তার উপরে ছাই দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে ধস ভরাটে শুধু ছাই ফেলা হয়েছে। তাই এমন ঘটনার দায় ইসিএল এড়াতে পারে না বলে দাবি করে গুরুপ্রসাদবাবু বলেন, “এর তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া উচিত ইসিএল কর্তৃপক্ষের।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগকে অবশ্য বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ ইসিএল কর্তৃপক্ষ। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের দাবি, “এক বছর আগেই আমরা ওই এলাকায় পরিত্যক্ত খোলামুখ খনি ও অবৈধ খনিগুলি বন্ধ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় কিছু লোকজনের বাধায় আমাদের কর্মীরা কাজ বন্ধ করে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।” তিনি বলেন, “জনপদের অস্ত্বিত্ব বিপন্ন হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় মানুষের এমন বাধায় আমরা বিস্মিত। তবে ধসপ্রবণ এলাকা বেড়া দিয়ে না ঘেরার অভিযোগ সম্পর্কে নীলাদ্রিবাবুর জবাব, “সংস্থার স্থানীয় আধিকারিকদের কাছে জেনেছি, তার দিয়ে এলাকা ঘেরা হয়েছিল। এলাকারই কিছু লোকজন তা খুলে নিয়েছে।” যদিও, সোমবার ডিজিএমএসের তরফে জানানো হয়েছিল, ধস ভরাটের জন্য মাটি কাটার যন্ত্র ও গাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য তারাই বেড়া সরিয়েছে বলে তাদের জানিয়েছে ইসিএল।
নীলাদ্রিবাবু অবশ্য দাবি করেন, বিধি মেনেই ওই ধস ভরাট করা হয়েছিল। কিন্তু ভরাটের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ওই এলাকায় যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমন ধসের ব্যাপারে তাঁরা কোনও তদন্ত করবেন কি না, সেই প্রশ্নে নীলাদ্রিবাবুর জবাব, “কেন এমন হয়েছে, কারও অজানা নয়। এর পরে তদন্তের আর কী আছে।” বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের দাবির বিষয়টি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
Previous Story Bardhaman Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.