হাতে আর কয়েকটা দিন

কেবারে প্রথম দিনেই চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা। বাধ্য হয়েই কিছুটা রদবদল করতে হল কাউন্সেলিং-এর দিনক্ষণ। আজ অর্থাৎ ১৯ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে জয়েন্টের মেধা তালিকাভুক্ত সাধারণ প্রার্থীদের কাউন্সেলিং। এর মধ্যে ১৯-২১ হবে টিউশন ফি ছাড়প্রাপ্তদের। আর বাকিদের চলবে ২২ জুলাই থেকে ৫ অগস্ট পর্যন্ত।

নজর অন্য শাখাতেও

আগের সংখ্যায় বলা হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজির কথা। যা পড়ার সুযোগ এ বারই প্রথম খুলল জয়েন্ট উত্তীর্ণদের সামনে। আর এই পর্বে দেওয়া হল এই রকমই আরও কিছু পাঠ্যক্রমের হদিস।
ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স, সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, আই টি বেশির ভাগ পড়ুয়ার নিশানা। কিন্তু এর বাইরেও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলির উপর কাউন্সেলিংয়ের সময় অনেকেরই নজর কম থাকে। অথচ সেগুলির চাহিদা যথেষ্ট।
গত বছর সেন্ট্রাল সিলেকশন কমিটির কাউন্সেলিং-এর সময় বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির ‘এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ বি টেক পড়ার শেষ সুযোগটি যে পেয়েছিল, তার স্থান মেধা তালিকায় ছিল ৯৪৯। অথচ ইলেকট্রনিক্স, মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল-এ তাদের আসন অনেক আগেই ভরে গিয়েছিল।
এই রকমই একটি শাখা অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। গত বছর এমসিকেভি অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বি টেক-এর আসন ভরাতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২২,০১৪ জনের কাউন্সেলিং পর্যন্ত। অথচ কলেজের সহ-অধ্যক্ষ তীর্থঙ্কর দত্ত-র দাবি, যথাযথ প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন অটোমোবাইল সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার ফলে প্রতিষ্ঠানের বহু ছাত্রছাত্রীই মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রা, টাটা মোটরস, ভলভো, ফোর্স মোটরস-সহ একাধিক সংস্থায় প্রতি বছর চাকরি পাচ্ছে।
একই অভিজ্ঞতা দমদমের সুধীরচন্দ্র শূর ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেরও। ২০০৯ থেকে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং চালু। ২০১০-এ এই বিষয়ে প্রথম ছাত্র পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২৩,৮০২ জনের কাউন্সেলিং পর্যন্ত।
কিছুটা দ্বিধা কাজ করে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও। রাজ্যে এই বিষয়টি পড়ায় দু’টি কলেজ। আই টি এম ই (রায়চক) এবং সিকম মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (হাওড়া)। তবে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-কে কেরিয়ার করতে একটু ভিন্ন মানসিকতা জরুরি বলে মনে করেন সিকম মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কর্তা অনীশ চক্রবর্তী। তাঁর মতে, আরামদায়ক পরিবেশে গতানুগতিক চাকরি করতে আগ্রহী যারা, এই বিষয়টি তাদের জন্য নয়। কঠোর নিয়মানুবর্তিতা আর তীব্র রোমাঞ্চের মিশ্রণ একে আর পাঁচটা পেশার থেকে আলাদা করেছে। এ ক্ষেত্রে ভর্তির নিয়মও এ বার অন্যান্য বিষয়ের থেকে আলাদা। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হলে জয়েন্ট উত্তীর্ণদের ক্ষেত্রে বা ১০+২ স্তরে রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও অঙ্ক মিলিয়ে ৬০% নম্বর পেতে হবে, জানান অনীশবাবু। ইংরেজিতেও দশম বা দ্বাদশে থাকতেই হবে ৫০%।
কাউন্সেলিং-এ কিছুটা ব্রাত্য থেকে যায় বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-ও। গত বছর কলকাতার নেতাজি সুভাষ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এই শাখায় আসন ভরাতে ৪০,৪৬৩ জনের কাউন্সেলিং পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কল্যাণীর জেআইএস ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ওই বিষয়ে প্রথম ভর্তি হওয়া প্রার্থীর মেধা তালিকায় স্থান ছিল ৩১,৩০৩। অথচ বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে চাকরির পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা ও গবেষণারও বিপুল সুযোগ থাকে, দাবি জেআইএস গোষ্ঠীর কর্তা তরণজিৎ সিংহর। তাঁর মতে, কম প্রতিষ্ঠান বিষয়টি পড়ায় বলে প্রতিযোগিতা কম কিন্তু চাহিদা বেশি। টেকনো সল্টলেক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ফুড টেকনোলজি চালু আছে। কিন্তু ভর্তির বিষয়টি নিয়ে মোটেই খুশি নন গোষ্ঠীর অধিকর্তা সত্যম রায়চৌধুরী। তাঁর কথায়, “বিদেশে ফুড টেকনোলজি নিয়ে বিস্তর গবেষণা-উন্নয়নের কাজ হয়। চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কিন্তু এ দেশে লেখাপড়ার স্তরে তা ব্রাত্য। সরকারি স্তরে এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা না-হলে সমস্যা থাকবেই। পড়ুয়ারাও বিষয়টির কদর সম্পর্কে সন্দিহান থাকে।”

আসন পূরণের দৌড়
মেধা তালিকার প্রথম দিকে থাকা ছাত্রছাত্রীদের কোন বেসরকারি কলেজের দিকে নজর ছিল তা জানা যায়, কোথায় সব থেকে আগে আসন ভর্তি হয়েছে সেই তথ্য থেকে। বিষয় বাছার ক্ষেত্রেও কোনটির চাহিদা বেশ, তা জানা সম্ভব এই সূত্র ধরেই। যেমন, ২০১০-এ পড়ুয়াদের নজর বেশি ছিল কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল ও সিভিলের উপর।
অন্য দিকে, ওই বছর ১৫ হাজারের মধ্যে স্থানাধিকারীরা যে কলেজগুলি বেছে নিয়েছিল, সেগুলি হল নেতাজি সুভাষ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, টেকনো ইন্ডিয়া সল্টলেক, টেকনো ইন্ডিয়া নিউটাউন, এমএসআইটি, বিআইটি, জেআইএস কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, নারুলা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, অ্যাকাডেমি অফ টেকনোলজি, সেন্ট টমাস ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ক্যালকাটা ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, এম সি কে ভি ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ফিউচার ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, হলদিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, বি পি পোদ্দার ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি, হুগলি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজ, আর সি সি ইনস্টিটিউট অফ ইনফর্মেশন টেকনোলজি, ডি আই এ টি এম, ডক্টর বি সি রায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বেঙ্গল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি। উপরোক্ত পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে একটিতে আসন পূরণ হলেও, সেই কলেজের নামটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমনও হতে পারে উক্ত কলেজে হয়তো প্রত্যেকটি বিষয় পড়ানো হয় না।

পড়ার খরচ
বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেসরকারি কলেজে পড়ার খরচ বেশি। যেমন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫টি বিষয়ে খরচ বছরে ২,৪০০ টাকা। তথ্যপ্রযুক্তিতে শুধু বছরে ৩০ হাজার টাকা। বেসু-তে প্রতি সেমেস্টারে লাগে সাত হাজার দুশো টাকা। অন্য দিকে, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এ বছর থেকে বি-টেক পড়তে টিউশন ফি বাবদই লাগবে তিন লক্ষ টাকার কাছাকাছি। সঙ্গে আছে অন্য টুকিটাকি খরচও। হোস্টেলে থাকলে তার খরচ আলাদা।

ডাক্তারি পড়বে যারা
একাধিক পরিবর্তিত নিয়মের সৌজন্যে যথেষ্ট সাড়া জাগিয়ে শুরু হয়েছে জয়েন্ট এন্ট্রান্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাউন্সেলিং। পাশাপাশি তুলনায় কিছুটা নীরবেই শুরু হয়ে গেল জয়েন্ট এন্ট্রান্স মেডিক্যালের কাউন্সেলিং-ও। প্রথম পর্যায়ে রাজ্যের ১৭টি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির জন্য কাউন্সেলিং হবে মাত্র তিন দিন। অর্থাৎ ২১ জুলাই পর্যন্ত। সব মিলিয়ে আসনসংখ্যা ১,৯৫০টি। তবে পরে আসন একটু বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। কাউন্সেলিং হবে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে।
কোথায়, ক’টি আসন: (১) কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ২৫০টি (২) নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ২৫০টি (৩) আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ১৫০টি (৪) ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ১৫০টি (৫) বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে ১০০টি (৬) বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ১০০টি (৭) উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ১০০টি (৮) ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এ ১০০টি (৯) মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ১০০টি (১০) কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড জে এন এম হাসপাতালে ১০০টি (১১) মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ১০০টি (১২) কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতালে ১০০টি (১৩) কে পি সি মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ৫০টি (১৪) ডক্টর রফি আহমেদ ডেন্টাল কলেজে ১০০টি (১৫) উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজে ৫০টি (১৬) বর্ধমান ডেন্টাল কলেজে ১০০টি এবং (১৭) গুরু নানক ইনস্টিটিউট অফ ডেন্টাল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ-এ ৫০টি আসন।
যে ভাবে ভর্তি চলে: সাধারণ ভাবে প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, তার পর নীলরতন সরকার, তার পর ক্রমান্বয়ে আরজিকর বা ন্যাশনাল মেডিক্যালে ভর্তি হয় ছাত্ররা। রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য প্রবীর সুর-এর কথায়, “এমনটাই হয়ে আসছে। বছরের পর বছর এই রকম ধারাবাহিকতাই বজায় রাখতে দেখা যাচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের।” বিডিএস বা ব্যাচেলর ইন ডেন্টাল সায়েন্সেস-এর বাজার কেমন? প্রবীরবাবু জানিয়েছেন, মেধা তালিকার পিছনের সারির ছেলেমেয়েরাই সাধারণত এই পাঠ্যক্রমে যোগ দেয়। অথচ বিডিএসদের কাজের সুযোগ এখন যথেষ্ট বেশি।
গুরু নানক ইনস্টিটিউট অফ ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধ্যক্ষ তপনকুমার সাহারও মত, এখন বিডিএস উত্তীর্ণদের কাজের সুযোগ প্রচুর। নিজস্ব অনুশীলন এবং চাকরি, দুইয়েরই সুযোগ আছে। ৫০% ছাত্রছাত্রীকে জয়েন্টের মাধ্যমে নেওয়া হলেও বাকিদের বাছাই করে কলেজ। ১০+২ স্তরে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে মোট ৫০% নম্বর থাকলে ম্যানেজমেন্ট কোটায় ভর্তির আবেদন করা যায়। রাজ্যের অন্যান্য কিছু বেসরকারি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজেও এই কোটা আছে।
সেন্ট্রাল সিলেকশন কমিটির (মেডিক্যাল) চেয়ারম্যান অধ্যাপক উৎপল দত্তের মতে, এ বার সাধারণ তালিকাভুক্ত ৩,০০০ জন জয়েন্ট সফলকে কাউন্সেলিংয়ে ডাকা হয়েছে। গত বারের তুলনায় এখনও পর্যন্ত আসন বেড়েছে ৩৯৫টি। এর পর দ্বিতীয় পর্যায়ে হলদিয়ার মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজে কিছু আসন পূরণের সম্ভাবনা আছে বলে জানান উৎপলবাবু।
First Page



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.