|
|
|
|
ফোনে আড়ি পাতা কাণ্ড |
দুই পুলিশকর্তার ইস্তফা, চাপের মুখে ক্যামেরন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • লন্ডন |
এ যেন টানটান ‘থ্রিলার’ গল্পের মতো। যার বাঁকে বাঁকে চমক। ব্রিটেনে ফোনে আড়ি পাতা কাণ্ড ঠিক সেভাবেই এগোচ্ছে। আর প্রতিনিয়ত চাপ বাড়ছে দুই কাণ্ডারীর উপরে। এক জন সংবাদ সাম্রাজ্যের এত দিনের ‘সম্রাট’ রুপার্ট মার্ডক এবং অন্য জন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
খবর সংগ্রহের জন্য ফোনে আড়ি পাতা এবং পুলিশকে ঘুষ দেওয়ার ঘটনায় এ বার শুরু হয়েছে ইস্তফার পালা। জনরোষ এবং বেড়ে চলা চাপের মুখে অবশেষে গত কালই লন্ডন পুলিশ-প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দেন পল স্টিফেনসন। আর আজ তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে ইস্তফা দিলেন লন্ডন পুলিশের সহকারী কমিশনার জন ইয়েটসও। আবার কালই গ্রেফতার হয়েছিলেন মার্ডকের এত দিনের বিশ্বস্ত ‘সেনাপতি’ রেবেকা ব্রুকস। দীর্ঘ জেরার পরে আজ অবশ্য জামিন পেয়েছেন তিনি।
গত সপ্তাহেই গ্রেফতার হয়েছিলেন ‘নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ (এনওডব্লিউ)-এর প্রাক্তন উপসম্পাদক নিল ওয়ালিস। আর তাঁর সঙ্গে স্টিফেনসন এবং ইয়েটসের গভীর যোগসাজশ ছিল বলে অভিযোগ। ওয়ালিস এনওডব্লিউ ছেড়ে দিয়ে লন্ডন পুলিশের জনসংযোগ আধিকারিক হিসেবে যোগ দেন। আর তখন তাঁর যোগ্যতা যাচাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন ইয়েটস। প্রায় এক বছর তিনি কাজ করেছিলেন সেখানে। এ ছাড়া ২০০৯ সালে ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে পুলিশি তদন্ত পর্যালোচনা করেছিলেন ইয়েটস। আর স্টিফেনসনের সঙ্গেও ওয়ালিসের যোগাযোগ খুব ঘনিষ্ট ছিল বলে খবর। জানা গিয়েছে, এই বছরের গোড়ার দিকে একটি বিলাসবহুল ‘হেল্থ স্পা’-তে পুলিশ-প্রধান স্টিফেনসন প্রায় ৫ সপ্তাহ ধরে বিনা খরচে ছিলেন। আর সেখানকার জনসংযোগ আধিকারিক ছিলেন এই নিল ওয়ালিস। ফোনে আড়ি পাতার দায়ে ওয়ালিস গ্রেফতার হওয়ার পরেই প্রশ্ন ওঠে পুলিশের এই বড় কর্তাদের দিকে।
ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে নতুন নতুন গ্রেফতার এবং ইস্তফার মধ্যে প্রবল চাপের মধ্যে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও। পুলিশ প্রধান স্টিফেনসন ইস্তফা দেওয়ার পরে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে তিনি অনেক কিছুই জানেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চাপে পড়বেন বলে তিনি এ বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। এ ছাড়া, এনওডব্লিউ-এর প্রাক্তন সম্পাদক অ্যান্ডি কলসনকে তাঁর জনসংযোগ আধিকারিক হিসেবে নিয়োগ করার ঘটনায় স্টিফেনসনের দেখানো পথে তাঁর ইস্তফারও দাবি উঠেছে ব্রিটেনে।
ক্যামেরনের ঝামেলা এখানেই শেষ নয়। এই মুহূর্তে তাঁর আফ্রিকা সফর নিয়ে বিরোধীদের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে গোটা দেশ যখন উত্তাল সেই পরিস্থিতিতে কী ভাবে ক্যামেরন দেশের বাইরে থাকেন। এই সমালোচনার মুখে ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনার জন্য চলতি অধিবেশন আরও এক দিন বাড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন ক্যামেরন। রুপার্ট মার্ডক, তাঁর ছেলে জেমস এবং রেবেকা ব্রুকসের আগামী কাল পার্লামেন্টের তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হওয়ার কথা। আগামী বুধবার পার্লামেন্টে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন ক্যামেরন। তিনি তাঁর আফ্রিকা সফর কাটছাট করে ফিরে এসে পার্লামেন্টের ওই অধিবেশনে যোগ দেবেন বলেও জানান ক্যামেরন।
ফোনে আড়ি পাতা কাণ্ড প্রকাশ্যে আসতেই মার্ডকের ছোঁয়া থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ক্যামেরন। বারবার প্রমাণ করতে চাইছিলেন তাঁদের মধ্যেকার দূরত্ব। কিন্তু এই মুহূর্তে অবস্থানগত ভাবে মার্ডকের ঠিক সঙ্গেই দাঁড়িয়ে আছেন ক্যামেরন। কারণ, প্রবল চাপ এবং সমালোচনার মধ্যে দাঁড়িয়ে নিজেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা দু’জনেই। |
|
|
|
|
|