|
|
|
|

উত্তরের চিঠি
|
ফ্লোরাইড নিয়ে একটু ভাবুন |
 |
এই জল কি নিরাপদ? ছবি: তুহিনশুভ্র মন্ডল |
একটি সমস্যা গ্রাস করছে আমাদের, অথচ আমরা সে সম্পর্কে সেই অর্থে কিছুই জানি না। সমস্যাটি অত্যধিক দ্রুততায় বাসা বাঁধছে আমাদের শরীরে, অথচ আমরা সেই বিষয়ে অজ্ঞ। আর এখনও পর্যন্ত যাঁদের শরীরে বাসা বেঁধেছে, তাঁরা জানেনই না যে কি ভয়ঙ্কর রোগ তাঁদের সঙ্গেই ঘর করছে। আসলে বলতে চাইছি, ফ্লোরাইড আর ফ্লুরোসিসের কথা।
ফ্লোরাইড ফ্লুরিন-এর লবণ। প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় নয়, যৌগ হিসেবে পাওয়া যায়। ভূগর্ভস্থ জলই এর উৎস। আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠনের জন্য সামান্য পরিমাণে ফ্লোরাইডের উপস্থিতির কথা বলা থাকে। কিন্তু এ সব শুধু জানেন শহুরে কালচারে অভ্যস্ত শিক্ষিত বাবুরা। ফিলিমন সোনর কিংবা রাকেশ হেমব্রমরা এটা জানেন না। তবে সম্ভবত শহুরে বাবুরাও অনেকেই জানেন না যে ফ্লোরাইডের মাত্রা সামান্য একটু বেশি হলেই নানা রকম রোগ বা রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আর্সেনিকোসিস-এর মতো ফ্লোরাইড থেকে উদ্ভূত রোগ ‘ফ্লুরোসিস’ নামে পরিচিত। আমরা কি জানি, যে জলটা পান করছি, তাতে ফ্লোরাইড অনুমোদিত মাত্রার (প্রতি লিটার জলে ফ্লোরাইডের অনুমোদিত মাত্রা হল ১.৫ এম জি) চেয়ে বেশি আছে কি না? ফ্লুরোসিস রোগের লক্ষণ কী, এই বিষয়েও আমরা প্রায় অন্ধকারে। কারণ, ফ্লোরাইড কিংবা এ সম্পর্কিত রোগ নিয়ে কোনও কার্যক্রম কোথায়? প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য দফতরের ব্যাপক প্রচারাভিযান কোথায়?
ইউনিসেফ এবং ফ্লুরোসিস রিসার্চ অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, দিল্লির রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের যে ১৫টি রাজ্য ফ্লোরাইডের সমস্যায় আক্রান্ত, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম। সবচেয়ে ভয়ের কথা, বাঁকুড়া (১০টি ব্লক), বীরভূম (৭টি ব্লক), পুরুলিয়া (১৭টি ব্লক), দঃ ২৪ পরগনা (১টি ব্লক)-এর সঙ্গে উত্তরবঙ্গের দঃ দিনাজপুর (৫টি ব্লক), উত্তর দিনাজপুর (১টি ব্লক) এবং মালদহ (২টি ব্লক)ও ইতিমধ্যেই আক্রান্ত।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, কুমারগঞ্জ, তপন এবং কুশমণ্ডি ব্লক আক্রান্ত। কুমারগঞ্জ ব্লকের সীতাহার গ্রামের হারাকুরিতে এসসি১১৮৯৪৫২ টিউবওয়েল, মোহনা পঞ্চায়েতে দামোদরপুর গ্রামের এসসি১১৮৯৬৮৮, এসসি১১৯০২৭১ ও এসসি১১৯০৩৩১ টিউবওয়েলগুলি থেকে যে জল পাওয়া যায়, তাতে নিরাপদ মাত্রার থেকে বেশি ফ্লোরাইড আছে। এ তথ্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সরকারি ওয়েবসাইটেই বলা রয়েছে। কিন্তু গ্রামের, এমনকী শহরের বস্তিবাসী, তাঁরা কী করে ওয়েবসাইট দেখবেন? সরকারি প্রচারাভিযানই বিষয়টি সম্পর্কে তাঁদের জানাতে পারে। এমন কোনও প্রচার এখনও হয়নি। টিউবওয়েল, বা যে জলের উৎসগুলিতে ফ্লোরাইড বিপজ্জনক মাত্রায় রয়েছে, তা থেকে জলসংগ্রহ কি নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছে? ফ্লুরোসিস সম্পর্কে কি আজ পর্যন্ত কোনও মেডিক্যাল ক্যাম্প হয়েছে? হয়নি। যদি হত, তা হলে ফ্লোরাইড, ফ্লুরোসিস এ সব শুনলে গ্রামবাসীরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকতেন না। ফ্লুরোসিসে দাঁতের ক্ষয়রোগ, হাড়ের বিকৃতি দেখা দেয়। দাঁত ও হাড় হয়ে পড়ে ভঙ্গুর। দাঁতের ফ্লুরোসিসে প্রথমে চকের মতো সাদা হয়ে যায়, পরে হলুদ হতে থাকে। আর হাড়ের ফ্লুরোসিসে শিশুদের ক্ষেত্রে পায়ে ক্রমাগত ব্যথা হতে থাকবে, পা আস্তে আস্তে বাঁকা হয়ে যাবে। বড়দের ক্ষেত্রে পিঠের, গলার পেশিতে আড়ষ্টতা দেখা দেয়। সামনের দিকে ঝোঁকা, কিংবা সোজা হয়ে দাঁড়ানোই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
আজ তো ঘরে ঘরে এই সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে কর্তাব্যক্তিদের তো রাতের ঘুম উবে যাওয়ার কথা। |
তুহিনশুভ্র মণ্ডল। বেলতলাপার্ক, বালুরঘাট
|
এই বিভাগে চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
‘উত্তরের চিঠি’,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|
|
|
 |
|
|