মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম সফরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে। পশ্চিম মেদিনীপুরে সরকারি কর্মসূচির আগের রাতে মেদিনীপুরের সার্কিট-হাউসে উঠেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সফরসঙ্গী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়। আর মমতার নিরাপত্তাবাহিনী। পরদিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ নয়াগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু। কলকাতা থেকে এসে গিয়েছেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। সকলকে প্রাতরাশ দেওয়া হয়েছে। মুকুলবাবু ডাকলেন সার্কিট হাউসের দায়িত্বপ্রাপ্তকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডেকেছেন! আধিকারিক ছুটে এলেন। সবিনয়ে মুকুলবাবু বললেন, “কত হয়েছে?” প্রবল অবাক আধিকারিক— “মানে?” কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পাঞ্জাবির পকেট থেকে টাকা বার করলেন, “বিল কত হয়েছে?” আধিকারিক ঘোর অপ্রস্তুত। পাশ থেকে কেটারিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বললেন, “স্যার, মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন। এ তো সরকারি খরচ!” মুকুলবাবুর জবাব, “নাহ্! এটা কোনও দিন উনি (মমতা) করেন না। যেখানেই থাকেন, বিল মিটিয়ে আসেন। বিরোধী নেত্রী থাকার সময়েও করতেন। এখনও করবেন।” ততক্ষণে চলে এসেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী “নিয়ে নিন ভাই।” কী আর করা! নিতেই হল থাকা-খাওয়ার খরচ। মমতা বললেন, “এমনিতেই সরকারের ভাঁড়ে মা ভবানী। তার পরে যদি আমাদের কাছ থেকেও টাকা না-নেওয়া হয়, তা হলে তো বিপদ!”
|
পদে অবনতি। কিন্তু বেতন বৃদ্ধি! চাকরিতে সচরাচর হয় না। কিন্তু এ রাজ্যের পরিষদীয় রাজনীতিতে হয়। বাম জমানার আট জন মন্ত্রীর ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে। তার মধ্যে সাত জন আবার বিগত সরকারেই মন্ত্রী ছিলেন! বামফ্রন্ট তথা সিপিএমের ঘোর দুর্দিনের বাজারে এঁরা জিতে বিধানসভায় এসেছেন। ঘটনাচক্রে, এ রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রীদের থেকে বিধায়কদের বেতন, ভাতা-সহ পাওনা বেশি! মন্ত্রী থাকাকালীন যা বেতন পেতেন, এখন বিধায়ক হয়ে তার চেয়ে বেশি পাচ্ছেন তাঁরা! সিপিএমের এক প্রাক্তন মন্ত্রী অবশ্য বলছেন, “আমাদেরটা ও ভাবে দেখা ঠিক নয়। বেতনের টাকা তো দলের তহবিলে যায়। দল আমাদের ভাতা দেয়। আমরা তো পেশাদার বিপ্লবী!”
|
এ বারের বিধানসভায় নজিরবিহীন সংখ্যায় নতুন বিধায়ক এসেছেন। নজিরবিহীন ঘটনাও বেশি ঘটছে! সরকারপক্ষের মুখ্য সচেতকের কাছে গিয়ে এক মন্ত্রী যেমন অনুরোধ করেছিলেন, তাঁকে যেন বিধানসভার কোনও স্থায়ী কমিটিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়! মুখ্য সচেতক শেষমেশ তাঁকে বুঝিয়ে নিরস্ত করতে পেরেছেন যে, মন্ত্রীদের স্থায়ী কমিটির সদস্য করা যায় না। বিশেষ প্রয়োজনে সিলেক্ট কমিটি হলে তার প্রধান হন মন্ত্রীরা। স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়ে নবীন এক তৃণমূল বিধায়ক আবার মুখ্য সচেতককে অনুরোধ করতে গিয়েছিলেন, পরের দিনই তিনি যেন ওই কমিটির সদস্যদের খবর দিয়ে একটা বৈঠক ডাকিয়ে দেন। কারণ, সদস্য-বিধায়কদের চেয়ারম্যান চেনেন না, ফোন নম্বরও নেই! সচেতক তাঁকে বুঝিয়েছেন, বিধায়কদের বৈঠকের খবর দেওয়া সচিবালয়ের কাজ। চেয়ারম্যানের নয়। আর ওই স্থায়ী কমিটি এমন কোনও জরুরি বিষয় নিয়ে ভাবছে না যে, পরের দিনই বৈঠক ডাকতে হবে!
|
সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির কার্যালয় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবন বেশ প্রশস্ত। আলিমুদ্দিনের চেয়ে তো বটেই। সেখানেই প্রমোদ দাশগুপ্ত স্মারক বক্তৃতার দিন মূল ফটকের বাইরে গাড়ির ভিড়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসুদের গাড়ি ড্রাইভওয়ে দিয়ে বেসমেন্ট পার্কিংয়ে। লনের ধারে এমনি দিনে বাইক, স্কুটার থাকে। দলের এক কর্মী স্কুটার নিয়ে ভিতরে ঢুকতে যাওয়ায় বাধা দিলেন ফটকের কর্মীরা “ভিতরে স্কুটার রাখা যাবে না। দেখছেন না, লালবাতিও (পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের কিছু গাড়ি ছিল) বাইরে!” উদাহরণেই চটে গেলেন স্কুটার-আরোহী কর্মী “এই জন্যই আমাদের এই অবস্থা! কিচ্ছু শিক্ষা নিইনি। এখনও লালবাতি দেখাতে হবে? কেন, এমনি বারণ করলে হত না?”
|
সেলফোনের পিছনে ব্যাটারি এবং সিমকার্ড প্রোটেক্টরের উপর সেলোটেপ লাগিয়েছেন রাজ্যের এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। কারণ? “তাড়াহুড়োয় হাত থেকে মাঝেমধ্যেই পড়ে গিয়ে পিছনের কভারটা খুলে যায়। ব্যাটারি-ট্যাটারি ছিটকে পড়ে একাকার কাণ্ড! তাই সেলোটেপ দিয়ে আটকে রেখেছি। এখন আর চিন্তা
নেই।” বক্তার নাম? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। |