|
|
|
|
বর্ষার মরসুমে গরু পাচার বেড়েছে, আতঙ্কে গ্রামবাসী |
সীমান্ত মৈত্র • বনগাঁ |
গরু পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বনগাঁ মহকুমার সীমান্তবর্তী বহু গ্রামের মানুষ। তাঁদের রাতের ঘুম উবে গিয়েছে। পাচারকারীরা গরু নিয়ে যাওয়ার ফলে খেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তার উপরে গ্রামবাসীদের বাড়ি থেকে জিনিসপত্রও চুরি করছে পাচারকারীরা। প্রতিবাদ করলে পাচারকারীদের হাতে মারও খেতে হচ্ছে। তারা বিএসএফ জওয়ানদেরও রেয়াত করছে না।
বনগাঁর সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে গরু পাচার নতুন কোনও ঘটনা নয়। কিন্তু এখন বাংলাদেশের পাচারকারীরা চোরাপথে এ দেশে এসে গরু নিয়ে যাচ্ছে বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। মূলত, ওই পাচারকারীরাই হামলা চালাচ্ছে এবং গ্রামবাসীদের ফসলের ক্ষতি করছে বলে পুলিশের অভিমত।
সম্প্রতি বনগাঁর সুন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কয়েকটি গ্রামের মানুষ গরু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে এসডিপিও (বনগাঁ) বিমলকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। বিমলবাবু বলেন, “স্মারকলিপি দেওয়ার আগে থেকেই গরু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় চলছে। সম্প্রতি ৬ জন পাচারকারীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ২৬টি গরু।” গ্রামবাসীদের একাংশও গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় এই দুষ্কর্ম পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি পুলিশ-কর্তাদের।
প্রতি বছর বর্ষায় এই সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার বাড়ে। কারণ হিসাবে বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ সময়ে সীমান্ত এলাকার বহু খেতের পাটগাছ বেড়ে ওঠে। তাতে গরু নিয়ে পাচারকারীদের লুকিয়ে থাকতে সুবিধা হয়। তা ছাড়া, ভারী বৃষ্টিতে নজরদারি চালাতে অসুবিধা হয়। রয়েছে পর্যাপ্ত আলোর অভাব এবং জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সীমান্তের সর্বত্র কাঁটাতার না-থাকার সমস্যাও।
বনগাঁ ব্লকের সীমান্তবর্তী পিপলিপাড়া, বাগানগ্রাম, বাংলানি এবং চাকলা এলাকায় কাঁটাতার নেই। একই অবস্থা গাইঘাটা ব্লকের আংড়াইল, খেদাপাড়া, কালিয়ানি, প্রতাপপাড়া বা বর্ণবেড়িয়ার মতো এলাকাগুলির। আর এই সব এলাকা দিয়েই অবাধে গরু পাচার চলছে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। বাংলানি গ্রামের এক চাষি জানান, এ বার পাঁচ বিঘা জমিতে তিনি পটল চাষ করেছিলেন। পাচারকারীরা খেত দিয়ে গরু নিয়ে যাওয়ার জন্য সব পটল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পিপলিপাড়া এবং বাগানগ্রামের বাসিন্দাদের বক্তব্য, রোজ বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরা এসে শ’য়ে শ’য়ে গরু নিয়ে যায়। প্রতিবাদ জানালে মারধর জোটে। একই বক্তব্য আংড়াইলের বাসিন্দাদেরও। সম্প্রতি সেখানকার এক গ্রামবাসী পাচারকারীদের হাতে প্রহৃত হন।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, মূলত, রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশের পাচারকারীরা এ দেশে ঢুকছে। এ দেশের পাচারকারীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকে। কয়েক দিনের মধ্যে গরু নিয়ে তারা ফিরে যায়। যাওয়ার সময়ে গ্রামবাসীদের সাইকেল, ছাগল-সহ নানা জিনিসপত্রও চুরি করে। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সুব্রত সরকার বলেন, “সাধারণ মানুষের উপরে পাচারকারীরা হামলা চালাচ্ছে। ভয়ে সন্ধ্যার পরে গ্রামবাসীরা ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রয়োজনে রাতে বাইরে বেরোতে সাহস পাচ্ছেন না।” বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন দত্তের অভিযোগ, “পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না।”
কী করছে বিএসএফ?
বিএসএফের বক্তব্য, গরু পাচারকারীদের দেখলেই ধরা হয়। কিন্তু সীমান্তে পরিকাঠামোগত সমস্যার কারণে সর্বত্র সমান ভাবে নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না। সেই সুযোগটাই পাচারকারীরা নেয়। অনেক সময়ে পাচারকারীরা দু’টি দলে ভাগ হয়ে ঢোকে। এক দল জওয়ানদের লক্ষ করে ইট-পাথর ছোড়ে। জওয়ানরা তাদের ধরতে গেলে অন্য দল গরু নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে চলে যায়। শুক্রবারই আংড়াইলের বিশ্বাসপাড়ার রামনগর সড়কে প্রহরারত বিএসএফের ১২৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের হেড কনস্টেবল রমেশ চন্দকে লক্ষ করে ধারাল অস্ত্র ছোড়ে পাচারকারীরা। তাঁর ডান পা জখম হয়। তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত, পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে গরু আসে এ রাজ্যে। তার পরে বিভিন্ন হাট থেকে সেই গরু কিনে এনে পাচার করা হয়। বিএসএফের পাশাপাশি পুলিশও পাচারও হওয়ার আগে গরু আটক করে। কিন্তু নিলামে সেই সব গরু কিনতে কেউ উৎসাহ দেখান না। তখন অল্প দামে আটক করা গরু ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই সব গরু হাত ঘুরে ফের পাচারকারীদের কাছে পৌঁছে যায় বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। মহকুমাশাসক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় অবশ্য পাচার রোধের চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এখানে গরু পাচার একটি বড় সমস্যা। এর সঙ্গে সীমান্তের বহু প্রভাবশালী মানুষও যুক্ত। আমরা চেষ্টা করছি, গরু পাচার বন্ধ করতে। নানা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” কিন্তু এ সত্ত্বেও পাচার পুরোপুরি বন্ধ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ গ্রামবাসীরা। |
|
|
 |
|
|