|
|
|
|
ফোনে আড়ি পাতা-কাণ্ডে গ্রেফতার হলেন রেবেকা |
সংবাদসংস্থা • লন্ডন |
হঠাৎ করে লন্ডন পুলিশের দেওয়া একটি বিবৃতি সুনামির মতো আছড়ে পড়ল সংবাদ-বিশ্বে। ফোনে আড়ি পাতা এবং পুলিশকে ঘুষ দেওয়ার ঘটনায় ৪৩ বছরের এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ছিল সেই সাদামাটা বিবৃতিটি। কিন্তু সবাই বুঝে যান, ৪৩ বছরের ওই মহিলা আর কেউ নন, স্বয়ং রেবেকা ব্রুকস। রুপার্ট মার্ডকের সংবাদ-সাম্রাজ্যের এক সময়ের প্রধান সেনাপতি আজ নিজেই হয়ে উঠলেন বড় খবর।
দু’দিন আগেই রেবেকা নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন রুপার্ট মার্ডকের সাম্রাজ্য থেকে। ‘নিউজ ইন্টারন্যাশনালের’ সিইও পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, ফোনে আড়ি পাতার বিষয়ে কিছুই জানতেন না তিনি। পার্লামেন্টের তদন্ত কমিটির সামনে হাজিরা দেওয়া নিয়েও কোনও টালবাহানা না করে এক কথায় রাজি হয়েছিলেন তিনি। এত কিছুর পরেও শেষ রক্ষা হল না রেবেকার। আজ স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা নাগাদ তাঁকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এখন তিনি পুলিশি হেফাজতেই রয়েছেন। ফোনে আড়ি পাতার ঘটনায় এই নিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করল ব্রিটেনের পুলিশ। |

রেবেকা ব্রুকস |
ব্রিটেনের সংবাদ জগতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন রুপার্ট মার্ডক। আর রুপার্টের এই সংবাদ-সাম্রাজ্য ‘নিউজ ইন্টারন্যাশনালের’ এত দিনের বিশ্বস্ত সেনাপতি তথা সিইও ছিলেন রেবেকা। ছিলেন ‘নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ (এনওডব্লিউ)-এর প্রাক্তন সম্পাদকও। কিন্তু এনওডব্লিউ-এর সাংবাদিকরা খবরের জন্য অন্তত চার হাজার লোকের ফোনে আড়ি পেতেছেন এবং পুলিশকে ঘুষ দিয়েছেন বলে জানাজানি হওয়ার পরে তোলপাড় শুরু হয় ব্রিটেন জুড়ে। তার জেরে ট্যাবলয়েডটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন মার্ডক। শুধু তাই নয়, ব্রিটেনের বৃহত্তম স্যাটেলাইট চ্যানেল বিস্কাইবি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্তও প্রত্যাহার করতে বাধ্য |
|
হন তিনি। আর অন্য দিকে সিইও পদ থেকে ইস্তফা দেন ‘সম্রাট’ মার্ডকের সেনাপতি রেবেকা। যদিও তিনি বারবার দাবি করে এসেছেন, ফোনে আড়ি পাতার ঘটনা তাঁর অগোচরেই ঘটেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। রেবেকার গ্রেফতার হওয়ার ধরনটাও একটু আলাদা। হানাহানির অভিযোগ ছাড়া কাউকে রবিবার গ্রেফতার করার ঘটনা সাধারণত ঘটে না ব্রিটেনে। কিন্তু রেবেকার ক্ষেত্রে সেটাই ঘটল। তাঁর আইনজীবী ডেভ উইলসন বলেন, সিইও পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরই পুলিশ তাঁকে জানিয়েছিল, তাঁকে গ্রেফতার করাও হতে পারে। পুলিশকে আগে থেকে জানিয়ে আজ দুপুরে রেবেকা নিজেই হাজির হন লন্ডন পুলিশ স্টেশনে। আর সেখানেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। পরিভাষায় একে বলা হয় ‘অ্যারেস্ট বাই অ্যাপয়েন্টমেন্ট’। ব্রিটিশ পুলিশের বিশেষ দুটি দল ‘অপারেশন উইটিং’ এবং ‘অপারেশন এলভেডেন’-এর অফিসাররা তাঁকে গ্রেফতার করেন। ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে তদন্ত করছে ‘অপারেশন উইটিং’ এবং পুলিশকে ঘুষ দেওয়ার বিষয়ে তদন্তে আছে ‘অপারেশন এলভেডেন’।
রুপার্ট মার্ডক, তাঁর ছেলে জেমস এবং রেবেকা ব্রুকসের আগামী মঙ্গলবার পার্লামেন্টের একটি তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হওয়ার কথা। রেবেকার এক মুখপাত্র জানাচ্ছেন, গ্রেফতার হওয়ার ফলে কমিটির সামনে ওই দিন তাঁর উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে গেল।
রেবেকার গ্রেফতার হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই রুপার্ট মার্ডক দ্বিতীয় বারের মতো খবরের কাগজে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন। কিন্তু ব্রিটেনে মার্ডকের বিরুদ্ধে জনরোষ এবং রাজনৈতিক নেতাদের আক্রমণ সমান তালেই চলছে। লেবার পার্টির নেতা এড মিলিব্যান্ড আজ মার্ডকের সংবাদ-সাম্রাজ্যের অবসান দাবি করলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সংবাদমাধ্যমের মালিকানা নিয়ে নতুন নিয়ম চালু করার কথাও প্রস্তাব করলেন।
মিলিব্যান্ড বলেন, মার্ডক ব্রিটেনের সংবাদজগতে একাধিপত্য কায়েম করেছিলেন। এই একাধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে সংবাদজগতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করলেন মিলিব্যান্ড। মিলিব্যান্ড ছাড়াও ব্রিটেনের অনেক নেতা এখন মার্ডকের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের মালিকানা যথাযথ কি না তা খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন।
রেবেকার ইস্তফা মার্ডকের সাম্রাজ্যের জন্য ছিল বড় ধাক্কা। আর আজ তাঁর গ্রেফতারের ঘটনা আরও বড় কিছুর ইঙ্গিত বহন করছে বলেই বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। কী ভাবছেন সাম্রাজ্যের ‘বৃদ্ধ সম্রাট’ রুপার্ট মার্ডক? যে ভাবে শুরু থেকে ঘটনা এগিয়ে চলেছে তাতে প্রতি দৃশ্যের শেষেই লেখা থাকছে, ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায়’। শেষ দৃশ্য কী এবং কবে, উত্তরের অপেক্ষায় সবাই। |
|
|
 |
|
|