|
|
|
|
দেহদানের পরে পরিবারের অধিকার নিয়ে উঠছে প্রশ্ন |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
দেহদানের পরে কি সেই দেহের উপরে প্রিয়জনদের আর কোনও অধিকার থাকে? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাম্প্রতিক একটি ঘটনা সেই বিতর্ক সামনে এনে দিল।
শুক্রবার থেকে ওই হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে বাক্সবন্দি অবস্থায় থাকছে এক বাবা ও তাঁর ছেলের কঙ্কাল। বাবা সুকুমার মুখোপাধ্যায় এবং ছেলে অপূর্ব মুখোপাধ্যায় দু’জনেই মৃত্যুর আগে দেহদানের ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। সেই ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁদের পরিবারের লোকেরা দেহ দু’টি মেডিক্যাল কলেজে দান করেন। কিন্তু শুধু দান নয়, নিজেরা উদ্যোগী হয়ে দু’টি দেহই কঙ্কাল হিসেবে প্রস্তুত করে বাক্সবন্দি অবস্থায় রাখতে চেয়েছেন তাঁরা। মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সম্মত হওয়ায় তা সম্ভবও হয়েছে।
কিন্তু এই ঘটনায় সামনে এসেছে অন্য একটি প্রশ্ন। দেহদানের পরে এ ভাবে কারও কঙ্কাল চিহ্নিত করা এবং সে ব্যাপারে বাড়ির লোকজনের সক্রিয়তা কি নীতিসঙ্গত?
ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৭ জুলাই মৃত্যু হয়েছিল অপূর্ববাবুর। তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী পরিবারের লোকেরা মৃতদেহটি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দান করেন। ওই হাসপাতালেই ১৫ বছর আগে দান করা হয়েছিল তাঁর বাবা সুকুমারবাবুর মৃতদেহ। পরিবারের উদ্যোগে তখনও সেই দেহটি কঙ্কাল আকারে বাক্সবন্দি করে রাখা হয়েছে অ্যানাটমি বিভাগে।
শুধু তা-ই নয়, সুকুমারবাবুর মৃতদেহ থেকে কঙ্কাল তৈরির কাজে যিনি হাত লাগিয়েছিলেন, সেই প্রভাতচন্দ্র দাস হাজির ছিলেন অপূর্ববাবুর কঙ্কাল তৈরির ক্ষেত্রেও।
গোটা বিষয়টিকে তাঁরা আবেগের দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখতে চেয়েছেন।
কিন্তু দেহদান আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত সমাজকর্মী ব্রজ রায় বিষয়টি নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত। তাঁর মতে, দেহদান আন্দোলন যে ভাবে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে, তাতে এই নজির কিছু সমস্যা তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, “এর পরে যাঁরাই দেহ দান করবেন, সকলের পরিবার যদি এ ভাবে কঙ্কালটি আলাদা টাঙানোর কথা বলেন, তা হলে তো খুব সমস্যা হবে। দান করার পরে সেই দেহের উপরে পরিবারের আর কোনও অধিকার থাকার কথা নয়।”
আইনজীবী নিশীথ অধিকারী বলেন, “দেহদান বিষয়টি ইচ্ছেপত্রের (উইল) উপরে নির্ভর করে। এখনও পর্যন্ত এর কোনও সুনির্দিষ্ট আইন নেই। কিন্তু দান করা দেহ সমাজের সম্পত্তি, তার উপরে কারও অধিকার থাকার কথা নয়।” এমনকী নিজেরা খরচ করে কঙ্কাল বাক্সবন্দি করার বিষয়টিকেও অনৈতিক বলে মনে করছেন তিনি।
কেন এই বিষয়ে উদ্যোগী হল ওই পরিবার? অপূর্ববাবুর ভাই তাপস মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কোনও অধিকারবোধ থেকে এটা করিনি। বাবা এবং দাদার নজির এ ভাবে সামনে এলে দেহদান আন্দোলন আরও গতি পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তাই যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে কঙ্কালটি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় খরচও আমরা করেছি।”
মেডিক্যালের অধ্যক্ষ উৎপল দত্ত বলেন, “একে বলে ‘আর্টিক্যুলেটেড স্কেলিটন’। এখন মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এই ধরনের পূর্ণাঙ্গ কঙ্কালের যথেষ্ট অভাব। তাই এ ক্ষেত্রে সুবিধেই হয়েছে।” কিন্তু এই ধরনের কঙ্কাল প্রয়োজন হলে হাসপাতাল থেকে তা তৈরি করানো হচ্ছে না কেন? এ বিষয়ে কোনও স্পষ্ট যুক্তি তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যাখ্যা, “মেডিক্যাল পড়ুয়ারা দান করা মৃতদেহগুলি ব্যবচ্ছেদের কাজে ব্যবহার করেন। ব্যবচ্ছেদ হওয়া দেহে আর্টিক্যুলেটেড স্কেলিটন বানানো যায় না।” কিন্তু এই নজির দেখে ভবিষ্যতে অন্য পরিবারের তরফেও যদি এমন আগ্রহ প্রকাশ করা হয়? কয়েক মুহূর্ত ভেবে উৎপলবাবু বলেন, “তা হলে খুব বড়সড় সমস্যায় পড়ে যাব।”
যার অর্থ, ঝুঁকি নিয়েই এমন বিষয়ে সায় দিচ্ছেন বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। |
|
|
|
|
|