|
|
|
|
হাতে ‘ভুয়ো’ নিয়োগপত্র, কাজ পাচ্ছেন না প্রার্থীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মানবাজার |
কুমারডি গ্রামের চিন্তামণি মাহাতো, ধাদকিডি গ্রামের ভাগ্যলক্ষ্মী বাউরি, চাটানিগোড়ার পার্বতী মাঝি। সকলেই মানবাজার ব্লকের বাসিন্দা। তাঁরা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা পদের জন্য নিয়োগপত্র পেয়েছেন প্রায় সাত মাস আগে। খুঁজলে হয়তো এ রকম আরও নাম পাওয়া যাবে। কিন্তু তাঁদের কাউকে আজ পর্যন্ত ওই পদে নিয়োগ করা হয়নি।
কারণ, তাঁদের নিয়োগপত্রগুলি অবৈধ বলে দাবি করছেন বর্তমান ব্লক সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক (সিডিপিও) এবং বিধায়ক। অথচ নিয়োগপত্রে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ব্লক সিডিপিও-র সই রয়েছে বলে দাবি কর্মপ্রার্থীদের। তাঁদের বক্তব্য, “আমাদের নিয়োগপত্রে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রকল্প আধিকারিক আশুতোষ সিং সর্দরের সই রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরে বহুবার জনানো হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।” আশুতোষবাবু বলেন, “নিয়ম মেনে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে।” যদি নিয়ম মেনেই সব কাজ হয়ে থাকে, তা হলে এখন নিয়োগপত্র অবৈধ বলে দাবি করা হচ্ছে কেন?স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০-এর ডিসেম্বরে শিশু বিকাশ প্রকল্প অফিস থেকে তাঁরা নিয়োগপত্র পেয়েছেন। ব্লক প্রকল্প আধিকারিক সন্দীপ পরামানিক জানান, মানবাজার ব্লকে শিশুবিকাশ কেন্দ্রের সংখ্যা ২২৬। প্রতিটি কেন্দ্রে কর্মী ও সহায়িকা রয়েছেন। তাঁর দাবি, “তবে ওই নিয়োগপত্র সম্পর্কে কোনও তথ্য অফিসে নেই।” সম্প্রতি ওই অফিসে গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানতে চান মানবাজারের তৃণমূল বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডু। তাঁর দাবি, “মানবাজার ব্লকের বেশ কিছু মহিলা প্রতারিত হয়েছেন। তাঁদের ভুয়ো নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি জেলা প্রকল্প আধিকারিক ও জেলাশাসকের কাছে। এই ঘটনায় আর্থিক লেনদেনও হয়ে থাকতে পারে।” তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “শিশু বিকাশ প্রকল্পের কর্মী ও সহায়িকা নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান স্থানীয় প্রাক্তন বিধায়ক সাম্যপ্যারী মাহাতো। তিনি এবং প্রাক্তন ব্লক প্রকল্প আধিকারিক স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি করেছেন। জেলা প্রকল্প আধিকারিক বিধায়ককে আড়াল করার চেষ্টা করছেন।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশু বিকাশ প্রকল্পের কর্মী ও সহায়িকা পদে নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্য থাকেন বিডিও, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, স্থানীয় বিধায়ক, প্রকল্প আধিকারিক, দফতরের মনোনীত এক সদস্য। বর্তমান ব্লক শিশুবিকাশ প্রকল্প আধিকারিক সন্দীপবাবু বলেন, “আমি সদ্য এই দায়িত্ব পেয়েছি। এ নিয়ে অফিসে কোনও তথ্য নেই। কত জন ভুয়ো নিয়োগপত্র পয়েছেন বলতে পারব না।”
জেলা সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক স্বপন মুখোপাধ্যায় বলেন, “দুর্নীতি হয়েছে। তবে আড়াল করার অভিযোগ ঠিক নয়। দফতরের এক কর্মী এই দুর্নীতিতে জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। তাঁকে সরানো হবে।” আর মানবাজারের বিডিও কমলচন্দ্র দে এবং ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরজিৎ সিংহ হাঁসদার দাবি, “ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া কখন হয়েছে, আমরা তা জানিই না।” একই দাবি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নীলিমা মান্ডির। প্রাক্তন বিধায়ক সাম্যপ্যারী মাহাতোর বক্তব্য, “এই নিয়োগ নিয়ে তৎকালীন প্রকল্প আধিকারিকই বলতে পারবেন। আমার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি ইন্টারভিউতে উপস্থিত ছিলাম না।” যদিও তৎকালীন প্রকল্প আধিকারিক আশুতোষবাবুর সাফাই, “এখন যেগুলি ভুয়ো বলে চালানো হচ্ছে, ওই নিয়োগপত্র ভুয়ো কি না আমি বলতে পারব না।”
কিন্তু এই জটিলতার মাঝে সমস্যায় পড়েছেন কর্মপ্রার্থীরা। চিন্তামণি মাহাতো, ভাগ্যলক্ষ্মী বাউরি, পার্বতী মাঝি, “ইন্টারভিউতে আশুতোষবাবু, প্রাক্তন বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন।” |
|
|
|
|
|