|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
মাতৃসদন |
সেবা সুদূর |
জয়তী রাহা |
‘পারবও না, ছাড়বও না।’ কার্যত এই নীতি নিয়েই একটি হাসপাতাল তুলে দিতে বসেছে পানিহাটি পুরসভা।
‘পানিহাটি পৌর মাতৃসদন ও হাসপাতাল’-এর উদ্বোধন হয় ২০০১-এ। এলাকায় এটি ঘোলা মাতৃসদন নামে পরিচিত। প্রতি বছর গড়ে সাড়ে তিন হাজার ‘সিজার’ হয় এখানে। পুরসভার তথ্য অনুসারে এখানে মা ও শিশুর মৃত্যুর হার শূন্য। শেষ সিজার হয়েছে এ বছরের ৬ জানুয়ারি। তার পর থেকে সিজার বন্ধ রয়েছে পানিহাটি পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের এই মাতৃসদনে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে অন্যান্য অস্ত্রোপচারও। |
|
নিউকলোনি মাতৃসদনের ভবন |
পঁচিশ শয্যার অনুমোদন থাকলেও এই মাতৃসদনে রয়েছে ১৫টি শয্যা। এক তলায় বহির্বিভাগ। যেখানে রয়েছে স্ত্রীরোগ, শিশু, সাধারণ, অস্থি, দন্ত এবং শল্য বিভাগ। মাত্র ৩০ টাকায় অনেকে চিকিৎসা করাতে আসেন। কিন্তু বন্ধ দোতলার অন্তর্বিভাগ। সপ্তাহে তিন দিন চালু থাকে আল্ট্রা সোনোগ্রাফি ইউনিট।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসা সোদপুর নাটাগড়ের বাসিন্দা আভারানি মাইতি বলেন, “আমাদের পরিবারের সাতটি বাচ্চা এখানে জন্মেছে। এখন ডেলিভারি বন্ধ। ছুটতে হবে মধ্যমগ্রামে।” প্রথম থেকে হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ত্রিদিবনাথ দাস বললেন, “পরিকাঠামোর অভাব অনেক সময়ই হয়েছে। এক সময় দিনে ৫-৬টি ডেলিভারি করিয়েছি। অন্তর্বিভাগ আবার চালু করার অনুরোধ আসছে।” মাতৃসদনের এমন অবস্থার কারণ কী?
পুরসভা সূত্রে খবর, আইন অনুযায়ী এই হাসপাতাল চালাতে তিন জন আবাসিক চিকিৎসক ও তিন জন জিএনএম নার্স প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৭ থেকে নার্স ও চিকিৎসক হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়া শুরু করেন। পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের চারণ চক্রবর্তী বলেন, “২০০৮ এবং ২০০৯-এ দু’বার পুরসভা শূন্য পদের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। কিন্তু কোনও আবেদনপত্র জমা পড়েনি।” |
|
পানিহাটি পৌর মাতৃসদন ও হাসপাতালের ভবন |
কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর সেনগুপ্ত বলছেন, “মূল সমস্যা, চিকিৎসক ও অচিকিৎসক কর্মীদের বেতন কম। তাই অনেকেই যোগ দিতে ইচ্ছুক নন। এখন মাত্র এক জন আরএমও আছেন। মানুষের অসুবিধা সত্ত্বেও তাই বাধ্য হয়েছি অন্তর্বিভাগ বন্ধ রাখতে।”
চারণবাবু বলেন, “এত দিন আরএমও-র বেতন ছিল সাত হাজার টাকা। নতুন নিয়োগে আরএমও-র বেতন হবে পনেরো হাজার টাকা। কিন্তু পুরসভার পক্ষে এর বেশি দেওয়া কঠিন। নার্সদের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা। তিন জন অবসরপ্রাপ্ত নার্স পেয়েছি।
চেষ্টা করছি আবার মাতৃসদন চালু করার।” মেডিসিন ব্লক করার জন্য মাতৃসদনের
তিন তলাও তৈরি করে ফেলেছে
পুরসভা। সুবীরবাবু বলেন, “আইসিইউ-সহলকটিকে সাজাতে কোটি টাকারও বেশি প্রয়োজন।
রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া অসম্ভব।” |
|
বন্ধ ঘোলা মাতৃসদনের ওয়ার্ড |
তা হলে এই মাতৃসদন বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না কেন? পুরপ্রধান বলেন, “পিপিপি মডেলে হাসপাতালটি চালানোর জন্য কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছিল। কিন্তু, এ বিষয়ে আর অগ্রগতি হয়নি। কয়েক জন কথা বললেও শেষমেশ আর আগ্রহী হয়নি। তবে, এটি পুরোপুরি বেসরকারি হাতে দেওয়ার পরিকল্পনা নেই।” তবে তিনি জানান, হাসপাতালের চিকিৎসক ও অচিকিৎসক কর্মীদের বেতনের জন্য রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তা চাইবে পুরসভা।
শুধু ঘোলার মাতৃসদনই নয়, নির্মাণ শেষ হলেও এখনও চালু হয়নি সোদপুর নিউ কলোনির মাতৃসদন। ১৯৯৯-এ আইপিপি-এইট প্রকল্পের অধীনে এক্সটেনডেট স্পেশালিটি আউটপেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট-এর একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র সোদপুরের নিউ কলোনিতে কাজ শুরু করেছিল। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ভাল ভাবে কাজ করায় পুরসভা এটিকে মাতৃসদন করার কথা ভাবে। ছ’মাস আগে সেই কাজ শেষ হয়েছে। এসে গিয়েছে বিভিন্ন যন্ত্রও। কিন্তু আরএমও এবং নার্সের অভাবে এই মাতৃসদনের কাজ শুরু হয়নি। এমনকী, নিয়োগ নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু হয়নি। পুরপ্রধান বলেন, “সাংসদ, বিধায়ক তহবিল, রাজ্য সরকার-সহ নানা জায়গা থেকে অর্থ জোগাড় করে এই কাজ হয়েছে। আপাতত ঘোলার মাতৃসদন চালু করা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। অন্যটি নিয়ে শীঘ্রই ভাবা হবে।” |
|
|
|
|
|