আবার এক টুকরো সবুজ উপহার পেতে চলেছেন শহরবাসী। কলকাতা পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপর যতীন মৈত্র পার্ক। পার্ক ছিল আগেই, তবে সেটি গোছানো ছিল না। পাঁচিল ঘেরা এই পার্কটি এখন সেজে উঠছে নতুন ভাবনায়।
যতীন মৈত্র পার্ক বেশি পরিচিত দর্জিপাড়া পার্ক নামেই। আয়তনে বেশ বড় পার্কটির একটি অংশে খেলাধুলো হত। বাকি অংশ চরম অবহেলায় পড়েছিল। খেলার মাঠের অংশ ঘিরে দেওয়া হয়েছে লোহার ফেন্সিং দিয়ে। বাকি জায়গা জুড়ে দু’ভাগে তৈরি হবে পার্কটি। প্রথম ভাগে উদ্যানসজ্জায় গুরুত্ব পাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ।
|
রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের মুখ্য চরিত্র অমল। প্রকৃতির প্রতি অমলের ভালবাসাকে ছোটদের কাছে তুলে ধরতেই পার্ক সাজানোয় নতুন ধারণা যোগ হয়েছে। পার্কটিকে এ ভাবে সাজানোর পরিকল্পনা করেছেন স্থপতি অরুণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়: “ছোটদের জন্য খেলনা সাজানো পার্ক তো অনেক আছে। তাই খেলার মাধ্যমে কিছু শেখা, প্রকৃতিকে ভালবাসা, রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করাই এই ধারণার উদ্দেশ্য। শান্তিনিকেতনে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গাছ দিয়ে শিল্প সৃষ্টির ঘরানাকে এখানে অনুসরণ করা হয়েছে।” অমলের দরজা, জানলায় পৌঁছনো সিঁড়ির ধাপের ফাঁকে ফাঁকে মাটিতে বোনা হচ্ছে মেক্সিকান ঘাসের কার্পেট। জানলা-দরজার পাশে থাকছে বিভিন্ন প্রজাতির লতানো গাছ। পার্কের ফাঁকা জমিতে লাগানো হবে চায়না ঘাস। এ ছাড়াও গোল্ড ইয়ানা, কামিনী, রঙ্গন, ঝাউ-সহ হরেক প্রজাতির মাঝারি উচ্চতার গাছ থাকবে পার্কে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের মূল প্রবেশদ্বারের তোরণেও থাকবে রবীন্দ্র-ভাবনা। পার্কে ঢুকেই ডান হাতে থাকছে অমলের দরজা। সাড়ে চার ফুট চওড়া এই দরজা তৈরি হচ্ছে কংক্রিট দিয়ে। একটু এগিয়ে সাড়ে তিন ফুট চওড়া কংক্রিটের তৈরি অমলের জানলা। কিছুটা খুলে রাখা দরজা ও জানলার গায়ে থাকছে লতাপাতার কাজ। |
সিঁড়ি বেয়ে ছোটরা পৌঁছে যেতে পারে ‘অমলের দরজা’ কিংবা ‘অমলের জানলা’র খোলা দুনিয়ায়। এর উল্টো দিকে থাকছে ২৯ ফুট বাই ২২ ফুট আয়তনের ছাদ ঢাকা মঞ্চ, ছ’টি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে। এর নাম দেওয়া হচ্ছে অমলের মঞ্চ। রবীন্দ্রনাথের শিল্পভাবনা ফুটে উঠবে পিলারের কাজেও। খোলা এই মঞ্চে ছোটরা আঁকা, নাচ, গান ও নাটকের অনুষ্ঠান করতে পারবে। শ্যাওলা-সবুজ ও হালকা ক্রিম রং ব্যবহার করা হচ্ছে দরজা, জানলা ও মঞ্চে।
এ ছাড়াও তৈরি হচ্ছে ৬০ ফুট অর্থাৎ ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি প্যানেল। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে দেখতে পাওয়া যাবে এটি। সেখানে ১২টি ভাগে শেডের নীচে ফাইবার রিলিফের কিছু কাজ থাকবে। বিভিন্ন ম্যুরালের কাজে উঠে আসবে রবীন্দ্রনাথের গীতবিতান, সহজ পাঠ ও ডাকঘরের অংশবিশেষ। |
পার্কের কাছাকাছি বাড়ি ছোট্ট সাত্যকির। উৎসাহিত সাত্যকির কথায়: “পার্কে রোজ আসব। পাড়ায় নাটক করি। কিন্তু মঞ্চ না থাকায় চৌকিতেই কাজ চালাই। এ বার সুন্দর জায়গায় নাটক করব।” একই রকম উৎসাহী রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রিটের শমিষ্ঠা রায়। তাঁর কথায়, “খেলনা বসানো পার্ক তো অনেক আছে আশপাশে। এটা বেশ ভাল হবে। একেবারেই অন্য রকম। তবে এটাকে সুন্দর রাখতে সবাইকেই সচেতন থাকতে হবে।”
স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের পার্থপ্রতিম হাজারি বলছেন, “অবহেলায় পড়েছিল পার্কটা। সন্ধেবেলায় অসামাজিক আড্ডা চলত। উদ্দেশ্য ছিল সে সব বন্ধ করে ছোটদের জন্য কিছু করা। করতে পেরে ভাল লাগছে। বাকি অংশে থাকবে এ রকমই কিছু চমক।” পুরসভার মেয়র
পারিষদ (পার্ক) দেবাশিস কুমার বললেন, “এই পার্কের সবটা জুড়েই থাকবে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর পরিবেশ ভাবনা। রবীন্দ্রনাথের প্রতি ছোটদের আগ্রহী করে তোলা, পাশাপাশি পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানোই মূল উদ্দেশ্য।
রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধশতবর্ষে এটি তাঁর প্রতি কলকাতা পুরসভার শ্রদ্ধার্ঘ্য।” |