|
|
|
|
|
|
দক্ষিন কলকাতা গড়িয়া
কাছে থেকে দূর |
‘ছিটমহল’ |
স্বপন দাস |
কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, কিন্তু কোনও পুর পরিষেবা পান না। ১০৮ ও ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী এলাকা কালিকাপুর সংলগ্ন অহল্যা নগরের বাসিন্দাদের অভিযোগ এ রকমই। অথচ, পুর পরিষেবার ক্ষেত্রে তাঁদের সোনারপুরের খেয়াদহ-২ নম্বর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা হিসেবে গণ্য করা হয় বলে তাঁদের বক্তব্য।
কলকাতার ই এম বাইপাস থেকে অহল্যা নগরের দূরত্ব সামান্যই। এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, এখনও অধিকাংশ রাস্তাই কাঁচা। আজও কোনও উপযুক্ত নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই জমা জলের সমস্যায় এখানকার বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। রয়েছে পানীয় জলের সমস্যাও। এখানকার বাসিন্দা মানবেন্দ্র গুহ বললেন, ‘‘আমরা কলকাতা পুরসভার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। অথচ, আমরা হচ্ছি সোনারপুরের খেয়াদহ-২ নম্বর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত জগতিপোতা মৌজার অংশ অহল্যা নগরের বাসিন্দা। তাই আমাদের কোনও পরিষেবা জোটে না।”
|
|
এই এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দার অভিযোগ, বাড়ির কর জমা দেওয়া-সহ অন্যান্য প্রয়োজনে তাঁদের অটো, বাস, ট্রেনে করে আসতে হয় সোনারপুরের খেয়াদহ-২ নম্বর পঞ্চায়েতের কার্যালয়ে। স্থানীয় বাঁশরী হাউসিং সোসাইটির সহ-সভাপতি অসীমসুন্দর চট্টোপাধ্যায়ের কথায়: “শুধু পুর-পরিষেবাই নয়, পুরসভা আর পঞ্চায়েতের মধ্যবর্তী এলাকায় বসবাস করায় আমাদের কোনও নিরাপত্তাও নেই। এলাকার খুব কাছে পূর্ব যাদবপুর থানা থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তাজনিত অসুবিধার জন্য আমাদের যেতে হয় সেই ১২ কিলোমিটার দূরে সোনারপুর থানায়।” কলকাতা পুরসভার মেয়র যদিও জানিয়েছেন, এই ধরনের এলাকা চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। ই এম বাইপাস সংলগ্ন কালিকাপুর, মুকুন্দপুর, জগতিপোতা, মাদুরদহ সংলগ্ন এলাকায় গত দুই দশকে জনবসতি আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে। অথচ পরিকাঠামোগত উন্নয়ন বেশি দূর এগোয়নি। অহল্যা নগরের বাঁশরী হাউসিংয়ের বাসিন্দারা তাঁদের এই দুর্ভোগের হাত থেকে রেহাই পেতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে জানিয়ে আসছেন দীর্ঘ দিন ধরে। কিন্তু লাভ হয়নি কিছুই।
খেয়াদহ-২ পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের রীতা মণ্ডল বলেন, “এই ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।” ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের রুমকি দাসের কথায়: “আমি কাউন্সিলর হয়েছি প্রায় এক বছর হতে চলল। কিন্তু আমার কাছে আজ পর্যন্ত ওই এলাকার বাসিন্দারা কোনও অভিযোগ জানাননি। তা হলে সমস্যার সমাধান করব কী করে?”
১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ রায়চৌধুরী বাঁশরী হাউসিংয়ের আবাসিকদের এই সমস্যার জন্য সরাসরি সিপিএমকে দায়ী করছেন। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভার ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য সিপিএম সংযোজিত এলাকাগুলির বহু বাসিন্দার নাম পুরসভার ভোটার তালিকায় রাখার ক্ষেত্রে মদত দিয়েছে। সংলগ্ন পঞ্চায়েত এলাকার সীমানায় যে সব বাসিন্দা থাকেন তাঁদের অনেকের নাম এ ভাবে ওই তালিকায় ঢোকানো হয়েছে। তাই আজ এই সব এলাকার বাসিন্দারা পুর-পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।” |
|
যদিও ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর এবং সিপিএমের পূর্ব যাদবপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক স্বপন রায় বলেন, “এই অভিযোগ আদৌ সত্য নয়।” অবশ্য বাঁশরী হাউসিং সোসাইটির আবাসিকদের সমস্যার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “আমি পুরসভায় এক বার প্রস্তাব দিয়েছিলাম এই এলাকার বাসিন্দাদের কলকাতা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত করার। পুর প্রতিনিধি থাকাকালীন ওখানাকার নিকাশি সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও করেছিলাম।”
এলাকার লিলি গার্ডেন, প্রগতি আবাসন, আনন্দ নগর হাউসিং, বাঁশরী হাউসিং সোসাইটির বাসিন্দাদের অভিযোগ, সকালবেলায় এই এলাকায় কেউ আবর্জনাও নিতে আসেন না। জলের জন্য নির্ভর করতে হয় গভীর নলকূপের উপর। এলাকায় জনগণনার কাজও হয়নি। কলকাতা পুরসভার ১০৮ ও ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তা উঁচু করে দেওয়ায় বাঁশরী হাউসিং সোসাইটি সংলগ্ন এলাকায় জমা জল সরতে চায় না। বছরের বেশির ভাগ সময়েই জল জমে থাকে। ফলে মশা-মাছির সঙ্গে সাপের উপদ্রবও লেগে থাকে। সব সময়ে এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে হয়। দীর্ঘ দিন ধরে এই অবস্থা চলছে।
কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা এরই মধ্যে এই ধরনের এলাকা চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছি। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা আমাদের কাছে আবেদন জানালে আমরা তা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেব। |
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|