পূর্ব কলকাতা
বাইপাস
আতঙ্কের জল-যোগ
দেখলে মনে হবে পর পর কয়েকটা ডোবা। তার উপর দিয়েই গাড়ি চলছে, জল ছিটকে যাচ্ছে চারদিকে। আর পাশে কেউ থাকলে তো রক্ষা নেই। নোংরা ঘোলা জলের ছিটেয় নষ্ট হচ্ছে পথচলতি অনেকেরই জামাকাপড়। সেই সঙ্গে বিগড়ে যাচ্ছে যানবাহনও। এই হাল গাঁ-গঞ্জের কোনও
মেঠো পথের নয়। শহর কলকাতারই গর্বের এক রাজপথের। ঠিকানা ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস।
কলকাতায় দ্রুতগতির রাস্তা হিসেবে পরিচিত ই এম বাইপাস। উল্টোডাঙার হাডকো মোড় থেকে একেবারে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রতিনিয়ত অসংখ্য গাড়ি চলে ওই পথে। এ বার সেই রাস্তাতেও হোঁচট খেতে হচ্ছে দ্রুত চলা যানবাহনকে। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা বেঙ্গল কেমিক্যাল থেকে কাদাপাড়া এবং চিংড়িহাটা থেকে মেট্রোপলিটন মোড় পর্যন্ত। বেঙ্গল কেমিক্যালের পাশে একটা শপিং মলের সামনে চার লেনের রাস্তা কার্যত এক লেনে পরিণত হয়েছে। বাকি অংশটুকু গভীর খানাখন্দে ভরা। সম্প্রতি গাড়ির ভিড়ে দেখা গেল, ওই জায়গায় গাড্ডায় পড়ে একটি স্কুলবাস বিকল হয়ে গিয়েছে। পিছনে লাইন দিয়ে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। যানজটে নাকাল পুরো এলাকা। এমন ঘটনা প্রায়ই হয় বলে জানালেন দত্তাবাদের বাসিন্দারা। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, বৃষ্টির জল আর আবর্জনা জমে রাস্তার সঙ্গে সঙ্গে পুরো পরিবেশও নষ্ট হতে বসেছে। যেন নরককুণ্ড।”
বিধাননগরের পূর্বাচলে রাস্তার পাশে স্কুলবাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তনুশ্রী গুপ্ত। ই এম বাইপাস ধরে যাতায়াত করে স্কুলবাস। বাস আসতে দেরি করায় খুবই উদ্বিগ্ন মা। আর এই চিন্তা বেড়েছে সম্প্রতি বেহাল রাস্তার কারণে দুর্গাপুরে স্কুল গাড়ি থেকে ছিটকে এক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার পর। তাঁর কথায়: “ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসও খানাখন্দে ভরে যাচ্ছে। বাসগুলো চলে প্রচন্ড জোরে। ভয় পাচ্ছি সে কারণেই।” শুধু তনুশ্রীদেবীই নন, আতঙ্কিত অনেক অভিভাবকই। ই এম বাইপাস দিয়ে প্রচুর স্কুল বাস চলাচল করে। কম সময়ে তাড়াতাড়ি যাতায়াত করার জন্য সকলে ওই পথটাকেই বেছে নেন। সেই রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে তাঁদের প্রশ্ন, দুর্ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত কি সরকারের হুঁশ ফিরবে না?
রাজ্য সফরে এলে রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী-সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কনভয় এই পথ দিয়েই বিমানবন্দরে যাতায়াত করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রায়শই এ পথে যান। স্বভাবতই ভিভিআইপিদের চলাফেরার এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি বেশ কিছু দিন ধরে এই অবস্থায় পড়ে থাকে কী করে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সরকারি মহলেও। রাস্তাটি কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) দায়িত্বে। ই এম বাইপাসের দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার (ট্রাফিক ও ট্রান্সপোর্টেশন) অনুপ ঘোষ বলেন, “যে অংশে মেট্রোরেলের কাজ হচ্ছে, সেই জায়গাটা সারানোর দায়িত্ব তাদের, অর্থাৎ কেএমআরসি-র।”
বাইপাসের বাকি জায়গা মেরামত করার জন্য তাঁরা প্রস্তুত আছেন বলে জানা অনুপবাবু। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের (কেএমআরসি) ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুব্রত গুপ্তও বলেন, “বর্ষার পরেই জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা মেরামতির কাজে হাত দেওয়া হবে।”
সম্প্রতি দুর্গাপুরে বেহাল রাস্তায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরে কোন জেলায় গুরুত্বপূর্ণ কোন কোন রাস্তার হাল খারাপ তার তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। রাজ্যের পূর্ত দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার কোথাও কোনও গর্ত যাতে না থাকে তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
কেএমডিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বললেন, “পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। বাইপাসের বেশ কিছু জায়গায় সমস্যা রয়েছে। ইতিমধ্যেই কেএমডিএ-র সিইও এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বর্ষার প্রকোপ কমলেই এই রাস্তা সারানো হবে।”
ছবি: সুমন বল্লভ ও বিশ্বনাথ বণিক
Previous Story

Kolkata

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.