|
|
|
|
রদবদল নিয়ে আজ প্রণব-করুণা কথা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
টেলিকম দুর্নীতি নিয়ে দয়ানিধি মারানের বিরুদ্ধে সিবিআই কী তদন্ত রিপোর্ট পেশ করে, তারই অপেক্ষা ছিল মাত্র। কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, মন্ত্রিসভার রদবদলে বিলম্ব হওয়ার সেটাও ছিল কারণ। কিন্তু গত কাল কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রীর পদ থেকে মারানের ইস্তফার পর এখন যে কোনও মুহূর্তে হতে পারে মন্ত্রিসভার রদবদল। সম্ভবত তা হতে পারে সোমবারই।
আসন্ন রদবদলে তৃণমূল থেকে কে পরবর্তী রেলমন্ত্রী হবেন বা মন্ত্রিসভায় দলের আর কোন নতুন মুখ আসবে তা অনেক আগেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে জানিয়ে দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মারানের ইস্তফার পর এ বার রদবদল নিয়ে ডিএমকে নেতৃত্বের বক্তব্য জানতে আজ রাতেই চেন্নাই সফরে গেলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। ডিএমকে-প্রধান করুণানিধির সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, করুণানিধিকে সহানুভূতি জানিয়ে রাজনৈতিক ভাবে পাশে থাকার ব্যাপারে ভরসা জোগানোই প্রণববাবুর চেন্নাই সফরের মূল কারণ। কানিমোঝি এবং এ রাজার জন্য আইনি লড়াইয়ে কংগ্রেসের তরফে সাহায্যের আশ্বাও দেবেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণ হল, করুণানিধি এখনও কংগ্রেস সম্পর্কে বিরূপ কিছু বলেননি। কংগ্রেসও ইউপিএ-র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিকের সঙ্গে সম্পর্কে তিক্ততা বাড়িয়ে অকারণ অস্থিরতা তৈরি করতে চায় না। তবে অবশ্যই রাজা ও মারানের পরিবর্তে করুণানিধি এ বার মন্ত্রিসভায় কাদের পাঠাবেন, তা জানার উদ্দেশ্য রয়েছে প্রণববাবুর।
ডিএমকে-র একটি সূত্র, দৌড়ে এগিয়ে রাখছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী টি আর বালুকে। দিল্লি থেকে ফিরেই মারান আজ করুণানিধির সঙ্গে ঘণ্টাখানেক কথা বলে যান। তার পর অপ্রিয় প্রশ্ন এড়াতে তিনি পিছনের দরজা দিয়ে চলে গেলেও, বালুই এগিয়ে এসে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। জানান, মারানের বদলে কাকে মন্ত্রী করা হবে এ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি দলে। মনমোহন সিংহ দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের মন্ত্রিসভা গড়ার সময়েই ডিএমকে-প্রধানকে জানিয়ে রেখেছেন, বালুকে নিতে তাঁর আপত্তি রয়েছে। এই অবস্থায় করুণানিধি দলের কাউকেই এখন মন্ত্রী করতে বিশেষ আগ্রহী নন বলে জানাচ্ছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। বরং কানিমোঝি ও রাজাকে তিহার জেল থেকে মুক্ত করা, নাতি দয়ানিধিকে বাঁচানোই তাঁর অগ্রাধিকার। করুণানিধি আদতে কী চাইছেন, কালকের বৈঠকে প্রণবকে তা জানাতে পারেন তিনি। ওই বৈঠকে থাকতে পি চিদম্বরমও কাল চেন্নাইয়ে যাচ্ছেন। অতীতে এ রাজার সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় তাঁর কথা তর্জমা করে দিয়ে প্রণববাবুকে সাহায্য করেছিলেন এই তামিল নেতা। কালকের বৈঠকেও সেই ভূমিকা নিতে পারেন চিদম্বরম। করুণানিধির মনোভাব জেনে দিল্লিতে জানিয়ে দিলে সে দিনই রদবদল নিয়ে বৈঠক হতে পারে মনমোহন-সনিয়ার। পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, গুজরাত ও গোয়ার রাজ্যসভা আসনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে সনিয়া গাঁধী আজ সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভারপাপ্ত দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, রদবদলের সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে এর। এক সপ্তাহের হায়দরাবাদ সফর সেরে রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলও আজ দিল্লি ফিরেছেন। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে বলা হচ্ছে, রদবদলের দিনক্ষণ এখনও সরকারের তরফে না জানানো হলেও তাঁরা প্রস্তুতি রাখছেন।
প্রশ্ন হল, কী ধরনের রদবদল হতে চলেছে মন্ত্রিসভায়? সূত্রের খবর, তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদী যে রেলমন্ত্রী হবেন তা একপ্রকার চূড়ান্ত। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকি ছবিটা খুব স্পষ্ট নয়। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রদবদলের কিছু বিষয়ে এখনও একমত নন মনমোহন-সনিয়া। সরকার ও কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, অনেক দিন ধরেই শীর্ষ চার মন্ত্রকে (অর্থ, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও বিদেশ) বদল চাইছেন মনমোহন। সেই সঙ্গে মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে মন্ত্রিসভায় আনার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। কিন্তু মন্টেককে নিয়ে আপত্তি রয়েছে কংগ্রেসেরই একাংশে। আবার তেলেঙ্গানা পর্ব থেকে শুরু করে হালফিলের রামদেব পর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি আঁচ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন কংগ্রেসের কিছু নেতা। এ নিয়ে দলের অনেকেই ঘরোয়া মহলে সমালোচনা করছেন পি চিদম্বরমের। তবে এ-ও ঠিক যে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর বড় কোনও নাশকতার ঘটনা ঘটেনি দেশে। অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সফল বলেই মনে করেন দলের একটা বড় অংশ। অনেকেই চাইছেন, এ বারের রদবদলে প্রণববাবুর মর্যাদা বাড়া উচিত। তাঁকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করতেই পারেন সনিয়া-মনমোহন। যদিও কংগ্রেসের একাংশের এই ইচ্ছা বাস্তবে পূরণ হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। পঞ্জাবের রাজ্যপাল শিবরাজ পাটিল ও কর্নাটকের রাজ্যপাল হংসরাজ ভরদ্বাজ ফিরতে চান মন্ত্রিসভায়। শিবরাজ সম্প্রতি দিল্লিতে এসে মনমোহন-সনিয়ার সঙ্গে দেখাও করেছেন। তাঁদের ইচ্ছেপূরণ নিয়েও সংশয় পরতে পরতে।
মন্ত্রিসভার কাজকর্মে উন্নতি ঘটাতে কমলনাথ, সি পি জোশী এবং বিলাসরাও দেশমুখের মতো নেতাদের সরাতে চান মনমোহন। তবে দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের নিরিখে তা কতটা সম্ভব হয় সেটা দেখার। তবে বীরভদ্র সিংহ, এম এস গিলের মতো ‘অদক্ষ’ মন্ত্রীদের সরিয়ে তরুণ প্রজন্মকে সুযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বিশেষ করে এন টি রামরাওয়ের কন্যা পুরন্দেশ্বরী ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। ডিএমকে-র কেউ না এলে বা তারা টেলিকম মন্ত্রক আর না চাইলে, তার দায়িত্ব পেতে পারেন সলমন। গত জানুয়ারিতেই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বাজেট অধিবেশনের পর রদবদল হবে। যাঁরা মন্ত্রী, আর যাঁরা ঠাঁই পেতে চান মন্ত্রিসভায় উদ্বেগে সকলেই। |
|
|
|
|
|