মায়া-রাজ্যে আজ রাহুলের মহা পঞ্চায়েত

দীর্ঘ পদযাত্রার পরে এ বার মহা পঞ্চায়েতের অপেক্ষা। রাত পোহালে উত্তরপ্রদেশে সেই মহা পঞ্চায়েত করতে চলেছেন রাহুল গাঁধী। যার কেন্দ্রে জমি নিয়ে আন্দোলন। এবং নিশানায় মায়াবতী সরকার। কিন্তু প্রশ্ন হল, কতটা সফল হবেন তিনি?
স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব তথা সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহের মতো নেতারা উচ্ছ্বসিত। বক্তব্য এই যে, জমি আন্দোলনকে হাতিয়ার করে পশ্চিমবঙ্গে যেমন পরিবর্তন ঘটাতে সফল হয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এ বার উত্তরপ্রদেশে তার পুনরাবৃত্তি করতে চলেছেন রাহুল। পদযাত্রা করে আলিগড়ের উপকণ্ঠে পৌঁছে রাহুলও আজ একই কথা বলেছেন। মায়াবতীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “রাজ্যে বিএসপি সরকারের পতন আসন্ন। সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তাতে অবধারিত ভাবেই আসন্ন ভোটে গদিচ্যুত হবেন মায়াবতী।” সেই সঙ্গে এ-ও জানিয়েছেন, কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার দ্রুত জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিল আনতে চলেছে। কংগ্রেস সূত্রে এ-ও বলা হচ্ছে, আগামী কালের মহা পঞ্চায়েত সফল করতে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ নেতা অজিত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোক দলকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে সামিল করতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েছেন গাঁধী পরিবারের তরুণ প্রজন্ম।

পদযাত্রার চতুর্থ দিনে চাঁদপুর গ্রামে রাহুল গাঁধী। পিটিআই
অনেকেই কিন্তু বলছেন, রাহুল গাঁধী যে পরিশ্রম করছেন তা উত্তরপ্রদেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছেন। তা ছাড়া তাঁর পদযাত্রা ও সভায় ভিড় হচ্ছে। কাল মহা পঞ্চায়েতেও ‘লোক হবে’ বলেই আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রাহুলের কর্মসূচি নিয়ে বিজেপি বা মুলায়ম সিংহের সমাজবাদী পার্টিও চাপে পড়ে গিয়েছে। এ সব বলার পরেও কিন্তু এই আন্দোলনের কয়েকটি দুর্বলতার জায়গা তুলে ধরছেন রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, প্রথমত, মহা পঞ্চায়েতের আগে রাহুল যে পদযাত্রা করেছেন, তাতে রাজ্য নেতাদের কাউকে সামিল করেননি। ফলে গোটা আন্দোলনে কোথায় যেন তার ছিঁড়ে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। দলের মধ্যে থেকেও সেই অভিযোগ উঠেছে। দ্বিতীয়ত, রাহুল উত্তরপ্রদেশের স্থানীয় নেতা নন। দল যে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদ প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরবে, এমন বার্তাও দেয়নি। ফলে মমতার পক্ষে স্থানীয় ‘জননেত্রী’ হিসেবে যা সম্ভব হয়েছে, রাহুল বা কংগ্রেসের ক্ষেত্রে তেমনটা হবেই, এ কথা এখনই হলফ করে বলা যায় না।
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, রাহুলের আন্দোলনের গতি যত বাড়ছে, ততই তলে তলে খুশি হচ্ছেন বহুজন সমাজ পার্টির নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, এতে উত্তরপ্রদেশে বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হবে। এতে কংগ্রেসের আসন হয়তো কিছুটা বাড়বে। কিন্তু মূল ক্ষতি হবে মুলায়ম সিংহ ও বিজেপি-র। বিএসপি নেতৃত্ব মনে করছেন, বিজেপি-র উচ্চবর্ণের ভোট ও মুলায়মের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে এ বার থাবা বসাবে কংগ্রেস।
এমন কিছু ঘটলে এক দিক থেকে কংগ্রেসের পক্ষেও তা ইতিবাচক হবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। কারণ, তাতে উত্তরপ্রদেশে জমি হারিয়ে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে দুর্বল হয়ে পড়বে বিজেপি। বিএসপি নেতৃত্ব মনে করছেন, এই ভোট কাটাকাটির মাঝে নিজেদের দলিত ভোট ব্যাঙ্ক অটুট রেখে মায়াবতী গদি বাঁচাতে পারবেন। তাই আজ কৌশলগত ভাবেই রাহুলকে আক্রমণ করেছেন তাঁরা। দলের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, রাহুল গাঁধী দলিতের হাতে খাবার খেতে চান না। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে এক দলিতের বাড়িতে তাঁকে খেতে দেওয়া হলে, তিনি খেতে রাজি হননি।
তবে দিগ্বিজয় সিংহের মতো কংগ্রেস নেতারা এই সব ‘তত্ত্ব’ মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে শুধু জমি আন্দোলনের জন্যই পরিবর্তন আসেনি। বামফ্রন্টের অপশাসন ও ঔদ্ধত্য এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে মানুষের উষ্মা ছিলই। জমি আন্দোলন সেখানে ইতিবাচক অনুঘটকের ভূমিকা নিয়েছে। উত্তরপ্রদেশেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, মুখ্যমন্ত্রীর ঔদ্ধত্য নিয়ে ক্ষোভ আছে মানুষের। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কৃষক অসন্তোষ কংগ্রেসের পালেই হাওয়া এনে দেবে। সেই আশঙ্কা থেকেই ভাট্টা পারসলে মহা পঞ্চায়েত করতে রাহুলকে বাধা দেন মায়াবতী। দলে সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
এই যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির দ্বন্দ্বে কে জিতবে, সেটা সময়ই বলবে।
First Page Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.