|
|
|
|
|
|
|
সিনেমা সমালোচনা... |
|
পুরনো চাল ভাতে বাড়ল কোথায় |
অমিতাভ আছেন অমিতাভেই। কিন্তু সেটা প্রমাণ করতে জগাখিচুড়ি কেন?
প্রভাত রায় দেখতে গিয়েছিলেন ম্যাজিক, দেখে ফিরলেন সার্কাস! |
‘বুঢ্ঢা হোগা তেরা বাপ’---তোমার বাবা বুড়ো হয়ে গেছে, কিন্তু আমি অমিতাভ বচ্চন, আজও ইয়াং, এখনও যুবক। ’৭০-’৮০-র দশকে আমি যা যা করতাম, যা যা করেছি, আজও আমি তাই তাই করতে পারি। চুল, দাড়ি, গোঁফ সাদা হয়েছে, শরীরে একটু চর্বি লেগেছে, বয়স হয়েছে ৬৯ বছর, সো হোয়াট? আজও আমি ‘ত্রিশূল’, ‘দিওয়ার’, ‘ডন’-এর মতো একা দশ জনের সঙ্গে ঢিসুম ঢিসুম করতে পারি। সুন্দরী মহিলাদের কোমর জড়িয়ে নাচতে পারি, গরমাগরম সংলাপ বলে দর্শকদের হাততালি কুড়োতে পারি। তোমার বাবা যখন হাঁটুর ব্যথায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে, আমি তখন সোজা পা তুলে ছ’ ফুট লম্বা ভিলেনের মুখে লাথি মারতে পারি। তোমার বাবার যখন কথা বলতে গেলে হাঁফ ধরে, গলা ভেঙে যায়, আমি তখনও সেই গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বরে ‘দিওয়ার’-এর সংলাপ বলি, “ম্যায় জঁহা খড়া হোতা হুঁ, লাইন ওহি সে শুরু হোতি হ্যায়।” এমনকী বিশাল শেখরের সঙ্গীতে ছবির সব ক’টা গানও নিজে গাইতে পারি। শুধু তাই নয়, কিশোরকুমারের গাওয়া সেই বিখ্যাত গান, ‘খাইকে পান বনারসওয়ালা’ নিজে গেয়ে দেখিয়ে দিতে পারি, হম ভি কুছ কম নহি! এখনও আমি একাই ১০০!
কেয়া বাত! কেয়া বাত!
সব মানলাম। কিন্তু এ সব দেখিয়ে ওঁর মতো প্রতিভাবান অভিনেতা, নতুন করে কী প্রমাণ করতে চাইলেন, সেটাই বুঝতে পারলাম না। আজকের দিনে যখন নতুন নতুন ভাবনাচিন্তা নিয়ে বাস্তবের কাছাকাছি, বাস্তবের গা ঘেঁষে ভিন্ন ধারার ছবি হচ্ছে, তখন অমিতাভ বচ্চন তাঁরই অভিনীত পুরনো সব ছবির পুরনো দৃশ্য, পুরনো কথা, পুরনো গানের পুনরাবৃত্তি কেন করলেন? বোধগম্য হল না। ওঁর কাছ থেকে নতুন কিছু পাওয়ার আশা নিয়েই তো ওঁর ছবি দেখতে গিয়েছিলাম যেমন পেয়েছি ‘ব্ল্যাক’ বা ‘পা’তে। |
|
বুঢ্ঢা হোগা তেরা বাপ
অমিতাভ, হেমা, সোনু, প্রকাশ |
ছবিটা দেখতে যাওয়ার আগে, ছবির নামটা শুনে মনে হয়েছিল হয়তো এটা একটা মজার, হাসির ছবি হবে। কারণ নামটার মধ্যেই একটা সুড়সুড়ি আছে। পাগলকে কে পাগল বললে পাগল যেমন খেপে যায়, মোটাকে মোটা বললে সে যেমন গালাগাল দেয়, তেমনই হয়তো বুড়োকে বুড়ো বললেও বুড়ো এমন কিছু করবে, যেটার মধ্যে মজা থাকলেও বয়স বাড়ার, বৃদ্ধ হওয়ার যন্ত্রণাটাও থাকবে। নিজের জীবনেই দেখেছি, প্রথম যখন একটি মেয়ে আমাকে ‘কাকু’ বলেছিল তখন কী দুঃখ যে হয়েছিল কী বলব! তার কিছু দিন পরে আর এক জন ‘জেঠু’ বলল, তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জরিপ করলাম। মুখে বয়সের ছাপ কতটা বেড়েছে তাই দেখতে লাগলাম বারবার। অতএব বুড়োকে বুড়ো বললে, সে তো বলতেই পারে ‘বুঢ্ঢা হোগা তেরা বাপ’! কিন্তু তার জন্য অ্যাকশন ছবির গল্প ফাঁদার দরকার ছিল কি? তাই এ ছবি দেখে আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া এটাই যে, দেখতে গেলাম ম্যাজিক, আর দেখে এলাম সার্কাস।
অমিতাভ বচ্চন নিজের প্রযোজনা সংস্থা এ বি কর্পোরেশনের ব্যানারে একটা দুর্বল জগাখিচুড়ি গল্পের এলোমেলো চিত্রনাট্য নিয়ে হিন্দি ছবির জগতে নতুন দক্ষিণের পুরী জগন্নাথকে দিয়ে এই ছবি কেন করালেন, সেটাও তিনিই জানেন।
গল্পটা কী? সেই মাফিয়া দমন। এক জন পুলিশ অফিসারের আদাজল খেয়ে লড়াই। মাফিয়ারা চায়, ওই পুলিশ অফিসারকে খতম করে দিতে। তার জন্য চাই এমন এক জন শু্যটার, যার পিস্তলের গুলি কখনও মিস হয় না। এল প্যারিস থেকে ‘বিরজু’ ওরফে অমিতাভ বচ্চন। সেই পুলিশ অফিসার ‘সোনু সুদ’কে দেখল তার মা হেমা মালিনীর সঙ্গে। কাট টু ফ্ল্যাশব্যাক এই হেমা মালিনীর সঙ্গে অতীতে অমিতাভ বচ্চনের বিয়ে হয়েছিল। অতএব ওই অফিসার তারই ছেলে। এর পর মাফিয়াদের হাত থেকে ছেলেকে বাঁচানোর জন্য অমিতাভ বচ্চন শেষ করে দিলেন মাফিয়া দলটাকে। নটে গাছটি মুড়োল। গল্প শেষ। প্যারিস ফিরে যাওয়ার আগে হেমা মালিনীকে বলে গেলেন, আবার যদি কোনও দিন আমার ছেলে বিপদে পড়ে, যদি বেঁচে থাকি তা হলে নিশ্চয়ই আসব। এই গল্পের সঙ্গে ছবির নামের কী সম্পর্ক, জানি না।
অভিনয়? অমিতাভ বচ্চন আছেন অমিতাভ বচ্চনেই। সেখান থেকে তাঁকে সরাবে কে? তবে ‘দিওয়ার’, ‘শোলে’র আসল ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’-এর ভক্ত যাঁরা তাঁদের এই বয়সে এ রকম একটা চরিত্রে অমিতাভকে দেখতে কেমন লাগবে সেটাই ভাবছি। সোনু সুদ ‘জোধা আকবর’ থেকেই দর্শকের মন কাড়তে শুরু করেছেন। দেখা যাক কোথায় পৌঁছন। আর হেমা মালিনী? তাঁর করার কিছু নেই। যা করেছেন যথেষ্ট। রবিনা টন্ডন বোধ হয় বুঝতেই পারেননি, ওঁর এখানে কী করার আছে! ভিলেনের চরিত্রে প্রকাশ রাজকে কিন্তু বেশ ভাল লেগেছে।
সঙ্গীত। বিশাল-শেখরকে বিশেষ খাটতে হয়নি। পুরনো গানের রিমিক্স করেছেন শুধু। আবহ সঙ্গীতে কয়েকটি গানের ব্যবহার বেশ ভাল। ক্যামেরা এবং ফাইট, কমার্শিয়াল হিন্দি ছবির বাকি সব ঠিক আছে। তবে জানি না এই ছবি আজকের প্রজন্মের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে? জানি না অমিতাভ বচ্চনের পুরনো চাল ভাতে বাড়বে কি না? |
|
|
|
|
|