চাপ পড়লেই যে কাজ হয়, শুক্রবার তার প্রমাণ পেল পাঁচ নম্বর সেক্টর। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দেড় বছর ধরে খারাপ হয়ে পড়ে থাকা সিগন্যাল চালু হয়ে গেল ২৪ ঘণ্টায়। আরও একটি অচল সিগন্যালকে চালু করার উদ্যোগের পাশাপাশি শুধুমাত্র হলুদ আলো জ্বলত, এমন একটি সিগন্যালও ঠিকমতো চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সেক্টর ফাইভের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে নবদিগন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট। ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে জেলা পুলিশ। কিন্তু দুর্বল পরিকাঠামোর জেরে শিল্পতালুকের অধিকাংশ রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ সে ভাবে চোখেই পড়ে না। ফলে সিগন্যাল চালু আছে কি না, তা দেখার লোকও নেই। কার্যত এর জেরেই গত শনিবার পাঁচ নম্বর সেক্টরের রাস্তায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান এক মোটরবাইক আরোহী। বিকেলের দিকে নিয়মবহির্ভূত ভাবে লরি ঢুকতে দেখেও সেটিকে আটকানোর মতো কোনও ট্রাফিককর্মী সেখানে ছিলেন না বলে অভিযোগ। ওই দুর্ঘটনার পরে তুমুল বিক্ষোভ হয় এলাকায়। নড়েচড়ে বসে রাজ্য প্রশাসন।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বৃহস্পতিবার শিল্পতালুকের রাস্তা পরিদর্শনে যান পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। শুক্রবারের মধ্যে শিল্পতালুকের তিনটি অচল ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করতে নবদিগন্তকে নির্দেশ দেন তিনি। দ্রুত ভাঙা রাস্তার সারাইয়েরও নির্দেশ দেওয়া হয়। বিধাননগর পুরসভার শপথগ্রহণ চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী ফোনে রাস্তা মেরামতির নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছিলেন পুরমন্ত্রী। |
শিল্পতালুকে টেকনোপলিস, বক্স ব্রিজ, নিকো পার্ক, উইপ্রো মোড়, এসডিএফ এবং এএল-বিএল ব্লকের কাছে ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট রয়েছে। তার মধ্যে টেকনোপলিস, বক্স ব্রিজ এবং এল-বিএল ব্লকের সিগন্যাল কাজ করছিল না। পুরমন্ত্রীর নির্দেশে এ দিন সকাল থেকেই ওই তিনটি পোস্ট চালুর প্রস্তুতি শুরু হয়। বিকেলের মধ্যে চালু হয় বক্স ব্রিজের সামনের সিগন্যালটি। টেকনোপলিসের সামনের পোস্টটির কেব্ল নির্মাণের কাজের জেরে উপড়ে গিয়েছিল। সেটিও ঠিক করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সন্ধ্যায় ট্রাফিক পুলিশ বহালের ব্যবস্থা করা হয় এএল-বিএল সিগন্যালে। জেলা পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “শিল্পতালুকের ট্রাফিকে লোক বাড়ানো হচ্ছে। এ বার সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
নবদিগন্ত কর্তৃপক্ষের এগজিকিউটিভ অফিসার বদ্রীনারায়ণ কর বলেন, “সিগন্যাল পোস্ট কাজ করছে কি না, তা পুলিশের দেখার কথা। পুলিশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ফলত সিগন্যালগুলি ওই অবস্থায় পড়েছিল। এ বার পুলিশ সিগন্যাল পোস্টগুলিতে লোক দিচ্ছে। ফলে এ বার আর অসুবিধে হবে না। ভেঙেচুরে যাওয়া রাস্তাগুলির প্যাচওয়ার্কের কাজ শুরু হয়েছে। আজ, শনিবার রাত থেকে নিকো পার্ক এবং রাজারহাটগামী রাস্তাটিতে পিচের কাজ হবে।”
অন্য দিকে, ই এম বাইপাসে রাস্তা মেরামতি শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শুক্রবার থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তার সব গর্ত মেরামত করা হচ্ছে। হট মিক্স প্লান্টও চালু রয়েছে।” দিন কয়েক আগে পুরমন্ত্রী এবং মেয়র বাইপাসের রাস্তা পরিদর্শন করেন। বাইপাস মেরামতি এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কলকাতা পুরসভা, কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বিধাননগর পুরসভা এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের আধিকারিকরা আগামী সপ্তাহে আলোচনায় বসবেন। এই রাস্তার একটি অংশ বিধাননগর পুরসভার অধীনে বলে শোভনবাবু জানিয়েছেন। এ ছাড়া, বাইপাসের কাছে সুভাষ উদ্যানে অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে। ওই জমা জল বার করতে পুরসভা সেখানে একটি নিকাশি প্রকল্প তৈরি করবে বলেও জানান মেয়র।
এ দিকে, বিভিন্ন রাস্তা মেরামতির জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে বিধাননগর পুরসভা। ঠিক হয়েছে, বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরেরা পুর-বোর্ডের কাছে রিপোর্ট দেবেন, কোথায় রাস্তা ভেঙে জল জমে রয়েছে। সেই মতো সংস্কারের কাজ হবে। চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “বর্ষায় রাস্তা মেরামতির কাজ করা যাবে না। তবে ভোগান্তি কমাতে আমরা চেষ্টা করছি রাস্তার গর্ত বুজিয়ে দিতে।” |