কূটনীতির অঙ্কেই খালেদার সঙ্গে বৈঠক কৃষ্ণের
বিল ক্লিন্টন তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। সে দেশে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। আমেরিকা জুড়ে তখন ভোটের হাওয়া। ক্লিন্টনের দলের আল গোরের বিরুদ্ধে প্রার্থী বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির জর্জ বুশ। আমেরিকায় ক্লিন্টনের ভোজসভায় যোগ দিলেন বাজপেয়ী। বিষয়টা সেখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রজেশ মিশ্রর পরামর্শে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর সঙ্গেও দেখা করতে আগ্রহী হয়ে উঠলেন বাজপেয়ী। ঘটনাচক্রে বুশ তখন প্রচারে ব্যস্ত, শহরে নেই। তাই দু’জনের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ ফোনে কথা হয়েছিল। বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্রজেশ এই প্রতিবেদককে সে দিন বলেছিলেন, ‘ভারতের বিদেশনীতি একটা রাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্কের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। ব্যক্তির উপর নয়’।
এ বার বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণের ঢাকা সফরে ভারতের এই বিদেশনীতিরই প্রতিফলন দেখা গেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি কৃষ্ণ আজ বৈঠক করেন বিএনপি-নেত্রী তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গেও। এই বৈঠকটি নিয়ে হাসিনা-সরকারের কোনও উৎসাহ ছিল না। কিন্তু বিরোধী নেত্রীর সঙ্গে কৃষ্ণের এই সাক্ষাৎ সরকারি প্রোটোকল মেনেই হয়েছে। হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে দিল্লি এসেছিলেন, তখন তিনি বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিল সাউথ ব্লকই। খালেদার সঙ্গে কৃষ্ণের বৈঠক নিয়ে ভারত আগাম জানালেও এটি কিছুতেই চূড়ান্ত হচ্ছিল না। শেষে ভারতীয় হাই কমিশন যোগাযোগ করে খালেদার সঙ্গে। তার পরে রাজি হন বিএনপি-নেত্রী।
আজ দিল্লি ফেরার আগে গুলশনে, বিএনপি-র সদর কার্যালয়ের দোতলায় খালেদার সঙ্গে বৈঠকে বসেন কৃষ্ণ। এর আগে নিরুপমা রাও বিদেশসচিব হয়ে যখন ঢাকায় গিয়েছিলেন, তখনও তিনি খালেদার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। কৃষ্ণ বলেন, “ভারতের মতো বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা। বিরোধী দলকে গুরুত্ব তো দিতেই হবে।” ঢাকার রাজনীতিতে অবশ্য হাসিনা ও খালেদা, এই দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই। পরিস্থিতিটা অনেকটা বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক সিপিএম এবং বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেসের মতো। তা-ও তো তৃণমূল কংগ্রেস বিধানসভায় হাজির হত। কিন্তু বিএনপি সে পথে হাঁটেইনি। হাসিনা বারবার তাদের অনুরোধ করলেও ফল মেলেনি। অন্তত এখনও।
খালেদার সঙ্গে কৃষ্ণর বৈঠক নিয়ে ঢাকার সংবাদমাধ্যমে নানা জল্পনা প্রকাশিত হয়েছে। ক’দিন আগে ভারতের বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। বাংলাদেশে যে কোনও মূহূর্তে পট-পরিবর্তনেরও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। সে দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে যে, কৃষ্ণ কি তবে এই পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা ভেবে খালেদার সঙ্গেও যোগসূত্র গড়ে তুলতে চাইছেন? আবার মনমোহনের জামাত-সম্পর্কিত বিতর্কিত মন্তব্যের পরে সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত বিএনপি কোনও মন্তব্য করেনি। শোনা যাচ্ছে, খালেদাও রাজনৈতিক দূত মারফত মনমোহন সিংহের সঙ্গে সম্পর্ক উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। কৃষ্ণ অবশ্য এই সব জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “হাসিনা সরকারের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি গরিষ্ঠতা রয়েছে। এই সরকারের কোনও বিপদ তো আমি দেখছি না।” হাসিনা-সরকারের বিরুদ্ধে দু’দিনের হরতাল-বন্ধ নিয়েও চিন্তিত নয় ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, হরতাল দেখে এই সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয় যে, এই সরকারের কোনও বিপদ রয়েছে।
খালেদা আজ কৃষ্ণের মাধ্যমে মনমোহন সিংহকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ৬ সেপ্টেম্বর মনমোহন যখন ঢাকায় আসবেন, তখন তাঁর সঙ্গেও আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। কৃষ্ণ বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে গত তিন দিনে আমার যে কথা হয়েছে, তার নির্যাস খালেদাকে জানিয়েছি। তিনিও বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর দলের মত আমাকে জানিয়েছেন।” আজ বাংলাদেশে একটি সভায় কৃষ্ণকে প্রশ্ন করা হয়, চট্টগ্রাম পর্যন্ত ভারত যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে, তার মধ্যে দিয়ে ভারত চিনে অস্ত্র পাচার করবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? বলা হয়, ভারতেও তো বাংলাদেশ বিরোধিতা রয়েছে। সেটা কী ভাবে সামলাবেন? কৃষ্ণ বলেন, “একাত্তরে বাংলাদেশ যখন পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তখন আমি সাংসদ ছিলাম। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী লোকসভায় এসে ঘোষণা করেন, একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। যে রাষ্ট্রের জন্মের সময় আমরা সক্রিয়, ইচিবাচক ভূমিকা নিয়েছিলাম, তার বিরোধিতা আমরা করব কেন?” চিনে অস্ত্র পাচারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেন তিনি।
First Page Bidesh Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.