|
|
|
|
মন্দির নেই, তবু চার গ্রামে ধুমধামেই পূজিত কুলাইচণ্ডী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ভাতার |
দেবীর উৎপত্তি নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। এক দল বলেন, চাষ করতে গিয়ে লাঙ্গলের ফলায় উঠে এসেছিল দেবীমূর্তি।
অন্য পক্ষের দাবি, এক বাসিন্দা স্বপ্নাদেশ পান, গ্রামের এক ডোবা থেকে উদ্ধার করতে হবে দেবীকে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ডোবা থেকে উঠে আসছে এক কন্যা। মূর্তি চুরি করে পালিয়ে যাচ্ছে সে, এই সন্দেহে তাকে ধাওয়া করেন গ্রামবাসী। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে মেয়েটির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। তা-ই ধীরে ধীরে দেবী মূর্তির আকার নেয়। উৎপত্তি নিয়ে জনশ্রুতি যা-ই হোক না কেন, ভাতারের কূলনগর, উষো, কুলচণ্ডা ও ছাতনি গ্রামে প্রতি আষাঢ়ের নবমীতে পূজিত হন দেবী। সেই অনুযায়ী আজ, শনিবার পুজো হবে ওই চার গ্রামে।
কথিত রয়েছে, কাঁটার আর কুলচণ্ডা গ্রামের মাঝে চাষ করতে গিয়ে লাঙ্গলের ফলায় উঠে আসে এক অপূর্ব দেবীমূর্তি। সেই দেবীর নাম রাখা হয় কুলাইচণ্ডী। কালক্রমে তাঁর নামেই গ্রামের নাম হয়ে যায় কুলচণ্ডা। কাঁটার গ্রামের বাসিন্দারা দেবীকে নিয়ে গিয়ে ফেলে রাখেন। পুজোহীন পড়ে থাকেন দেবী। কাঁটারের বাসিন্দা বন্দিরাম চট্টোপাধ্যায় স্বপ্নে দেখেন, দেবী বিরক্ত হয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করছেন, এ ভাবে আর কত দিন কাটাতে হবে। তিনিই দেবীমূর্তির পুজো প্রচলন করেন। |
|
সেবাইতের বাড়িতে দেবীমূর্তি। নিজস্ব চিত্র। |
দেবীমূর্তি উদ্ধারের খবর যায় তৎকালীন বর্ধমানের রাজার কাছেও। তিনি দেবীর কাছে মানত করেন, আসন্ন যুদ্ধে জয়লাভ করলে দেবীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবেন। তাঁর মানত ফলতেই, রাজা ২৪ বিঘে নিষ্কর জমি দেন। সেই জমির আয় থেকেই কয়েকটি শরিক পরিবার পুজো করে।
তবে দেবীর উৎপত্তি নিয়ে অন্য গল্পও আছে। স্থানীয় কুলনগরের বাসিন্দা বিধানচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “আদতে কুলাইচণ্ডীর নাম ছিল জয়দুর্গা। কাঁটার গ্রামের বাসিন্দারা স্বপ্নে দেখেন, ডোবা থেকে উদ্ধার করতে হবে দেবীকে। এই স্বপ্নাদেশের কথা ছড়িয়ে পড়ে এলাকার চারটি গ্রামে। চার গ্রামের মানুষ ওই ডোবার কাছে ছুটে যান। তাঁরা দেখেন, লাল শাড়ি পরা এক কন্যা উঠে আসছে।” জনশ্রুতি, গ্রামের মানুষ দেখেন, মেয়েটির গাছকোমরে কিছু একটা রয়েছে। গ্রামবাসীর ধারণা হয়, দেবীর মূর্তি চুরি করে পালিয়ে যাচ্ছে মেয়েটি। গ্রামের মানুষ ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটতে শুরু করেন। বিচ্ছিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেবী মূর্তির রূপ নেয়। তা কুড়িয়ে নিয়ে যান চারটি গ্রামের মানুষ। তাই দেবীর ‘দেহ’ আছে কুলনগরে, চরণ রয়েছে উষো গ্রামে, দেবীর ঘট রয়েছে কুলচণ্ডা গ্রামে এবং চাঁদমালা খোড়ুর ছাতনি গ্রামে।
আদতে দেবীমূর্তি কষ্টিপাথরের। কুলনগরের বাসিন্দা নবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “কালাপাহাড় একদা ওই এলাকার সমস্ত মন্দির ভেঙেচুরে দেয়। এলাকার এক প্রাচীন মন্দিরও মাটিতে মিশে যায়। দেবীর উৎপত্তি হয় এই মন্দিরের পরিত্যক্ত অংশ থেকেই।” তবে দেবীর আবির্ভাব নিয়ে যতই আলাদা গল্প চালু থাক, প্রতি আষাঢ়ের নবমীতে ওই চার গ্রামে ধুমধামে পূজিত হন দেবী। পুজো উপলক্ষে এই চার গ্রামে মানুষের ঢল নামে। স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল যশ বলেন, “এলাকার অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ দেবীদর্শনে আসেন। মূল পুজো হয় কুলনগরে। তবে দেবীর কোনও মন্দির আজও তৈরি হয়নি। সেবাইতদের বাড়িতেই থাকেন দেবী। তাই মানুষ চান, একটা মন্দির গড়ে উঠুক।” মন্দির কোথায় হবে, তা নিয়েও মতবিরোধ রয়েছে চার গ্রামে। তবে গরিষ্ঠ অংশ চাইছেন, কাঁটার গ্রামের কুলাইচণ্ডী ডোবার কাছে গড়ে উঠুক মন্দির। আজ, শনিবার কুলাইচণ্ডী দেবীর দেড় ফুটের কষ্টিপাথরের মূর্তি ফের দেখতে যাবেন চার গ্রামের মানুষ। |
|
|
|
|
|