রবিবাসরীয় গল্প
৯:৫৫-র সরকারি বাস

ছেলেটা
ন’টা পঞ্চান্ন মিনিটে বাস স্টপে এসে দাঁড়ায়। মেয়েটি দাঁড়িয়ে থাকে বাস স্টপে। সরকারি বাসটা এলে দু’জনেই উঠে পড়ে। মেয়েটি লেডিজ সিটে বসে। ছেলেটি অন্য সিটে, জানলার ধারে। কিছুক্ষণ পর বাস ছাড়ে। যতক্ষণ সিট ফিলাপ না হয় ছেলেটি হাঁ করে মেয়েটিকে দেখে। মেয়েটি দেখে বাইরের দৃশ্য; মানুষজন। ক্রমে সিট ফিলাপ হয়, তার পর যারা ওঠে তারা দাঁড়িয়ে থাকে। ওই দাঁড়িয়ে থাকার ফাঁকফোকর দিয়ে মেয়েটিকে দেখার চেষ্টা চালিয়ে যায় ছেলেটি। ছেলেটি দেখে মেয়েটি দৃশ্যমান বস্তুজগতে মিশে আছে। তার পর এক সময় ভিড় আরও বাড়ত। মেয়েটিকে আর দেখা যেত না। ছেলেটি অনুভব করত মেয়েটি এখনও বসে আছে। তার জার্নি পঁয়তাল্লিশ মিনিটের। এবং সে যখন উঠত সিট ছেড়ে নির্দিষ্ট বাস স্টপে নেমে যাবে বলে, সে দেখত মেয়েটি যে সিটে বসে ছিল সেই সিটে অন্য আর একটি মেয়ে বসে আছে। নেমে যাওয়ার সময় সে প্রতিদিনই লক্ষ করে একই দৃশ্য। শুধু অন্য আর একটি মেয়ে, তারা পাল্টে যায়। তা হলে মেয়েটি নিশ্চয় আরও আগে কোথাও নেমে যায় ভিড় বাস থেকে। ফেরার পথে কোনও দিনই দেখা হয় না। ছেলেটি বাড়ি ফিরে আসে রাত আটটায়।
বাসে মিনিট পাঁচেক সে মেয়েটিকে দেখতে পায় এবং বাস স্টপে আরও পাঁচ মিনিট। সব মিলিয়ে দশ মিনিট সে সারা দিনে দেখে। এর পরে তেইশ ঘণ্টা পঞ্চাশ মিনিট সে দেখে কল্পনায় বিভিন্ন কাজের ফাঁকে ফাঁকে। সর্বক্ষণ সে দেখে তার দাঁড়ানো। গ্রীবা তুলে ধরা। তার তাকানো। তার বাসে ওঠা। এবং বাসে উঠে দৃশ্যমান বস্তুজগতে তার একাত্মতা হয়ে যাওয়া। পলকহীন নিমগ্ন দৃষ্টি ফিরেও আসে না যাত্রীদের মধ্যে। বাসের মধ্যে যেন সে নেই, অন্য গ্রহ থেকে আসা একটি জীব যেন নিতান্ত হয়েই বাসে চাপা!
ছেলেটি উশখুশ করে। দেখার এক তীব্র বাসনায় সে ভুলে যায় সেও তো পথের দিকে তাকাতেই ভালবাসে। কিন্তু সে তাকায় না। তার মন ক্রমশ একাগ্র হয় মেয়েটির দিকে, যখন থেকে মেয়েটিকে বাসে বসে থেকেও দেখতে পায় না ভিড়ের চাপে।
যখন সে নামে বাস থেকে অন্য আর পাঁচটা দিনের মতো মাসের পর মাস ধরে, মেয়েটির প্রতি লক্ষ্যহীন নির্দিষ্ট বাস স্টপে তেমনিটা এখন আর পারে না। এখন সে লক্ষ করে নেমে যাওয়ার আগে বাঁ দিকে অভ্যস্ত কায়দায়। এবং নিশ্চিত সে দেখে সেখানে বসে আছে অন্য আর একটি মেয়ে। একটা বছর ধরে চলছে এই দেখার কষ্ট! এই কষ্ট তাকে কেউ চাপিয়ে দেয়নি। নিজের ভেতর থেকে তৈরি তার এই কষ্ট। যার এই কষ্টের কোনও মানেই নেই। কত কিছুর মানেই থাকে না। এই অর্থহীন কত কষ্ট মানুষ প্রতিদিন প্রতিনিয়ত নিজের থেকেই সৃষ্টি করে চলেছে বা অবচেতনে সৃষ্টি হয়েই চলেছে আপাত বেঁচে থাকার কোনও সর্বগ্রাসী কারণ না নিয়েই। শুধু বেঁচে থাকার জন্যই বেঁচে থাকা এই বোধ নিয়েই কোটি কোটি মানুষ জীবনপাত করে দিচ্ছে। আলু-উচ্ছে-পটলের দর কষাকষিতে জীবনটা সীমাবদ্ধ রেখে দিতে পারলে, মন খারাপ এবং কষ্টটা অনেক কমে যাবে। যত ভাবো, তত কষ্ট। বা যত প্রেম বা রোমান্টিসিজম, তত কষ্ট! তার থেকে বউয়ের শাড়ি-আলু-পটল-কাটা মাছ-সিগারেট-কনডোম, নিশ্চিন্ত জীবনটা সিঁড়ি ভাঙা অঙ্কের মতন... দৌড়ও... তার বাইরে যেয়ো না, খাবি খাবে। কষ্ট পাবে। কী দরকার মেয়েটির চোখ তোমার বুকে আঘাত করছে কি না, সে খবর দিয়ে। তা হলেই তুমি মরেছ। তুমি আমূল বিদ্ধ হয়ে গেছ অন্য চিন্তায়। নিশ্চিন্ত জীবনের আশ্রয় ছেড়ে তুমি চলেছ রাত-ঘুম কেড়ে নিয়ে, নাওয়াখাওয়া ভুলে, পদোন্নতি ছেড়ে আকাশমুখো হয়ে পথ চলেছ এক আকাশ হৃদয় নিয়ে। তার কোনও মানেই হয় না। সব জানে ছেলেটি। সব জেনেও সব ভুলে ওই ৯:৫৫-র বাস ধরার জন্য ছটফট করে। পরের বাসে লেট মার্ক হবে।
আগের বাসে গেলে খুব ভাল হয় সবাই জানে ন’টার বাসটায় গেলে কারও কিছু বলার থাকে না। সে যেতও ওই ন’টার বাসে, কিন্তু সে-দিন একটু দেরি হয়ে যাওয়াতে ন’টা পঞ্চান্নর বাসটা ধরল। আর সেই দিনই বিপত্তি ঘটে গেল। কিছু একটা ঘটে গেল তার জীবনে। নতুন করে সে যেন কিছু দেখল। এবং দেখার সঙ্গে কিছু পেলও। এই দেখতে পাওয়াটাই যেন ঘটল বহু বছর বাদে। এবং সে অবাক হয়ে গেল। অবাক হয়ে গেল এই ভাবেও মনের রঙের সন্ধান পাওয়া যায় ভেবে... ব্যথার উৎসমুখ খুঁজে পাওয়া যায় অবশেষে! যে ব্যথা অহরহ যন্ত্রণা বাড়ায়। কাঁদায়। কাঁদতে কাঁদতে একটা আকাশ ছোঁয়ার আনন্দও অনুভব করা যায়। ঠিক এই ভাবেই যদি সমস্ত মানুষ আনন্দ খুঁজে পেত! যদি তার নিজস্ব আকাশটা দেখতে পেত, তা হলে কলেজের ওই ছেলেটা রাজনৈতিক খুন হয়ে যেত না। ভাবছিল ছেলেটি। কলেজের ওই ছেলেটি ভোটের নমিনেশন সাবমিট করতে গিয়েছিল। নমিনেশন ঘিরে কলেজে ব্যাপক গণ্ডগোল চলছিল। অবস্থা বুঝে ছেলেটি পালাতে চেয়েছিল, পারেনি। বিরোধীরা ঘিরে ধরে ছেলেটাকে পেটাল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল, তার পর মারা গেল। কী হল? যে ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রটি মারা গেল সে কি কোনও আকাশ ছুঁতে চেয়েছিল? পারল না। আর যারা মেরে ফেলল, তারাও কি কোনও আকাশ ছুঁতে পারল? তারাও পারল না। কিছু দিন আত্মগোপন করে ধরা পড়ে পুলিশ কাস্টডিতে থেকে গেল। ওরা যদি সবাই পড়াশোনাটা করত। কাউকে ভালবাসত। যে ভালবাসা হিংসা শেখায় না, তা হলে কি এ রকমটা হত? কাউকে ভালবাসলে কি খুন করা যায়? রক্ত নেওয়া যায়? মিথ্যা বলা যায়? আর, যায় না বলেই ওরা কাউকে ভালবাসেনি। প্রেমে পড়েনি। ব্যথা পায়নি। কাঁদেনি কোনও দিন। ওদের এখন কাঁদার প্রয়োজন এসেছে। যে-দিন সত্যি সত্যি ওরা কাঁদতে পারবে মানুষের ভালবাসার জন্য, ভাল লাগার জন্য সেই অশ্রু সৌন্দর্যের এবং কষ্টের দ্যোতক হবে সেই দিন থেকে পৃথিবীতে নতুন রাজনৈতিক নেতার জন্ম হবে! তা কি হবে কোনও দিন? তা যদি হয়। কুণ্ঠিত ভাবে হাসল ছেলেটি।



দাদা, দাদা...

হ্যাঁ খুলছি, ছেলেটি বলল। বাসন মাজার বউদি। রোজ ভোরবেলা ছ’টা দশ মিনিটে আসেন। ঘুম চোখে উঠে দরজা খোলে ছেলেটি। তার পর দাঁড়িয়ে থাকে। যদি আবার শুয়ে পড়ে তা হলে আর সময় মতো উঠতে পারবে না। কোনও কাজ হবে না। সময় করে বেরিয়ে পড়তে পারবে না।
ছ’টা জলের বোতল খালি করল ছেলেটি। বাসি জল, টাটকা জল ভরতে হবে সারা দিনের জন্য খাওয়ার, তার পর রান্নার জল। বাইরের জল। বাথরুমের জল। বাসন মেজে ঘর মুছে চলে গেলে সেই সব বাসন ধুতে হবে। সেটাও একটা কঠিন কাজ। এ সব কাজ মা এক সময় করতেন, এখন পারেন না। ঝটপট সে কাজগুলি সেরে একেবারে স্নান সেরে বেরোল। ঘড়িতে সাতটা বেজে তিরিশ মিনিট। এর পর চা বানাবে সে। মাকে ডাকবে। দু’জনে মিলে চা পর্ব শেষ হবে। তার পর রান্না মা করবে। অফিস যাওয়ার তাড়া। বেরোতে বেরোতে সাড়ে ন’টা। হেঁটে বাস স্ট্যান্ড; ৯:৫৫-র সরকারি বাস।
যখন ভোরে প্রথম ঘুম ভাঙে তখন সাড়ে পাঁচ। ঘুমের ঘোরে মুখটা ভেসে ওঠে তক্ষুনি। ঘুম এবং জাগরণের মধ্যে মুখটা দেখতে দেখতে ভেবে নেয় আরও আধ ঘণ্টা তো সময় আছে, ঘুমিয়ে নেওয়া যাক। সে আবার অতলে তলিয়ে যেতে যেতে ডাক শোনে ‘দাদা...’ তক্ষুনি সে তড়াক করে লাফ দেয় নীচে। চাবির গোছাটায় ঘুম চোখে নির্ভুল জায়গায় আঙুল ছোঁয় ... তোমার বিছানাটা সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রাখো তোমার প্রিয়জনের জন্য। ডাইনিংটা সাজাও তোমার মনের মতো করে। স্নানঘর সাজাও এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সৎ পথে উপার্জন করে আনো। তা যদি না পার, যা আছে তাই দিয়ে গুছিয়ে নাও। যা করো আনন্দের সঙ্গে করো। হিংসার প্রশ্রয় দিয়ো না তা হলে তোমাকে অসৎ হতে হবে। প্রতিনিয়ত মানুষ খুন হচ্ছে এই সমাজে। ধর্ষণ বেড়েছে। ভালবাসা নেই। ভালবাসা নেই। ছেলেটি দু’বার উচ্চারণ করল। তার পর আবারও বলল, ভালবাসা আছে, না হলে সে বেঁচে আছে কী করে! সে কেন রোজ কষ্ট করে ছুটে যাচ্ছে ওই মুখটা দেখার জন্য, যারা ছুটে যাচ্ছে এই ভাবে তারাই এই পৃথিবীটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ছেলেটির এত সব ভাবনার মধ্যে আবার ওই মেয়েটির মুখ মনে পড়ল। খুব ভালবাসতে ইচ্ছে করল। কথা বলতে ইচ্ছে করল।

সকাল ১০:২০ মিনিট

বাসটা খুব জোরে ছুটছে। দাঁড়ায় কম ছোটে বেশি। সরকারি বাস। বাসের অপজিট সিটে সে বসে আছে। বাসের মধ্যের ভিড়ে হারিয়ে বসে আছে সে। তাকে দেখা যাচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু সে দেখছে আজ খুব ভাল লাগছে তাকে। নরমালি সে সাজে না। গুছিয়ে সাজার বাইরেও যে সৌন্দর্য ধরা দিতে পারে, ওকে না দেখলে সেটা বোঝা যায় না। ছেলেটি ঘড়ি দেখল, এতক্ষণে সে নেমে গিয়েছে। ঘিয়ে রঙের শাড়ির ওপর অসংখ্য লাল বুটি গায়ে লাল স্টোল। মাথায় এক ঝাঁকড়া কালো চুলে লাল রিবন। ওটা কী রিবন! কী জানি... আকাশটা আজ বড্ড নীল। হাওয়া আছে। সেই হাওয়ায় সাদা কাগজের মতো উড়তে ইচ্ছে করল ছেলেটির...
যাবেন আমার সঙ্গে কোথায়?
এই হাঁটব একটু... আপনার সঙ্গে খুব হাঁটতে ইচ্ছে করছে।
পাগলামি... অফিস আছে না, এই হঠাৎ হাঁটব কী করে... কোনও প্ল্যান...
ধুস ওই ভাবে জীবনে আনন্দ আছে নাকি? আচ্ছা মাঝপথে আপনি হারিয়ে যান কোথায় বলুন তো? আপনাকে খুঁজে পাই না।
দাদা এক্সাইড মোড়। কন্ডাক্টর ছেলেটি বলল। ছেলেটি দ্রুত নেমে এল বাস থেকে। কিন্তু সংলাপের রেশ ভেতরে থেকে গেল। হাঁটতে লাগল ছেলেটি। তার অফিসে যেতে ইচ্ছে করল না। সে হাঁটতে লাগল নন্দনের দিকে। নীল আকাশ। উত্তুরে হাওয়া...
বাসের জানলায় তন্ময় হয়ে কী দেখেন আপনি?
মানুষের ভিড়।
ওই ভাবে মানুষের ভিড় দেখে কী পান?
মানুষই তো সব। এই সভ্যতার সৃষ্টির মূলে আবার তারাই ধ্বংস করছে, কিন্তু ওই স্রোতের ভিড়ে হারিয়ে গেলে ধ্বংসটা খুঁজে পাবেন না। আপনিও শরিক হয়ে যাবেন তাদের।
তা হলে?
তা হলে আবার কী! আপনি একা হয়ে গেলে দেখবেন সারা পৃথিবীটা দাউ দাউ করে জ্বলছে। রক্তের হোলি খেলা চলছে যেন। এক দেশ আর এক দেশকে বোমারু বিমান দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। আগ্রাসন চালাচ্ছে। মানুষের কথা ভাবছে কোথায় তারা। তারা ভাবছে তাদের লাভ। তারা ভাল থাকবে সুখে থাকবে। সুতরাং তোমাকে না মারলে আমি ভাল থাকব কেমন করে। এই আপ্তবাক্য মেনে নিয়ে এক দিন ধর্মের ভিত্তিতে সারা পৃথিবীটা ভাগ হয়ে যাবে! ইহুদি জাতটা নিশ্চিহ্ন করে দেবে ভেবেছিল মাত্র এক জন জার্মান, কেউ কেউ মুসলিম জাতটা ধ্বংস করে দেওয়ার কথা ভাবছে সেই ভাবনাটা এখনও চলছে অন্য রকম ভাবে। যেমন আজও জমি নিয়ে, রাজত্ব নিয়ে কুরুক্ষেত্র চলছে। সেই কুরুক্ষেত্রটা নাম পাল্টে আজও আছে। শুধু ধর্ষণ বেড়েছে, খুন বেড়েছে, অবিশ্বাস বেড়েছে কিন্তু মানুষের মনের ভিতরে অবিরত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধটা কেউ থামাতে পারছে না, কিন্তু বাসের জানলা দিয়ে দেখুন এই মেট্রোপলিস কত সরগরম। বেঁচে থাকলে এক দিন ঠিক ভালবাসা খুঁজে পাব। যেটা ভীষণ দরকার... এমন এক জনকে ঠিক খুঁজে পাব।
কাকে খুঁজে পাবেন?
ভালবাসাকে যে বাঁচিয়ে রাখবে। আপনি পেয়েছেন?
পেয়েছি। অনেক কষ্টে বুকে আগলে রেখেছি, আপনাকে কিন্তু বলা হয়নি, আপনার মতন আমিও
কেউ কি ডাকল তার নাম করে? ছেলেটি পিছন ঘুরল। না, কেউ না। কোথাও কেউ নেই। সে দাঁড়িয়ে পড়ল নন্দনের বারান্দায়...

রাত ২:৩০ মিনিট

দু’চোখের পাতার ওপর আঠার মতো আটকে থেকে হাঁ করে তাকিয়ে থেকো না প্লিজ, শুয়ে পড়ো শুয়ে পড়ো পাশে। আজ খুব ঠান্ডা পড়েছে। কাল সকালে... গুটিশুটি মেরে আবার ঘুমোবার চেষ্টা করল ছেলেটি। ঘুম এল না। আঠার মতো জড়িয়ে আছে দু’চোখ। তার ওপর সেই মুখ! ছেলেটি বলল অস্ফুটে, তুমিও নিশ্চয় ঘুমোওনি। আর আমি তো তোমাকে নিয়ে ভাবি অষ্টপ্রহর, তাই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। দেখি তোমার মুখ। তোমার সঙ্গে কথা বলি। তুমি ছুঁয়ে দিলেও আমি ছুঁতে পারছি না। তুমি ধরা দিলেও আমি আটকাতে পারছি না কেন বলতে পারো। কিন্তু আমার ভীষণ ইচ্ছে তোমাকে আটকে রাখি। কিন্তু অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষিত হবে না। কিছু কিছু দেশ অবশ্য চেষ্টা করেছিল সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করার, কিন্তু টেকেনি। বড্ড বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে ধনী-দরিদ্রের অবস্থান। এটাই ঠিক বলো? না হলে তো স্বপ্নগুলো থাকবে না। স্বপ্নগুলো না থাকলে ছোঁয়ার ব্যাপার থাকবে না। ধরতে ছোটার কষ্ট থাকবে না। তা হলে আলো অন্ধকারও থাকবে না। শুধু আলো। সেই আলোতে স্বপ্নেরা সব হারিয়ে যাবে। তুমি হারিয়ে যাবে। ভালবাসা হারিয়ে যাবে। সেখানে লঠুতরাজ, খুন, ধর্ষণ, অবিশ্বাস, রাহাজানি, ধর্ম বিভাজন আরও বেড়ে স্বপ্নগুলো বেঁচে থাকবে। তোমাকে আমি হারাতে চাই না প্লিজ, তুমি থাকবে তো...
থাকব।
থেকো... আমার মা ডাকছে খোকা, খোকা...
বলো মা, তুমি উঠছ কেন? মা বাথরুমে যাবে। তাকে আমি পৌঁছে দিয়ে আসি পাঁজাকোলা করে। তার পর উঠিয়ে নিয়ে এসে শুইয়ে দিই! বাত। অসহ্য ব্যথা এবং যন্ত্রণা। হাতে এবং পায়ের আঙুল বেঁকে গিয়েছে। উঠতে পারে না। হাঁটু মুড়ে বসতে পারে না। এই একটু ভাল তো পরক্ষণেই খারাপ। ওষুধ চলছে বারো মাস।
ছেলেটি বাইরে বারান্দায় বেরিয়ে এল। শীত রাত আড়াইটে বাজে। ঝকঝকে নক্ষত্রখচিত রাত আকাশ। অল্প অল্প হাওয়া আছে। ছেলেটি দাঁড়িয়ে থাকল।

সকাল ৯:৪৫ মিনিট

সব চোখের কথাই কি মুখের ভাষা হয়ে বেরোয়। সেই সব চোখের ভাষা সরাসরি হৃদয়ে গিয়ে পৌঁছয়। হৃদয়ে আটকে থাকে। তোলপাড় হয়। বলতে পারা যায় না। এমন কিছু কথা যেমন শুধু চোখ দিয়ে বলা যায়, তেমনই এমন কিছু কথা মানুষের মুখের ভাষা দিয়েও বলতে হয় না হলে মানুষে মানুষে বোঝাপড়া বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তেমনই কিছু কথা বলা দরকার মেয়েটির সঙ্গে ভাবল ছেলেটি। দশ মিনিট আগে এসেছে সে। কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি আসেনি। খুব সুন্দর সকাল। এই শীত সকালে রোদ যেন গলিত সোনা। ঝরে পড়ছে। চারিদিক মুখরিত হয়ে আছে। মেয়েটি এল। যেমন সে আসে। তবে তার আসাটা কোনও দিন দেখেনি সে। তার আসতে আসতেই বাস চলে আসে। আজ বহু কষ্টে সে দশ মিনিট আগে এসেছে। কিন্তু কী বলবে সে। ছেলেটি উশখুশ করল। তার পর এগিয়ে এল মেয়েটির কাছে। মেয়েটি দীর্ঘ চোখে তাকিয়ে থাকল। সরে গেল না। সঙ্কুচিত হল না। ছেলেটি মেয়েটির গভীর চোখের দিকে তাকিয়ে ভাবল। ওই চোখ দুটোকে কী বলা যায়, তার ভাবনা, তার স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা। তাকে সব সময় বুকে করে নিয়ে হাঁটার কথা। অদ্ভুত সংলাপের প্রলাপ বকে যাওয়া সারা দিন। নষ্ট হয়ে যাবে না এই সকাল! এই মুহূর্ত। এই ভাল লাগা। যাপিত স্বপ্ন হয়তো চুরমার হবে। তার থেকে শুধু ভাল লাগাটুকু থাক না। পানসে এই জীবন। একই রকম রোজ...
বাসটা এল। রোজকার মতন মেয়েটি আগে উঠে গেলে ছেলেটি উল্টো দিকে হাঁটতে লাগল...
রোদ, রোদ ভীষণ এক শীত-রোদের মধ্য দিয়ে...

ছবি: সায়ন চক্রবর্তী

Probondho Rabibasariyo Magazine



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.