রবিবাসরীয় প্রবন্ধ
জিরো ডায়াল

আন্ডা সেল
পুলিশের সঙ্গেই জীবন রহিমের। রহিমদের। মুম্বই আন্ডারওয়ার্ল্ড আর পুলিশের মধ্যে সেতু তারা। ইনফর্মার। মুম্বই পুলিশের ভাষায় জিরো ডায়াল। পুলিশ অফিসারদের মোবাইলের ফোনবুকে তাদের নম্বর থাকবেই। প্রয়োজনে রাত তিনটের সময়েও বেজে উঠতে পারে ফোন। যেমন রহিমের ফোন বেজেছিল এক রাতে। লাইনের উল্টো দিকে ক্রাইম ব্রাঞ্চের সিনিয়ার ইন্সপেক্টর নীতিন পওয়ার।
রহিমের ভুরু কুঁচকে যায় নম্বর দেখেই। ইন্সপেক্টর পওয়ার লোক বিশেষ সুবিধের নয়। যত টাকায় রফা হয়, তার অর্ধেকও ঠেকায় না বেশির ভাগ সময়। কিন্তু তার ফোন না ধরে উপায়ও নেই রহিমের। থানায় তুলে নিয়ে যাবে, ফালতু কেসে কয়েক বছরের জন্য আন্ডা সেলে ভরে দেবে। আন্ডা সেল হল মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেলের বিশেষ ওয়ার্ড, মুম্বইয়ের দাগিরা সেই সেলেরই বাসিন্দা হয় মাঝেমধ্যে।
রহিম ফোন ধরে। ইন্সপেক্টর পওয়ারের গলা গম্ভীর। সোজা কাজের কথায় আসেন ইন্সপেক্টর। বলেন, এখনই কিছু খবর দে। বস ঝাড়ছে, অনেক দিন কোনও কেস নেই। দু’একটাকে ঠুকতেই হবে। রহিম বলে, কাল সকালে জানাচ্ছি স্যর। মুরগি আছে, হয়ে যাবে।
কেস ধরে দেওয়া রহিমদের কাজ। মানে, মুম্বইয়ের কোথায় কে কী করার প্ল্যান করছে, সেই খবর জোগাড় করে ইন্সপেক্টর পওয়ারদের হাতে তুলে দেওয়া। তার বদলে, টাকা। টাকা ছাড়া জিরো ডায়ালদের আর কিছুর প্রতি আনুগত্য নেই। কোনও গ্যাঙের প্রতি নয়, পুলিশের প্রতি তো নয়ই। কত টাকা, নির্ভর করছে ইনফর্মারের ওপর। নতুনরা হাজার দু’হাজারেই খবর দেয়, রহিমরা পঞ্চাশ হাজারও পায়। রহিম জানে, পওয়ার এখন যে গাড্ডায় পড়েছে, টাকাটা সমস্যা নয়। লাখখানেক আদায় করাই যাবে। শুধু পাক্কা খবর চাই।
খবরও জুটে যায়। রহিমেরই বন্ধু, মুম্বইয়ের এক ঝড়তিপড়তি কাগজের ক্রাইম রিপোর্টার আমজাদ ফোন করে। বলে, ভোপাল থেকে সানি মুম্বই আসতে চাইছে। আহমেদকে ফোন করেছে থাকার জায়গার জন্য। মুম্বইতে কয়েকটা ডাকাতি করেই ফিরে যাবে। সানির ধারণা, আমজাদ মুম্বই আন্ডারওয়ার্ল্ডের লিঙ্কম্যান। তাকে ধরলেই মুম্বইয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। রহিম খবরটা লুফে নেয়। বলে, আসতে বলে দাও। আমি থাকার ব্যবস্থা করছি।
পর পর দুটো ফোন যায়। আমজাদ সানিকে ফোন করে, আর রহিম ইন্সপেক্টর নীতিন পওয়ারকে। তার পর এক চল-এ ঘর ভাড়া করে, দুটো সস্তা হুইস্কির বোতল কিনে আনে। সানিদের প্রচুর মদ খাওয়ানো জরুরি। দু’দিনের মধ্যে সানি আর একটা ছেলেকে সঙ্গে করে এসে পৌঁছয়। স্টেশনে তাদের আনতে যায় আমজাদ আর রহিম। আমজাদ রহিমকে দেখিয়ে বলে, এ তোমাদের পার্টি দেখিয়ে দেবে। আজ রাতটা ফুর্তি করে নাও, কাল থেকে অ্যাকশন। মেশিন সঙ্গে আছে? সানি হাসে। বলে, চারটে দেশি আছে। আমজাদ মাথা নাড়ে।
রহিম সানিকে বলে, মুম্বইয়ের ডান্স বারের মেয়েদের দেখেছ? ছমক ছল্লো। যাবে নাকি? সানির চোখে চকচক করে ওঠে লালসা। মদ আর মেয়ে, এই দুটোই বড্ড ভাল লাগে যে! বারে বসে মদ খেতে থাকে সানিরা দু’জন, আর রহিম। রহিম সতর্ক, তার মাতাল হলে চলবে না, কিন্তু সানিদের মাতাল করতেই হবে। চোখের ইশারায় একটা মেয়েকে ডাকে রহিম, সানির দিকে দেখিয়ে দেয়। এই মেয়েরা জানে, কী ভাবে শরীর আর মদের মিশেলে মাতাল করে তুলতে হয় কামুক পুরুষদের। একটু বাদেই সানির কথা জড়িয়ে যেতে থাকে। রহিম কয়েক মুহূর্তের জন্য উঠে যায়। একটা ফোন সেরেই টেবিলে ফিরে আসে। আরও খানিক পরে, রাত বারোটা নাগাদ, সানিদের সেই ভাড়া করা ঘরে পৌঁছে দেয় সে। বলে, কাল খবর নিয়ে আসব। ঘরে মদের বোতল দুটো এমন ভাবে সাজিয়ে রাখা যে সানির চোখ পড়ে যায় সে দিকে। রহিম মুচকি হাসে। তার পর বেরিয়ে যায়। আজ রাতে রহিমের ঘুমনোর উপায় নেই। আড়াইটের সময় তাকে তুলে নেবে ইন্সপেক্টর পওয়ারের জিপ।
রাত তিনটের সময় রহিম ফের কড়া নাড়ে সানির দরজায়। মিনিটখানেক পর দরজা খোলে সানি। চোখ জড়ানো, খালি গা। রহিমকে দেখে অবাক সানি প্রশ্ন করে, এখন কী ব্যাপার? রহিম ঘরে ঢুকে আসে। বলে, এখনই অ্যাকশনে যেতে হবে। কাছাকাছিই একটা গয়নার দোকানের ক্যাশে পনেরো লাখ পড়ে আছে। আজ রাতেই তুলতে হবে। সানি বলে, এখন? রহিম ঠান্ডা গলায় উত্তর দেয়, এখনই। তৈরি হয়ে নাও। মেশিন সঙ্গে নিয়ো। সানি অনিচ্ছুক পায়ে জামাকাপড় পরতে এগোয়, আর তখনই দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে পড়ে ছ’জন। রহিম তাদের দিকে না তাকিয়েও জানে, খোলা রিভলভার হাতে সামনে দাঁড়িয়ে ইন্সপেক্টর পওয়ার, আর তার পিছনে পজিশন নিয়ে পাঁচ জন কমান্ডার, মানে ক্রাইম ব্রাঞ্চের কনস্টেবল। রিভলভারের নল সানির থেকে এক ইঞ্চিও না সরিয়ে ইন্সপেক্টর রহিমকে প্রশ্ন করেন, তু কৌন? রহিম বলে, দোস্ত হ্যায় সাব। ইন্সপেক্টর বলেন, তুঝে ভি ঠোক দু, ইয়া আভি ভাগেগা? রহিম কোনও কথা না বলে বেরিয়ে যায়।
পর দিন জানা যায়, মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ ভোপালের দুই কুখ্যাত ডাকাতকে গ্রেফতার করেছিল। তাদের থানায় নিয়ে আসার পথে তারা পুলিশের ওপর গুলি চালানোর চেষ্টা করে। আত্মরক্ষা করতে পুলিশও গুলি চালায়। দুই দুষ্কৃতীই নিহত।
প্রথম খুন
রহিম প্রথম খুনও করেছিল পুলিশের সামনেই। ১৯৯৩ সালে। তখন তার বয়েস ৩৬ বছর। পুলিশের ইনফর্মার হিসেবে তখনই বেশ প্রতিষ্ঠিত রহিম। মুম্বই পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অতুল শর্মা ডেকে পাঠান রহিমকে। মধ্যপ্রদেশের ড্রাগ মাফিয়াদের একটা গ্যাংকে খতম করতে হবে। পুলিশকে সেই গ্যাঙের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব রহিমের। রহিম রাজি হয়ে যায়। পাঠানওয়াড়ির খানের এই গ্যাংকে রহিম চেনে। তারাও রহিমকে চেনে। বিশ্বাসও করে। সেই বিশ্বাসেরই ফায়দা ওঠাতে হবে।
রহিম খানকে জানায়, বান্দ্রায় জগার্স পার্কের সামনে মাল তুলবে সে। হেরোয়িন। বড় অর্ডার। পাঠান নিজেই হাজির হয় মাল নিয়ে। সঙ্গে বিশ্বস্ত অনুচর কালিয়া। কালিয়ার আসল নাম মুম্বই আন্ডারওয়ার্ল্ডের অলিগলিতে হারিয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। খুন হয়ে যাওয়া গ্যাংস্টার কালিয়া অ্যান্টনির সঙ্গে চেহারায় মিলের জন্য তার নাম হয়ে গিয়েছে কালিয়া। ছ’ফুটের ওপর লম্বা, পেশিবহুল কালিয়ার শরীরে দানবের মতো শক্তি, আর কেউটের ছোবলের দ্রুততা। মুম্বই আন্ডারওয়ার্ল্ডে খুব দ্রুত ত্রাস হয়ে উঠছে পাঠান খানের এই অনুচর।
ক্রাইম ব্রাঞ্চের মারুতি ওমনিতেই বান্দ্রায় পৌঁছয় রহিম। সঙ্গে সাব-ইন্সপেক্টর রাজেশ সবন্ত, আর কনস্টেবল দয়ানন্দ বেলকর। দু’জনের হাতেই টাইটান টাইগার পয়েন্ট থ্রি এইট রিভলভার। কার্টার রোডে দুটো মারুতি জিপসিতে অপেক্ষা করছে আরও পুলিশ, যদি খান পালাতে চেষ্টা করে, তবে তাকে ধরার জন্য। সাব-ইন্সপেক্টর সবন্ত একটু আড়ালে গাড়ি থামান। রহিম গাড়ি থেকে নামে। তার পরনে নীল জিন্স, সাদা-কালো চেক শার্ট। প্রায় পুলিশের মতোই দেখাচ্ছে তাকে, শুধু পায়ের জুতোর রং কালো। মুম্বই পুলিশের জুতো গাঢ় খয়েরি রঙের।
গাড়ি থেকে নেমে সোজা পাঠানের দিকে হেঁটে যায় রহিম। সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, মাল এনেছ? ইতিবাচক মাথা নাড়ে পাঠান। রহিম মাল দেখাতে বলে। পাঠানের এস্টিমের ডিকি থেকে বস্তা বার করে কালিয়া। রহিম প্যান্টের হিপ পকেট থেকে রামপুরি চাকু বার করে সোজা বস্তায় বসিয়ে দেয়। বস্তা ফুটো হয়ে গুঁড়ো বেরিয়ে আসে। দু’আঙুলে পাউডার তুলে নাকের কাছে নেয় রহিম। শোঁকে। তার পর দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ওমনির দিকে দেখিয়ে দেয় কালিয়াকে।
আর কয়েকটা মুহূর্ত, রহিম জানে। এর পরই হয় কালিয়া মারা যাবে সাব ইন্সপেক্টর সবন্তের হাতে, নয়তো রহিম নিজেই খালাস হয়ে যাবে খানের গুলিতে। জীবন আর মৃত্যুর মাঝে ফাঁক ঠিক কতটা কম, বিশেষ করে মুম্বই আন্ডারওয়ার্ল্ডে, এই মুহূর্তগুলোয় টের পাওয়া যায়। খানকে হাত নেড়ে গাড়ির দিকে এগোতে থাকে রহিম। এ কী, এখনও রিভলভার বের করেনি কেন সাব ইন্সপেক্টর সবন্ত? দেরি করছে কেন? এক সেকেন্ডের এদিক ওদিকে জীবনমৃত্যুর হিসেব বদলে যেতে পারে, সেটা কি ভুলে গেল ক্রাইম ব্রাঞ্চের এত দিনের অফিসার? ভাবতে ভাবতেই দ্রুত পায়ে এগোতে থাকে রহিম। দৌড়নো যাবে না। খানের সন্দেহ হলে মুহূর্তে ঝাঁঝরা হয়ে যাবে তার দেহ।
নিজের দেরির কথা বুঝতে পারে সবন্ত। পিঠের দিকে প্যান্টে গুঁজে রাখা রিভলভার টেনে বের করতে যায়। কিন্তু ততক্ষণ কালিয়া বিপদ বুঝতে পেরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সবন্তের ওপর। অসীম বলশালী সে, আর শয়তানের মতো ক্ষিপ্র। সবন্তকে গাড়ির দেওয়ালে ঠেসে ধরে কালিয়া। তার চোখে খুন। এ বারই নিজের রিভলভার বের করে প্রথমে সবন্তকে মারবে, তার পর রহিমকে। রহিমের সঙ্গে চোখাচোখি হয় কালিয়ার। এই দৃষ্টি রহিমের ভুল হওয়ার নয়। কনস্টেবল বেলকরের হাতে রিভলভার, কিন্তু সে-ও যেন গুলি চালাতে ভুলে গিয়েছে।
নিশ্চিত মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে রহিমের হাত যেন তার অজান্তেই বেলকরের রিভলভার কেড়ে নেয়। তার পর কালিয়ার মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তবু কালিয়া সবন্তকে ছাড়ে না। রহিম আবার গুলি চালায়। এ বার কালিয়ার বুকে। গাড়ির দেওয়াল ফুঁড়ে গুলি বেরিয়ে যায়। কালিয়ার দেহ থেকে রক্ত ছিটকে আসে রহিমের চোখেমুখে। অত বড় শরীরটা গাড়ির মেঝেয় পড়ে যায়। দয়ানন্দ গাড়ি চালিয়ে দেয়। রিভলভার হাতে বসে থাকে রহিম।
এত দিন সে শুধু খবরি ছিল, এ বার থেকে খুনিও। এই দুনিয়া থেকে বেরোনোর আর রাস্তা রইল না।

নানা কম্পানি
রহিম ইনফর্মার। তবে, শুধু পুলিশের নয়। ছোটা রাজনের গ্যাঙেরও। নানা কম্পানি। ডি কম্পানির সবচেয়ে কড়া আর খতরনাক প্রতিদ্বন্দ্বী। নানা কম্পানিকেও খবর জোগাত রহিম। আর্থার রোডের আন্ডা সেলেই নানা কম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ রহিমের। তার পর সে ক্রমে কাছাকাছি এসেছে দলের, নেতাদের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছে। এমনি এমনি নয়, তার খবরের গুণে।
এক দিন সন্ধেয় হাতে কিছু ফালতু টাকা এসেছে রহিমের। বাড়ি ফেরার আগে তাই সে ঢুকে পড়ে আন্ধেরির একটা ডান্স বারে। জায়গা বেছে বসে, যেখানে বসলে বারের দরজার দিকে নজর রাখা যায়। আন্ডারওয়ার্ল্ডের থাম্ব রুল এটাই কখনও শত্রুর দিকে পিছন ফিরে বোসো না। হাপিস হয়ে যাবে।
সস্তা হুইস্কিতে চুমুক দিতে দিতে চারিদিকে অলস চোখ বোলায় রহিম, বোঝার চেষ্টা করে কোথাও কোনও খবর আসে কি না। একটু পরেই বারের দরজা ঠেলে ঢুকে আসে একটা বয়স্ক শরীর। একটু ঝুঁকে পড়া সামনের দিকে, কিছুটা ক্লান্তও।
রহিম চিনতে পারে। চাচা। মুম্বইয়ের নামকরা ইনফর্মার। এক সময় বম্বে পুলিশের সব বড় অফিসারের মুখস্থ থাকত চাচার ফোন নম্বর। আর চাচার অবিশ্বাস্য স্মৃতিশক্তিতে ধরা থাকত আন্ডারওয়ার্ল্ডের ছোট-বড় সবার হালহকিকত। রহিম হাত তুলে চিৎকার করে ডাকে, চাচা, ইধার আইয়ে।
চাচা রহিমের টেবিলের দিকে এগিয়ে আসে। রহিমের মুখের দিকে তাকায়। বলে, তোমায় তো চিনতে পারছি না। বুড়ো হয়েছি তো, এখন আর কারও নাম, চেহারা মনে থাকে না। রহিম হাসে। নিজের নাম বলে। জানায়, বছর কয়েক আগে ক্রাইম ব্রাঞ্চেই আলাপ হয়েছিল দু’জনের। চাচা বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ, এ বার চিনেছি। রহিম বলে, চাচা কী খাবেন? চাচা উত্তরে হাসে। বলে, বিষ ছাড়া সব খেতে পারি!
মদ খেতে খেতে দু’জনের গল্প চলে। একথা সেকথায় রহিম জিজ্ঞেস করে, আন্ধেরিতে কেন এসেছিলেন? চাচা বলে, কুরলাকে দেখতে। এখানেই হাসপাতালে ভর্তি। রহিমের শিরদাঁড়া মুহূর্তে টানটান। কুরলা মানে কি দাউদ ইব্রাহিমের ডান হাত কুরলা? মুখে কিছু জিজ্ঞেস না করেই চাচার মুখের দিকে তাকায় রহিম। চাচা বলে, আর ওহি, মুচ্ছড়কা খাস আদমি। মুম্বই ব্লাস্টমে জিসকা নাম হ্যায়। মুম্বইয়ের অন্ধকার দুনিয়ায় মুচ্ছড় মানে যে দাউদ ইব্রাহিম, সেটা ক্লাস টু’র বাচ্চারাও জানে। রহিম টের পায়, লাখ টাকার খবর এসে গিয়েছে তার কাছে, না চাইতেই। মুখটাকে যদ্দুর সম্ভব নির্বিকার রাখে রহিম। বলে, তাই নাকি? কুরলা হাসপাতালে? আমিও এক বার দেখে আসব তবে। কোথায় আছে? চাচা বলে, বেলভিউ হাসপাতাল, মেল ওয়ার্ড, চার নম্বর বেড।
আর দু’একটা কথার পরই রহিম উঠে পড়ে। এক্ষুনি ঠিক জায়গায় খবর পৌঁছে দিতে হবে। চাচা বলে, চললে? রহিম হাসে। চাচা একটু ইতস্তত করে বলে, শ’দুয়েক টাকা হবে? একটু হাতটান যাচ্ছে। রহিম কোনও কথা না বলে পার্স বের করে, দুটো একশো টাকার নোট চাচার হাতে গুঁজে দেয়। চাচা ধন্যবাদ জানায়। রাস্তায় নেমে রহিম নিজের মনেই হাসে। চাচা বুঝতেও পারল না, দুশো টাকায় কয়েক লাখ টাকার খবর দিল।
রহিম বেলভিউ হাসপাতালের দিকে হাঁটতে থাকে। তার মনে তুমুল দোলাচল চলছে। নানা কম্পানিকে এই খবর পৌঁছে দেওয়া মানে কুরলা নির্ঘাত মারা যাবে। আর, খবর কে দিয়েছে, সেটা দাউদ ভাইয়ের কানে পৌঁছলে রহিমের জীবনেরও কোনও গ্যারান্টি থাকবে না। কিন্তু, এই তো জীবন। মৃত্যুকে মাথায় নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে। হাসপাতালে পৌঁছে চুপচাপ মেল ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ে রহিম। এদিক ওদিক তাকিয়ে তার পর আড় চোখে দেখে নেয়, চার নম্বর বেডে নির্ভুল কুরলা। পাশে দুটো ছেলে। বডিগার্ড, নিজের মনেই বলে রহিম। তার পর, বেরিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়। কাল সকালে অনেক কাজ।
পর দিন সকালে সোজা থানে জেল। ভিকির সঙ্গে দেখা করতে হবে। নানা কম্পানির দু’নম্বর লোক এই ভিকি। ছোটা রাজনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত লেফ্টান্যান্ট। দাউদকে মারার পরিকল্পনা নিয়ে সোজা পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল ভিকি।
ভিতরে খবর যায়। একটু বাদেই বেরিয়ে আসে ভিকি। রহিম বলে, জয় হিন্দ, ভাই। নানা কম্পানির সম্বোধন হল জয় হিন্দ। দেশের স্বার্থবিরোধী, এমন কোনও কাজ নাকি নানা কম্পানি করে না। কথাটা কতটা সত্যি, আর কতটা মিথ্যে, রহিম জানে না। জানার দরকারও বোধ করে না। তার দরকার টাকা। সেটুকু হলেই হল। ভিকি বলে, বোল, বাত ক্যা হ্যায়? রহিম বলে, কাটিং হ্যায় ভাই। পাক্কা খবর আছে। কুরলা বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি। আমি নিজের চোখে দেখে এসেছি। ভিকি সরু চোখে তাকায়। বলে, গলতি নেহি হুয়া, না? রহিম বলে, কোনও চান্স নেই। ভিকি মুহূর্তে হিসেব কষে নেয়। বলে, আমি খবর দিয়ে দিচ্ছি, তুই রোহিত বর্মার সঙ্গে কথা বলে নে। তুই রোহিতকে নিয়ে জায়গা দেখিয়ে দিবি। ফোন নম্বর নিয়ে যা। ম্যায় কুরলাকা ওয়ার্যান্ট নিকালতা হু।
আন্ডারওয়ার্ল্ডে ওয়ার্যান্ট মানে মৃত্যু পরোয়ানা। সে হুকুম দেওয়ার অধিকার আছে একমাত্র নেতার। ছোটা রাজনের।
বেলভিউ হাসপাতালের সামনে রোহিত বর্মার গাড়ি থামে। জগ্গুকে নিয়ে নামে রোহিত। সোজা পৌঁছে যায় মেল ওয়ার্ডে। কুরলাকে চিনতে ভুল হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। বিছানায় বসে সকালের চায়ে চুমুক দিচ্ছে কুরলা। একটু অসতর্কই। রোহিত কোমরে গুঁজে রাখা পয়েন্ট থ্রি এইট ক্যালিবারের রিভলভার বার করে, ম্যাগাজিন খালি করে দেয় কুরলার বুকে। তার পর, স্তম্ভিত মেল ওয়ার্ড থেকে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে পড়ে, গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি মিলিয়ে যায় মুম্বইয়ের রাস্তায়।
তার একটু পরেই রোহিতের মোবাইলে ফোন আসে। দু’চারটে কথার পর রহিমের দিকে ফোনটা এগিয়ে দেয় রোহিত। বলে, বাত কর, নানা। ছোটা রাজনের ফোন! রহিম হতবাক। ফোন কানে লাগায় সে। ও পার থেকে রাজন বলে, সহি কাম কিয়া, রাজা। যো আপনি মা কা নহি হো সাকা, ও গদ্দার হ্যায়। দেশের সঙ্গে বেইমানির এটাই শাস্তি।
ফোন কেটে যায়। রহিম বুঝতে পারে, আন্ডারওয়ার্ল্ডে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল সে।
ছবি: অনুপ রায়
First Page Rabibasariyo Golpo


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.