টানা বর্ষায় জল বাড়ছে ডুয়ার্সের নদীগুলিতে
টানা বৃষ্টি এবং তিস্তা ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ায় ডুয়ার্সের সমস্ত নদীতে জল বাড়তে শুরু করেছে। শুক্রবার সকাল থেকে বিপদসীমা ছুঁয়ে বইতে শুরু করেছে তিস্তা। জলঢাকায় হলুদ সঙ্কেত জারি হয়েছে, কালজানি নদীতেও অত্যধিক পরিমাণে জল বাড়তে শুরু করেছে। জলপাইগুড়ি শহর ঘিরে থাকা তিস্তা নদীবাঁধের তিনটি স্পার ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবারের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু না হলে জেলা সদরে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে সেচ দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের অসংরক্ষিত এলাকায়। প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ফালাকাটায় ভেসে গিয়েছে জাতীয় সড়কের উপরের বুড়ি তোর্সা নদীর দুটি বাঁশের সাঁকো। বৃহস্পতিবার রাতে ডুয়ার্সের কুমারগ্রামের তুরতুরি ঝোরার জলের তোড়ে ঢোকসা বাঁধের ৩০ মিটার এলাকা ভেঙে গিয়েছে। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তুরতুরি খণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫টি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তুমুল বৃষ্টিতে ডুয়ার্সের সমস্ত নদী ফুঁসতে শুরু করেছে।
ময়নাগুড়ির দক্ষিণ মরিচবাড়িতে তিস্তার জলে বন্দি ৫২টি পরিবার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় বানারহাটে এই মরসুমের রেকর্ড পরিমাণ ৩২১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বানারহাটের পরেই মালবাজারে ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হযেছে। প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে সিকিম এবং উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায়। এই বৃষ্টির জের সরাসরি এসে পড়েছে জলপাইগুড়ি জেলা সদরে। অত্যাধিক বৃষ্টির কারণে তিস্তা ব্যারেজ থেকে শুক্রবার সকাল ৬ টায় ১৬০৪ কিউবিক মিটার জল ছাড়া হয়। তার দু ঘন্টা পরে সকাল ৮টা থেকে পর পর তিন বার ১৫৫৭ কিউবিক মিটার করে জল ছাড়া হয়। ফলে দোমহনি এলাকা থেকে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া এলাকা দিয়ে তিস্তা নদী বিপদসীমা ছুঁয়ে বইছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশন সুত্রে জানা গিয়েছে, তিস্তার সংরক্ষিত এলাকায় অর্থাৎ যেখানে নদীবাঁধ রয়েছে সেখানে নদীবাঁধের ৮৬.৩০ মিটার উচ্চতাকে বিপদসীমা বলে ধরা হয়। শুক্রবার দুপুরের পর ৮৬.১৯ মিটার উচ্চতা দিয়ে তিস্তা নদী বইছে। জল ক্রমাগত বাড়তে থাকায় জেলা প্রশাসন থেকে পুরসভা সকলকে সর্তক করে দেওয়া হয়েছে। সংরক্ষিত এলাকায় লাল সঙ্কেত জারি হতে পারে বলেও জানা গিয়েছে। সেচ দফতরের সহকারী বাস্তুকার কেশবরঞ্জন রায় বলেন, “তিস্তার জল প্রায় বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে। সংরক্ষিত এলাকার বিবেকাকন্দপল্লি সহ কিছু এলাকায় নদীর জল ঢুকে পড়েছে। তবে তিস্তা বাঁধের কিছু এলাকায় আগে থেকে কাজ শুরু করে রাখায় এবারে খানিকটা সামলে নেওয়া গিয়েছে। তবে দ্রুত বাঁধের বেশ কিছু এলাকায় মেরামতির কাজ শুরু করতে হবে।” প্রশাসনের তরফে ত্রাণের কাজের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ভর বৃষ্টিতে জলপাইগুড়ি শহরের মহামায়া পাড়া, পান্ডাপাড়া সহ বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে অবশ্য জল নেমে গিয়েছে।
বৃষ্টিতে জলমগ্ন জলপাইগুড়ি শহরের পান্ডাপাড়া এলাকা। ছবি: সন্দীপ পাল।
ফালাকাটায় বুড়ি তোর্সা নদীর দুটি বাঁশের সাঁকো উড়ে যাওয়ায় এদিন সকাল থেকে আলিপুরদুয়ার মহকুমা শহরের সঙ্গে ফালাকাটার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফালাকাটার বিডিও সুশান্ত মণ্ডল উদ্যোগী হওয়ার পরে নির্মীয়মান কাঠের সেতু দিয়ে লোক পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়। বিডিও বলেন, “নির্মীয়মান সেতুর উপর দিয়ে লোকজন পারাপারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গাড়ি চলাচল না করলেও যাতে তার উপর দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স পারাপার করানো হয় সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।” কুমারগ্রামের তুরতুরি ঝোরার জলের তোড়ে ঢোকসা বাঁধে ৩০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় তুরতুরি খণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের মহাবীর লাইন, দশালিয়া লাইন, নয়া বস্তি, খেরবন্দি লাইন এবং হাতিপোতার ৩ নম্বর কলোনির ৩ শতাধিক পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। সকালের দিকে জল নামতে শুরু করায় এলাকার বেশ কিছু পরিবারকে নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এলাকার পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য খেমপ্রসাদ শর্মার অভিযোগ, গত বছর ওই বাঁধের একাংশ ভেঙে যায়। মেরামত না-হওয়ায় এ বার নতুন করে বাঁধ ভেঙেছে। এখনই মেরামতির কাজে নামা না-হলে বড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। পঞ্চায়েত প্রধান সুচিতা প্রধান জানান, বিষয়টি সেচ দফতরের কর্তাদের জানানো হয়েছে। সেচ আধিকারিক প্রণব সরকার জানান, ঝোরা-বাঁধ মেরামতি করার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তাদের জানানো হয়েছে।
Previous Story Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.