পর্যটনে বরাদ্দ ৩২ কোটি
দার্জিলিং-জট কাটাতে সক্রিয় প্রধানমন্ত্রী
দার্জিলিং সমস্যার হাল খুঁজতে এ বার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ নিজেই আসরে নামলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি মেনে আজ প্রধানমন্ত্রীও পাহাড়কে কাছে টানতে উন্নয়নের বার্তাই দিয়েছেন। দার্জিলিঙের পর্যটন পরিকোঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ হয়েছে ৩২ কোটি টাকা।
আজ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি টি কে এ নায়ার প্রায় ছ’টি মন্ত্রকের সচিব ও শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে দার্জিলিঙের উন্নয়ন নিয়ে বৈঠক করেন। পাহাড়ে যে সমস্ত উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ চলছে, তার বিস্তারিত পর্যালোচনা হয়। দ্রুত সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় আজ একগুচ্ছ নতুন প্রকল্পের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই গোটা বৈঠকটাই এমন সময়ে হয়েছে যখন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম অনুপস্থিত। ত্রিপাক্ষিক বৈঠক নিয়ে ‘গড়িমসি করার জন্য’ চিদম্বরমের ভূমিকায় খুশি ছিলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিকে মোর্চা কেন্দ্রের কাছে পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত প্যাকেজের দাবি জানানো হয়। চিদম্বরম যখন রাশিয়া-সফরে, ঠিক তখনই সেই ‘অতিরিক্ত প্যাকেজ’ নিয়ে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দার্জিলিংয়ের পর্যটনে জোর দিয়েছিলেন মমতা। আজকের বৈঠকে দার্জিলিঙের পর্যটন পরিকাঠামোর উন্নয়নে ৩২ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়েছে। পাশাপাশি পাহাড়ে শিল্পায়নের জন্য কেন্দ্র চাইছে, রাজ্য সরকার পাহাড়ে শিল্পের পরিকাঠামো ও শিল্প-গুচ্ছ গড়ে তুলুক। তাতে কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্য করবে। একই ভাবে দার্জিলিঙে রাজ্য সরকার বা অন্য কোনও বেসরকারি সংস্থা নতুন মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তুলতে চাইলে, তাতেও কেন্দ্র সাহায্য করবে। বিশ্বব্যাঙ্কের আনুকূল্যে ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক চওড়া করার কাজ হবে বলেও আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় সড়ক মেরামতের জন্যও ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করছে কেন্দ্র। কার্সিয়াং ও শিলিগুড়ির পলিটেকনিক দু’টির মানোন্নয়নেও কেন্দ্র অর্থ সাহায্য করবে। শিলিগুড়িতে মহিলাদের হস্টেল তৈরিতে ৫০ লক্ষ টাকা এককালীন অর্থসাহায্য দিচ্ছে কেন্দ্র।
রাজ্যের সঙ্গে মোর্চার দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পর থেকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে যত দ্রুত সম্ভব ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়ে আসছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্য-মোর্চা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির সাংবিধানিক ও আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখে নিতে চাইছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এরই মধ্যে আবার নতুন স্বশাসিত পরিষদের জন্য অতিরিক্ত প্যাকেজ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি লেখেন মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। সেখানে পাহাড়ের জন্য সড়ক পরিকাঠামো ও পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন থেকে শুরু করে নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন পর্যন্ত একগুচ্ছ দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে রাজ্যের মতামতও জানতে চাওয়া হয়। মুখ্যসচিব সমর ঘোষ তা জানিয়েও দেন। রাজ্যের মতামত হাতে পাওয়ার পরেই আজ প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় বৈঠক ডাকে।
রাজ্য সরকার তথা মোর্চা নেতৃত্বের দাবি ছিল, পাহাড়ে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মতো বিশেষ ছাড় দেওয়া হোক। আজকের বৈঠকে কেন্দ্রের শিল্পোন্নয়ন দফতরের কর্তারা জানান, পাহাড়ে কাঁচা মাল ও উৎপাদিত দ্রব্য নিয়ে পরিবহণের ক্ষেত্রে মোট খরচের ৭৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয়। কিন্তু আরও বিনিয়োগ টানার জন্য শিল্পের পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। অনেকগুলি ছোট ছোট শিল্পকে নিয়ে ক্লাস্টারও তৈরি করা যায়। এ বিষয়ে রাজ্যকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক দুই লেন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক মাসের মধ্যেই এর সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি হয়ে যাবে। বিশ্বব্যাঙ্কের আনুকূল্যে কাজ শেষ হতে সময় লাগবে তিন থেকে চার বছর। দার্জিলিঙের পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়নে যে ৩২ কোটি টাকার প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে, তার কাজ শেষে পর্যটন শিল্প আরও চাঙ্গা হবে বলে মনে করছে মনমোহন-সরকার। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বক্তব্য, রাজ্য সরকার আরও নতুন প্রকল্প নিয়ে আসুক, সেখানেও কেন্দ্র অর্থসাহায্য দেবে।
পাহাড়ে পানীয় জলের সমস্যাও যথেষ্ট গুরুতর বলে মনে করছে কেন্দ্র। দার্জিলিং শহরে পানীয় জলের সমস্যা তীব্র। গ্রামাঞ্চলের জন্য ৬০০টি জল সরবরাহ প্রকল্প অনুমোদিত হলেও তার মধ্যে মাত্র ৪৪টির কাজ চলছে। তবে গ্রামের ৯১ শতাংশ মানুষ এবং তফসিলি জাতির ৭৮ শতাংশ মানুষই নিরাপদ পানীয় জল পাচ্ছেন। কিন্তু ৮৮টি এলাকায় এখনও পানীয় জল পৌঁছয়নি। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। যেখানে পানীয় জল পৌঁছয়নি, সেখানে জল সরবরাহের ক্ষেত্রে কেন্দ্র অনুদান দেবে বলে ঠিক হয়েছে। দার্জিলিংয়ে একটি ১০০-আসন বিশিষ্ট মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। নতুন মেডিক্যাল কলেজের দাবি পর্যালোচনা করে ঠিক হয়েছে, তা তৈরি হলে কেন্দ্র সাহায্য করবে। কার্সিয়াং ও শিলিগুড়ির পলিটেকনিকে ‘কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্প চালু রয়েছে। ওই সব এলাকায় মহিলা ও পিছিয়ে পড়ার শ্রেণির মধ্যে কর্মসংস্থান বা স্বনির্ভর প্রকল্প তৈরিতে জোর দিতে হবে বলে মনে করছে কেন্দ্র।
Previous Story Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.