|
|
|
|
‘কুৎসার রাজনীতিতে ব্যথিত’ |
হাসপাতালের কোয়ার্টার ছাড়তে চান সেলিম-পত্নী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তাঁর পরিবারকে জড়িয়ে ‘কুৎসা’র ঘটনায় ‘ব্যথিত’ হয়ে চিত্তরঞ্জন সেবা সদনের কোয়ার্টার ছেড়ে দিতে চান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিমের চিকিৎসক স্ত্রী রোজিনা খাতুন। কোয়ার্টার ছাড়ার ইচ্ছার কথা তিনি চিঠিই লিখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন। যদিও স্বাস্থ্য দফতর বা হাসপাতালের কাছ থেকে ঘর ছাড়ার জন্য কোনও লিখিত নির্দেশ বা বিজ্ঞপ্তিই তাঁরা পাননি বলে সেলিম জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, “চিকিৎসক হিসাবে আমার স্ত্রীর নামে বরাদ্দ কোয়ার্টার নিয়ে যে ভাবে কুৎসা করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমের একাংশের সাহায্যে, যে ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তাতে ব্যথিত হয়ে আমার স্ত্রী-ই ঘর ছেড়ে দিতে চেয়েছেন। কেউ কোনও নির্দেশ এখনও দেয়নি। কিন্তু অসম্মান নিয়ে তিনি ওখানে থাকতে চান না।”
চিত্তরঞ্জন সেবা সদন হাসপাতালের চার তলায় একটি কোয়ার্টারে থাকেন রোজিনা ও সেলিম এবং তাঁদের দুই পুত্র। ওই তলায় সেলিমদের কোয়ার্টারের (এস এস-১) ঠিক উল্টো দিকেই চিত্তরঞ্জন শিশুসদনের মেডিক্যাল অফিসারের জন্য একই রকম আর একটি কোয়ার্টার আছে। সম্প্রতি ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, সেলিম ও তাঁর স্ত্রী হাসপাতালের জায়গা ‘জবরদখল’ করে আছেন বলে অভিযোগ আছে। ওই বিষয়ে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট দাবি করেন। সেলিম ও রোজিনা অবশ্য সেই সময় কলকাতায় ছিলেন না। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সাংসদ সেলিমের অভিযোগ, তিনি ‘জবরদখল’ করে আছেন, সরকারি আবাসনে ‘অবৈধ নির্মাণ’ করেছেন, এই রকম নানা কথা প্রচার করা শুরু হয়। তাঁর কথায়, “কোনও তথ্য খতিয়ে না-দেখে আমার পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একতরফা কুৎসা চালানো হয়েছে। তর্কের খাতিরে আমরা যদি জবরদখল করেও থাকতাম, তা হলে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে পুলিশ আছে। উনি পুলিশ দিয়ে তুলে দিতে পারতেন! স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসাবে ওই দফতরের মাধ্যমে ঘর ছেড়ে দেওয়ার চিঠি পাঠাতে পারতেন। কিন্তু কোনও সরকারি প্রক্রিয়ার মধ্যে না-গিয়ে শুধু ব্যক্তিগত শত্রুতার রাজনীতিতে নামিয়ে আনা হল গোটা ঘটনাটিকে। ব্যথিত হয়েই ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এ ভাবে মুখ খুলতে বাধ্য হলাম।”
সেলিমদের দেওয়া নথিতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৮৯ সালের ১ জুলাই থেকে সেবা সদনের ওই কোয়ার্টার রেজিনার নামে বরাদ্দ করা হয়। তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ (নং: সিএসএস/ইএসডি/৫২০/৮৯ (৩)) জারি হয়েছিল ১৯৮৯ সালের ২৭ এপ্রিল। শর্ত ছিল, অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যখনই প্রয়োজন হবে, রোজিনা যাতে ‘ডিউটি’ করতে পারেন, তার জন্যই হাসপাতাল চত্বরে থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে। সেলিম শুক্রবার বলেন, “সরকারি নির্দেশের বলে বরাদ্দ হওয়া কোয়ার্টার জবরদখল হয় কী করে? বরাদ্দ করার যে শর্ত ছিল, সেই দায়-দায়িত্ব পূরণ হচ্ছে কি না, দেখা দরকার সেটাই। যখন প্রয়োজন, তখনই কাজ করতে পারার সুবিধার জন্যই ওই কোয়ার্টারে থাকতে দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া, ১৯৮৯ সালে যখন ওই ঘর বরাদ্দ হয়, তখন আমি সাংসদ বা মন্ত্রী কিছুই হইনি! ডিওয়াইএফআই নেতা, কাগজে নামও বেরোত না! কাজেই প্রভাব খাটিয়ে কোয়ার্টার আদায় করার প্রশ্নই নেই!”
সরকার বা স্বাস্থ্য দফতরের নোটিস পেলে কি তাঁরা কোয়ার্টার ছেড়ে দেবেন? সেলিম বলেন, “যা আসেইনি, তা নিয়ে কী বলব? বরং আমার স্ত্রী-ই কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, অসম্মান নিয়ে ওই কোয়ার্টারে থাকতে চান না। চাকরি অবশ্য করবেন।” সেলিমের দাবি, সরকারি আবাসনে তাঁরা কোনও নির্মাণই করেননি। শুধু রোগীদের পরিত্যক্ত খাট ফেলে রাখা আটকাতে ছাদে গাছের টব রেখেছেন। সেলিম বলেন, “কোয়ার্টার ছাড়লেও টবগুলো নিয়ে যাব না!” কংগ্রেসের দেশের শাসনক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকারই নেই। দেশের সুরক্ষার পক্ষেও ওরা বিপজ্জনক।” |
|
|
|
|
|