পুস্তক পরিচয় ২...
গ্রামে গ্রামে ঘুরে সংগৃহীত তথ্যভাণ্ডার
বিশিষ্ট ব্রাহ্ম সমাজ-সংস্কারক ও সাহিত্যসাধক শিবনাথ শাস্ত্রীর কন্যা হেমলতা ছিলেন যশস্বিনী লেখিকা। ডা. বিপিনবিহারী সরকারের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হওয়ার ফলে বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় বছর দু’য়েক নেপালে বসবাস করেছিলেন তিনি, সে-অভিজ্ঞতাই বই হয়ে প্রকাশিত হয় ১৯১২-য়: নেপালে বঙ্গনারী। ভূমিকা-য় হেমলতা লিখেছেন: ‘নেপালে অবস্থান কালে আমি নেপাল সম্বন্ধে “প্রবাসীতে’’ কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশ করিয়াছিলাম। তাহাতে অনেকেই কৌতূহলী হইয়া আমাকে নেপাল সম্বন্ধে অনেক প্রশ্ন করিতেন। সেই হেতু আমার এই পুস্তকখানির জন্ম।’ অনুবাদও করতেন হেমলতা। শ্রমণ একাই কাওয়াগুচি-র থ্রি ইয়ার্স ইন টিবেট-এর অনুবাদ করেছিলেন, সেটি ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় বিচ্ছিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয় ১৩২৩-১৩২৫ বঙ্গাব্দে: ‘তিব্বতরাজ্যে তিন বৎসর’। সুবিমল মিশ্রের উপযুক্ত সম্পাদনায় হেমলতা সরকারের এ-বই দু’টি একত্র হয়ে প্রকাশ পেল সম্প্রতি: নেপালে বঙ্গনারী ও তিব্বতরাজ্যে তিন বৎসর (পরিবেশক: দে’জ, ২৫০.০০)। কাওয়াগুচি-র বইটির অনুবাদ সম্পর্কে সম্পাদক জানিয়েছেন ‘এই ভ্রমণকথায় ভ্রমণপথের অবর্ণনীয় কষ্ট যেমন ফুটে উঠেছে, পদে পদে মৃত্যুর আশঙ্কা যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি শত কষ্টের মধ্যে দিয়েও অভিযাত্রিকের একমুখী লক্ষ্যও প্রকাশ পেয়েছে।... হেমলতার অনুবাদে আড়ষ্টতা নেই, বরং রয়েছে প্রাঞ্জলতা, সজীবতা ও সরসতা ও সর্বোপরি স্বাদুতা।’
প্রভাসচন্দ্র রায়ের পার্বত্য-কাহিনী (সাঁওতাল পরগনার ইতিবৃত্ত) প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩১৪-র ফাল্গুন/ ১৯০৭-এর মার্চে। এর বছর দু’য়েক আগে প্রকাশিত এফ বি ব্র্যাডলি-বার্টের বিখ্যাত দি স্টোরি অব অ্যান ইন্ডিয়ান আপল্যান্ড বইটি থেকেই মূলত তাঁর নিজের বইটি লিখেছিলেন প্রভাসচন্দ্র। বলতে গেলে তাঁর বইটি ব্র্যাডলি-বার্টের বইটিরই সংক্ষিপ্ত অনুবাদ, স্বীকারও করেছেন বইটি থেকে তিনি ‘বিশেষ সাহায্য’ নিয়েছেন। তবে বেশ কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্যও যোগ করেছেন অন্যান্য বই থেকে। সম্ভবত তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সাঁওতাল পরগনা ও সে-অঞ্চলের জনজাতির জীবনচর্যা বিষয়ে ইউরোপীয়দের জ্ঞানতৃষ্ণার ধরন-ধারণ উপলব্ধি করা এবং তৎকালীন বাঙালি সমাজকে এ-বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা। এ-সমস্তই জানা গেল সম্প্রতি বইটির প্রথম বাংলার মুখ সংস্করণ-এ (১৫০.০০), সম্পাদক সৌমিত্রশংকর সেনগুপ্ত ‘প্রসঙ্গকথা’-য় জানাচ্ছেন, ‘প্রকাশের পর একশো বছর পার হয়ে গেলেও মধ্যবর্তী সময়ে এ বইটির আলোচনা বা উল্লেখ বিরল। সাঁওতাল পরগনা বা সাঁওতাল বিদ্রোহ নিয়ে যাঁরা গবেষণা বা লেখালেখি করেছেন, তাঁদের লেখাতেও বইটির নাম চোখে পড়ে না।’ দুষ্প্রাপ্য বইটির পুনর্মুদ্রণ হওয়া জরুরি ছিল।
সুন্দরবনের ভূপ্রকৃতি, প্রাণীকুল, নদনদী, জীবজন্তু, এখানকার আদিবাসী, জীবিকা, বিনোদন, সৃষ্টিকুশলতা নিয়ে তথ্যনির্ভর আলোচনা মলয় দাসের সুন্দরবনের জনজীবন ও সংস্কৃতি-তে (অক্ষর, ১৮০.০০)। পৃথিবীর বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ অঞ্চল সুন্দরবন তার অধিবাসীদের জীবন ও সংস্কৃতি বিষয় হিসেবেই আকর্ষণীয়। উপরন্তু লেখক এ-অঞ্চলের ভূমিপুত্র, স্বভূমিকে চেনেন এত অনুপুঙ্খ ভাবে যে আলোচনায় তাঁর দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতা যেন পাঠকের অভিজ্ঞতাতেও সঞ্চারিত হয়ে যায়। ‘লেখক সংগৃহীত তথ্য ও উপাদানের উপযুক্ত সূত্রের উল্লেখ করায় এটির ডকুমেনটেশনের গুরুত্ব সবিশেষ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ এই মত প্রকাশ করেছেন বরুণকুমার চক্রবর্তী, বইয়ের ভূমিকা-য়। আর লেখক তাঁর নিবেদন-এ জানিয়েছেন, ‘সুন্দরবনের বিভিন্ন ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে সুন্দরবনবাসীর গ্রাম্য জীবন সমস্যা ও তাদের আশা, হতাশা, প্রবাদ, ছড়া, ধাঁধা, লোককথা, লোকবিশ্বাস, লোককবিতা, লোকসংস্কার ও লোক-সংস্কৃতির তথ্য সংগ্রহ করি।’ বইয়ের ছবিগুলিতেও রয়েছে তার প্রমাণ।
Previous Item Alochona Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.