পরিচয়...
তাপস মনে করেন না প্রত্যাবর্তন
নিজাম প্যালেস হস্টেলের কাঠখোট্টা একটা ঘর। যার দেওয়ালে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি।
আর পাশের ঘরে দেওয়ালে টাঙানো এক প্রৌঢ় দম্পতির ছবি। টেবিলে বুক মার্ক করা ‘সিটি অফ জয়’। পাশের ছোট টেবিলে ভগবদ্গীতা। খাটের ওপর পাতা-খোলা চিত্রনাট্য। তার মানে এক ঘরে রাজনীতিবিদ তাপস পাল, অন্য ঘরে অভিনেতা তাপস পাল? হো হো করে হেসে উঠলেন ঘরের বাসিন্দা, “আরে, না, না। সবাইকে নিয়েই তো চলতে হয়। ওটা আমার মা-বাবার ছবি। সঞ্চয়িতাও আছে।”
ক্রমাগত ফোনের বন্যা সামলাচ্ছেন সদা ব্যস্ত রাজনীতিক। এর মধ্যে ছবি নিয়ে ভাবার সময় পান কখন? “রাজনীতিতে ১৩ বছর হয়ে গেল তো। সেই ১৯৯৮ থেকে। এখন অভ্যেস হয়ে গেছে। চিত্রনাট্য নিয়ে বসি রাত সাড়ে ১০টার পর। শু্যটিং করি খেপে খেপে। এই যেমন তরুণ মজুমদারের ‘দুর্গেশনন্দিনী’র কিছুটা সারলাম।”
এক সময় তাপস-শতাব্দী জুটি পর্দা কাঁপিয়েছিল। এখন দু’জনেই রাজনীতিতে। রাজনৈতিক জুটি হিসেবে নিজেদের কেমন মনে হয়? “দেখুন, দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা প্রেক্ষাপট। তা ছাড়া, রাজনৈতিক জুটি বলে কিছু হয় না। পর্দায় আমাদের জুটির জনপ্রিয়তা তৈরি করেছেন দর্শক।
রাজনীতিতে হাইকম্যান্ড আছেন। তবে নিশ্চয়ই মানুষ আমাকে আর শতাব্দীকে চাইছেন, সেই জন্যই আমরা একসঙ্গে প্রচার করছি,” বলছেন তাপস। রাজনৈতিক ব্যস্ততার জন্যই সম্ভবত এখন অভিনেতা সত্তার থেকে রাজনৈতিক সত্তাটাই বেশি পরিচিত। “হতে পারে। কিন্তু আমার পরিচিতি সব চেয়ে আগে এক জন অভিনেতার, তার পর বিধায়কের এবং সব শেষে সাংসদের,” বলছেন তাপস। তবে মনের মতো ছবি পেলে এখনও সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেন না, “এখন উল্টো-পাল্টা ছবি করি না। বেছে করি।”
সেই বাছাইয়ের মধ্যেই আছে ‘৮:০৮-এর বনগাঁ লোকাল’। দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। যা নিয়ে বেশ উত্তেজিত তাপস। “সাংসদ হতে পারি, কিন্তু রক্তে অভিনয়ের বীজ ঘুরছে তো, তাই চিত্রনাট্য শুনেই রক্ত চলকে উঠেছিল। তাই, চোখ বুজে রাজি হয়ে গেছি,” বলছেন তাপস।
কিন্তু কী এমন আছে ছবিতে, যার জন্য তাপস কেরিয়ারের এই পর্যায়ে এসেও এত গুরুত্ব দিচ্ছেন? গল্প। অনন্ত দাশ নামে এক জন কেরানির গল্প। রোজ বনগাঁ থেকে ৮:০৮-এর লোকাল ধরে সে আসে কলকাতায়, জীবিকার টানে। শত অপমানে, উস্কানিতে রা-না-কাড়া অনন্ত দাশ হঠাৎই একদিন প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। সেই আপাত-সামান্য প্রতিবাদের ধাক্কা আছড়ে পড়ে সমাজের গায়ে।
তার মানে কি এই ছবি সাংসদ তাপস পালের অধুনা ফিল্ম-গ্রাফে প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দেয়? ‘প্রত্যাবর্তন’ শব্দে ঘোরতর আপত্তি তাপসের। “প্রত্যাবর্তন কেন হতে যাবে? তাপস পাল, তাপস পাল। মানুষ তাঁদের রায় অনেক আগেই আমাকে দিয়ে দিয়েছেন। রায়টা হচ্ছে আমি হারিয়ে যাইনি। আমার এই ছবি এবং চরিত্র বরং আর একটা পরিবর্তনের ছবি বলতে পারেন,” বলছেন তাপস।
অর্থাৎ পরিবর্তনের ছবি হলে তবেই তাতে তাপস পাল থাকবেন? এ ভাবেই কি মিশিয়ে দেন রাজনৈতিক আর অভিনেতা সত্তাকে? “পরিবর্তনের ছবি মানে যার সঙ্গে বাস্তবের মিল আছে। এই যে এখনকার ছবিতে প্রায়ই দেখা যায় পার্ক স্ট্রিট দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নায়ক নায়িকাকে নিয়ে হঠাৎ সুইৎজারল্যান্ডে গিয়ে নাচছে। এর সঙ্গে বাস্তবের মিল কোথায়?” কৌতুক ভরা প্রশ্ন তাপসের। যে স্টার ছবিতেও বাস্তবের শক্ত মাটিতে চিরকাল হেঁটে এসেছেন, তিনি এ কথা হয়তো বলতেই পারেন। যেমন বলতে পারেন, “আমি একশো শতাংশ স্টার। কিন্তু একশো শতাংশ মধ্যবিত্তও। স্টারোচিত কোনও ব্যবহার আমি কখনও করি না। আমার ফোন আমি নিজে ধরি। কোনও চামচে বা সেক্রেটারি ধরে দেয় না।”
এ যেন পর্দায় ফোটানো নানা স্মরণীয় চরিত্রের চেনা চাপা জেদের ঝলকানি। যা আবারও ফুটে উঠবে অনন্ত দাশের চরিত্রে। অপেক্ষা তারই।
Previous Item Patrika Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.