মুখোমুখি ২...
রবীন্দ্রসঙ্গীতে নিজেকে খুঁজে পাই আবার নাইট ক্লাবেও যাই
ত্রিকা: কেমব্রিজে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করা মেয়ে। ইংরেজিটা বেশি আসে। সুন্দরী। ওয়েস্টার্ন পোশাকে স্বচ্ছন্দ। এমন মেয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে পেশা হিসেবে বেছে নিল?
কমলিনী: আরে, জিন্স পরে যে কমলিনী সেই তো আবার অনুষ্ঠান করার সময় শাড়ি পরে এর মধ্যে বিরোধ কোথায়? পোশাক স্থান-কাল উপযোগী হওয়া উচিত, এটা আমিও মনে করি। ব্যস ওইটুকুই। আসলে, রবীন্দ্রনাথের যে কোনও কিছুর সঙ্গে আমরা এমন ভাবে নীতিবোধকে জুড়ে দিয়েছি যে, যা প্রচলিত তার বাইরে কিছু করলেই সেটাকে নীতিবিরুদ্ধ, অন্যায় বলে লেবেল সেঁটে দেওয়া হয়।


পত্রিকা: কট্টরপন্থীরা নিশ্চয়ই ছেড়ে কথা বলছেন না?
কমলিনী: (হেসে ফেলে) ওই আর কী। বিভিন্ন সূত্রে শুনেছি এই জগতের বয়োজ্যেষ্ঠ গুণিজনদের অনেকে বলেছেন, কমলিনী ভাল গাইছে, নাম হচ্ছে, কিন্তু এ রকম পোশাকে টেলিভিশনে কেন? এ সব কি এক জন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীকে মানায়! আমি তখন টেলিভিশনের একটা শো-এ রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে ওয়েস্টার্ন পোশাক পরেছিলাম, শাড়ির সঙ্গে হল্টার নেক ব্লাউজ...


পত্রিকা: অর্থাৎ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীর টিপিক্যাল ধরনটা সচেতন ভাবে ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন?
কমলিনী: সচেতন ভাবে কেন হবে? আমি তো দু’টোই। রবীন্দ্রসঙ্গীতে নিজেকে খুঁজে পাই, আবার নাইট ক্লাবেও যাই। এখন হয়তো আমার জীবনযাত্রা রোজ লেটনাইট করার অনুমতি দেয় না, কিন্তু নাইট ক্লাবে যাওয়াকেও খারাপ মনে করি না। ধরুন, কেউ যদি জিন্স পরে রকে বসে রবীন্দ্রসঙ্গীত গায় এবং তার সেই গান মানুষের মন ছোঁয়, তা হলে সেটা রবীন্দ্রসদনে শাড়ি পরে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার থেকে ছোট হবে কেন?


পত্রিকা: কিন্তু রবীন্দ্রসঙ্গীত কেন? এ রকম একটা সিভি নিয়ে তো অন্য অনেক পেশাই...
কমলিনী: পড়ানোর কাজ বা অন্য কোনও দশটা-পাঁচটাই যে আমার দ্বারা হবে না, সেটা অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিলাম। কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ড্রামা পড়িয়েছি বছর তিনেক। ওটা দশটা-পাঁচটা ছিল না বলে ভাল লাগত। কিন্তু রবীন্দ্রসঙ্গীত সব সময়ই বেশি টানত। তখনই ভাবলাম, যে জিনিসটা আমার জীবনে এমন ভাবে মিশে আছে সেই ছোট্টবেলায় দক্ষিণীতে যেতে শুরু করা থেকে, বিদেশ থেকেও যার টানে বারবার ফেরত আসতাম, ওখানে সেট্ল না করে ফেরত আসার সিদ্ধান্তটাও যেখানে অনেকটা সেই রবীন্দ্রসঙ্গীতেরই জন্য, সেটাকেই আরও সিরিয়াসলি নিজের জীবনের অঙ্গ করে নেব না কেন? আর সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে রবীন্দ্রনাথের গানের অসাধারণ সাহিত্যমূল্য চিরকালই টানত। রবীন্দ্রসঙ্গীতের ইমোশনাল ভ্যালুও। তাই সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিলাম। সেটা ২০০৬-০৭।
পত্রিকা: তার পর এই যে তরতরিয়ে উঠে আসা। সবাই এখন আপনাকে নিয়ে কথা বলছে। চ্যানেলে চ্যানেলে আপনি। সব চেয়ে বেশি বিক্রি সিডির তালিকায় ‘অটোগ্রাফ’ বা শানের গানের সঙ্গে আপনার সিডি। রহস্যটা কী? দুষ্টু লোকে তো বলে, আপনার প্যাকেজিংটা দুর্দান্ত। দেখতে সুন্দর। দারুণ সুন্দর সাজেন। শ্রোতার কানের সঙ্গে চোখও জুড়োয়। তাই অন্য অনেককে ছাপিয়ে আপনার নাম...
কমলিনী: সেটা হলে খারাপ কী! টেলিভিশনে একটা অনুষ্ঠান করতাম। সেই চ্যানেলের কাছে কিছু অল্প বয়সী ছেলে অনুরোধ করেছিল আমার অনুষ্ঠানে দর্শক হয়ে আসতে চাওয়ার। কেন না ওদের নাকি আমায় বিশেষ ভাল লাগে। প্যাকেজিং বলুন আর যাই বলুন, এই সব ছেলেমেয়ে, যারা রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যাপারটাই জানে বলে আমরা মনে করি না, তারা যদি এতটা উৎসাহ দেখায় মন্দ কী? আর (হেসে) আমার গানটাও নিশ্চয়ই ওদের সত্যি কোথাও ছুঁয়ে গিয়েছিল।


পত্রিকা: কিন্তু শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে তো আর আনন্দলোক পুরস্কার পাওয়া যাবে না। শ্রেয়া ঘোষালও হওয়া যাবে না...
কমলিনী: (কথা প্রায় শেষ হতে না দিয়ে) কী খারাপ ব্যাপার বলুন তো! এই ধরনের বিভেদগুলো এত বাজে। কেন যে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে মেনস্ট্রিমের এই ধরনের পুরস্কার পাওয়া যায় না বুঝি না। এটা ঠিকই যে, রবীন্দ্রসঙ্গীত বুঝতে এক বিশেষ ধরনের মন লাগে। সব রবীন্দ্রসঙ্গীত সবাই বুঝতে পারবেন, এমনটা ধরে নেওয়া যায় না। সেই সঙ্গে এটাও তো ঠিক, এমন অনেক রবীন্দ্রসঙ্গীত আছে যেগুলো যে কোনও মানুষের কাছে আবেদন তৈরি করে। তা হলে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের অন্য গ্রহের বাসিন্দা ভাবা হবে কেন?


পত্রিকা: শেষ প্রশ্ন। মোবাইলের রিং টোনে শুধু কিরিং কিরিং কেন? রবীন্দ্রসঙ্গীতটাই তো স্বাভাবিক ছিল।
কমলিনী: (হাসতে হাসতে) আমি টেকনোলজিতে শূন্য! রিং টোন সেট করতেই পারি না!

পত্রিকা: পারলে?
কমলিনী: দেবব্রত বিশ্বাসের গলায় ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’র ‘ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি’ জায়গাটুকু যদি বাজত...
Previous Item Patrika Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.