পত্রিকা: অনেকের মনে হয়েছে প্র্যাক্টিস ছাড়া আইপিএল-এ দুম করে নেমে পড়াটা তোমার ঠিক হয়নি। বিশেষ করে ব্যাপারটা যেখানে শাহরুখের সঙ্গে মর্যাদার লড়াইতে পৌঁছে গেল।
সৌরভ: একটা জিনিস লোককে বুঝতে হবে যে, দীর্ঘ দিন একটা পর্যায়ে ক্রিকেট খেলে আসার পর সব ধরনের ম্যাচে নিজেকে মোটিভেট করা যায় না। আমি তো তা-ও গত সিজনে বেঙ্গলের হয়ে খেলেছি। গিলক্রিস্ট কি খেলা ছাড়ার পর খেলেছে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে? নাকি কুম্বলে খেলে বেঙ্গালুরুর হয়ে?
পত্রিকা: তোমার জীবনে অবশ্য এখন ক্রিকেট ব্যাটের অনেক আগে টিভি স্টুডিও। ক্যামেরা হারিয়ে দিচ্ছে ব্যাটকে?
সৌরভ: না না, ব্যাট অনেক আগে। একটা ড্রাইভ ঠিকঠাক যাওয়ার সুখ, সুপারহিট শো-তেও নেই।
পত্রিকা: আচ্ছা, একটা কথা বলো। আমির-শাহরুখে কী তফাত?
সৌরভ: দু’জনেই খুব ভাল। দু’জনেই জনপ্রিয়। দু’জনেই খুব ইনটেন্স। আমির বোধহয় একটু বেশি। শাহরুখ অনেক বেশি শো-ম্যান। তবে ও-ও খুব ভাল। দু’জনেই এক কথায় এবং বিনা পয়সায় আমার শো-তে এসেছে। দু’জনেই আমার বন্ধু।
পত্রিকা: এগুলো যা বললে মোটামুটি সবাই জানে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নিশ্চয়ই আরও বেশি জানে।
সৌরভ: এটাই আমার উত্তর। আমি এটাই জানি।
পত্রিকা: বোঝা গেল বিতর্ক চাইছ না। ঠিক আছে, আমির নিয়ে বলো।
সৌরভ: আমির মুগ্ধ করার মতো। একটা গেম শো-তে এল, সে তো সেলিব্রিটিরা অনেকেই আসে। কিন্তু তাদের নানান বায়নাক্কাও থাকে। হয় বলে, এটা চাই, ওটা চাই। নইলে বলে, প্রশ্ন বলে দাও। আমির খানকে দেখলাম আশ্চর্য ব্যতিক্রম। শো-এর জন্য অনেক হোমওয়ার্ক করে এসেছিল। ওর কিন্তু দরকারই ছিল না। ও চাইলে স্টারসুলভ মনোভাব নিয়ে আসতেই পারত যে আমি আসছি এটাই তো ধন্য হয়ে যাবার মতো ব্যাপার। চ্যানেল ধন্য হয়ে যাবে, টিআরপি বেড়ে যাবে, এ রকম কত কিছু। আমির এ সব কিছুই ভাবেনি। সে কঠিন প্রতিযোগী হিসেবে লড়তে এসেছিল। এমনকী ওর বৌ কিরণ যখন টেনশনে পড়ে বলছে, খেলা ছেড়ে দিই, খেলা ছেড়ে দিই, হাজব্যান্ডের সঙ্গে একমত হচ্ছে না, তখনও আমির রাজি হয়নি, বলেছে, না খেলবে। এই স্পিরিটটা অভিভূত করার মতো।
পত্রিকা: সবাই বলে আমির খান উদগ্র পারফেকশনিস্ট।
সৌরভ: সে তো বটেই। মুম্বইতে দু’মাস আগে ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালের সময় ওর সঙ্গে যখন দেখা হল, সামান্য মোটা দেখেছিলাম। দু’মাস পর অবাক হয়ে দেখলাম টানটান মাসকুলার চেহারা। ফিল্মের জন্য নিজেকে ঝরিয়ে ফেলেছে!
পত্রিকা: আর ঠিক ছ’দিন বাদে তুমি ৩৯। থার্টি-নাইন গোয়িং অন ফর্টি। চল্লিশের ঘরে চালসের ভয়ের মতো কোনও টেনশন হচ্ছে?
সৌরভ: আমার কোনও টেনশন নেই। ভারতের হয়ে খেলা ছেড়ে দিয়েছি সাড়ে-ছত্রিশ বছর বয়সে। আর সবাই খেলছে। ক্যালিস খেলছে, পন্টিং খেলছে, সচিন খেলছে, রাহুল খেলছে। চল্লিশে পা দেওয়ার আগে স্পোর্টসম্যানের কাছে বয়স শুধুই একটা সংখ্যা। আমার ক্ষেত্রে টেনশনের কোনও ব্যাপার নেই। দেশের হয়ে খেলাই তো থেমে গেছে। |