মুখোমুখি ১...
আজও ব্যাট আগে টিআরপি নয়
ত্রিকা: তোমার জীবনে আগে ছিল স্কোরবোর্ড। এখন হয়েছে টিআরপি।
সৌরভ: হু।


পত্রিকা: একই রকম নিষ্ঠুর আয়না। তুমি হেরেছ না জিতেছ, সাফ দেখিয়ে দেবে।
সৌরভ: স্কোরবোর্ড বুঝতাম। কিন্তু টিআরপি ব্যাপারটার সঙ্গে পরিচিত নই। একদমই নই। জানি না কী ভাবে হয়-টয়। ‘দাদাগিরি’ করার সময় জানতাম না। আজও জানি না।


পত্রিকা: কখনও বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, এত হাই প্রোফাইল টিভি অ্যাঙ্কর হয়েও তুমি টিআরপি-র খবর রাখ না! তুমি জান না যে, টিভি শো হোস্ট হিসেবে প্রতি বুধবার তোমার জন্ম বা মৃত্যুর বুলেটিন আসে! টিআরপি রেটিংস!
সৌরভ: স্কোরবোর্ডের মতো অত ইম্পর্ট্যান্ট নয় আমার জীবনে। তবে এ বারের শো-এর টিআরপি নিয়ে আমি একটু বেশি সচেতন। যেহেতু নতুন চ্যানেলের শো। তাদেরও ওঠা-নামা নির্ভর করে রয়েছে আমার পারফরম্যান্সের ওপর।


পত্রিকা: কেবিসি-র অরিজিনাল হোস্টের একটা মন্তব্য ছিল: অন্যদের মতোই আমার জীবনেও দুশ্চিন্তার অবধি নেই। কিন্তু ক্যামেরা সামনে চলতে শুরু করলেই আমার যাবতীয় দুশ্চিন্তা উধাও হয়ে যায়।
তোমার এ বছরটা একেবারেই ভাল যায়নি। আইসিসি নির্বাচিত স্বপ্নের ওয়ান ডে টিমে জায়গা না পাওয়া। আইপিএল নিলামে বর্জিত হওয়া। জমি খোয়ানো। এসআরকে-র সঙ্গে মর্যাদার দ্বৈরথে হার। তোমারও কি সামনে ক্যামেরা চলতে শুরু করলে হতাশা আর দুশ্চিন্তাগুলো উধাও হয়ে যায়?
সৌরভ: ইয়েস তাই হয়। আমি বর্তমানে থাকতে পারি


পত্রিকা: নিজস্ব মেক-আপ কিট কিনেছ?
সৌরভ: কিনিনি। এ বার কিনব ভাবছি। ইংল্যান্ড থেকে।


পত্রিকা: আর চুল? এই স্পেশ্যাল হেয়ারস্টাইল? কোন পার্লার?
সৌরভ: আমার সেই পুরনো সিস্টেম। বেহালায় ৭০ টাকা দিয়ে।


পত্রিকা: ধ্যাঃ।
সৌরভ: আমি ফাইভ স্টার হোটেলে দু’হাজার টাকা দিয়ে চুল-টুল কাটি না। আমার গুড ওল্ড কৃষ্ণ বাড়িতে আসে এত বছর ধরে। বাবার কাটে। আমার কাটে।


পত্রিকা: সেই গুড ওল্ড বেহালা।
সৌরভ: সেই গুড ওল্ড বেহালা।


পত্রিকা: রাজারহাটের শেষ প্রান্তে যেখানে শু্যটিং করছ আর বেহালা তো দু’টো আলাদা দেশ।
সৌরভ: আরে বাবা, আমার তো আসতে যেতেই চার ঘণ্টা চলে যায়।

পত্রিকা: তা হলে বেহালা ছেড়ে এ দিকে বাড়ি কিনছ না কেন?
সৌরভ: নাহ্। আমি আসতে রাজি হলেও আমার সঙ্গে বাড়ির লোক কেউ বেহালা ছেড়ে আসবে না।

পত্রিকা: কেবিসি করার অফার এর আগে কলকাতা সিনেমা জগতের দু’জন ছেড়েছেন। এই শো ঘিরে অমিতাভ বচ্চনের এমনই জ্বলজ্বলে ভাবমূর্তি। তুমি নিতে রাজি হলে কী করে? স্রেফ টাকা!
সৌরভ: টাকা একটা ফ্যাক্টর তো নিশ্চয়ই। কিন্তু আসল নয়। শো-এর ফর্ম্যাটটা আমার খুব ভাল লাগে। তা ছাড়া আমার বাড়তি কোনও চাপ ছিল না। কোনও সরাসরি কম্পিটিশনের ভয় ছিল না। আমি তো সিনেমা জগতের মানুষ নই যে, মিস্টার বচ্চনের পাশে বসিয়ে কেউ মাপবে।


পত্রিকা: তবু ব্যর্থতার ভয় তো একটা থেকেই যায়। লোকের অরিজিনাল দেখে মুগ্ধতার রেশ রয়েছে। তারা যদি রিমেক না নেয়?
সৌরভ: দ্যাখো, আমি রিয়্যালিটির মধ্যে বড় হওয়া মানুষ। এক দিন ফেল করেছি, এক দিন সাকসেস এসেছে। আমি মাঠের লোক। জানি, ব্যর্থতা অবশ্যম্ভাবী। তবু চেষ্টা করে যেতে হয়।

পত্রিকা: অ্যাতোগুলো শো অ্যাঙ্কর করে উঠে কী মনে হচ্ছে? কোনটা বেশি কঠিন? শোয়েবকে খেলা, না এটা?
সৌরভ: কোনও সন্দেহই নেই শোয়েবকে খেলা। কোনও তুলনাই হয় না। অনেক কঠিন।


পত্রিকা: সিদ্ধার্থ বসু কেমন?
সৌরভ: হার্ড টাস্ক মাস্টার।

পত্রিকা: কোচ হিসেবে সিদ্ধার্থ বসু না গ্রেগ চ্যাপেল?
সৌরভ: প্রশ্নটা আন্দাজ করছিলাম।

পত্রিকা: উত্তরটা কী?
সৌরভ: সিদ্ধার্থ বসু ভদ্রলোক আর কী!

পত্রিকা: আচ্ছা, ভদ্রলোক কোচ কী শেখালেন?
সৌরভ: ব্রিদিং টেকনিক।

পত্রিকা: সে তো স্পোর্টসম্যান মাত্রেই জানে।
সৌরভ: এটা একটু অন্য। গলাটাকে কী ভাবে প্রয়োজনে ওপর-নীচ করতে হবে। তখন নিশ্বাস নেওয়ার সঙ্গে কী ভাবে মডুলেশনটা ঠিকঠাক আসবে, এগুলো।

পত্রিকা: তুমি যখন নতুন কোচের সঙ্গে রগড়াচ্ছ, সাবাইনা পার্কে তোমার বন্ধু সেঞ্চুরি করছে। ভাবলে খারাপ লাগে না?
সৌরভ: আগে লাগত। এখন লাগে না।

পত্রিকা: লাগে না কেন?
সৌরভ: আমার ব্যাপারটা আলাদা। যে পরিস্থিতিতে আমায় খেলা ছাড়তে হয়েছিল তাতে কোনও রাস্তা খোলা ছিল না। আর এখন তো এই লাইফের সঙ্গে অ্যাডজাস্টমেন্ট হয়ে গেছে।

পত্রিকা: দ্রাবিড়েরও কি খেলা ছেড়ে দেওয়া উচিত!
সৌরভ: কেন ছাড়বে? ও যদি খেলে আনন্দ পায় আর চল্লিশ বছর অবধি খেলে, তা হলে সমস্যা কোথায়! বয়সের সঙ্গে পারফরম্যান্সের কোনও সম্পর্ক নেই। ক্রিকেট অন্য ধরনের খেলা। এখানে স্কিলটা আসল। অস্ট্রেলিয়ার সিলেক্টাররা যেটা করছে, সেটা পাগলামি। এই তো ধোনি যখন এ বার অস্ট্রেলিয়ায় টিম নিয়ে যাবে সাইমন ক্যাটিচ-এর বদলে ওপেন করবে কিনা ফিলিপ হিউজ? ভাবা যায়? কোনও যুক্তি আছে? আমি তোমায় বলে দিলাম, গ্রেগ চ্যাপেলদের যা হাবভাব, পন্টিং-এরও দিন ঘনিয়ে আসছে। এদের কে বোঝাবে, রায়ান গিগ্স ৩৮ বছরেও ম্যান ইউতে দাপিয়ে খেলছে। দেখলে তো বল যখন লাফাল আর নিচু হল, কে খেলল? না দ্রাবিড়!

পত্রিকা: শো-এ আমির এলেন। শাহরুখকে বলবে না?
সৌরভ: শাহরুখকে এক বার এনেছিলাম তো। ‘দাদাগিরি’তে। আবার বলব! সেই ভেবে আর বলছি না।

পত্রিকা: দাদা ভার্সেস এসআরকে!
সৌরভ: এটা নিয়ে বড় বেশি কথা বলা হয়েছে। এত কিছুর দরকার ছিল না। ওর টিম তিন বছর সাফল্য পায়নি তো ও দল বদলেছিল।

পত্রিকা: আসলে তার আগের বছরের সেরা পারফরমারকে রাখা হয়নি বলে এত কথা হয়েছিল।
সৌরভ: সেটা তো মনে হতেই পারে। আমার কেকেআর-এর হয়ে হাজারের ওপর রান। তার আগের সিজনে আমিই ছিলাম শাহরুখের বেস্ট পারফরমার। আমার কথা হল, টিমের ভাল-মন্দের জন্য যে এগারো খেলে, তারা সবাই রেসপন্সিবল। একা সৌরভ নয়। সৌরভ তো গিয়ে হাসি বা গেইল-এর হয়ে ব্যাট করেনি!

পত্রিকা: অনেকের মনে হয়েছে প্র্যাক্টিস ছাড়া আইপিএল-এ দুম করে নেমে পড়াটা তোমার ঠিক হয়নি। বিশেষ করে ব্যাপারটা যেখানে শাহরুখের সঙ্গে মর্যাদার লড়াইতে পৌঁছে গেল।
সৌরভ: একটা জিনিস লোককে বুঝতে হবে যে, দীর্ঘ দিন একটা পর্যায়ে ক্রিকেট খেলে আসার পর সব ধরনের ম্যাচে নিজেকে মোটিভেট করা যায় না। আমি তো তা-ও গত সিজনে বেঙ্গলের হয়ে খেলেছি। গিলক্রিস্ট কি খেলা ছাড়ার পর খেলেছে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে? নাকি কুম্বলে খেলে বেঙ্গালুরুর হয়ে?

পত্রিকা: তোমার জীবনে অবশ্য এখন ক্রিকেট ব্যাটের অনেক আগে টিভি স্টুডিও। ক্যামেরা হারিয়ে দিচ্ছে ব্যাটকে?
সৌরভ: না না, ব্যাট অনেক আগে। একটা ড্রাইভ ঠিকঠাক যাওয়ার সুখ, সুপারহিট শো-তেও নেই।

পত্রিকা: আচ্ছা, একটা কথা বলো। আমির-শাহরুখে কী তফাত?
সৌরভ: দু’জনেই খুব ভাল। দু’জনেই জনপ্রিয়। দু’জনেই খুব ইনটেন্স। আমির বোধহয় একটু বেশি। শাহরুখ অনেক বেশি শো-ম্যান। তবে ও-ও খুব ভাল। দু’জনেই এক কথায় এবং বিনা পয়সায় আমার শো-তে এসেছে। দু’জনেই আমার বন্ধু।

পত্রিকা: এগুলো যা বললে মোটামুটি সবাই জানে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নিশ্চয়ই আরও বেশি জানে।
সৌরভ: এটাই আমার উত্তর। আমি এটাই জানি।

পত্রিকা: বোঝা গেল বিতর্ক চাইছ না। ঠিক আছে, আমির নিয়ে বলো।
সৌরভ: আমির মুগ্ধ করার মতো। একটা গেম শো-তে এল, সে তো সেলিব্রিটিরা অনেকেই আসে। কিন্তু তাদের নানান বায়নাক্কাও থাকে। হয় বলে, এটা চাই, ওটা চাই। নইলে বলে, প্রশ্ন বলে দাও। আমির খানকে দেখলাম আশ্চর্য ব্যতিক্রম। শো-এর জন্য অনেক হোমওয়ার্ক করে এসেছিল। ওর কিন্তু দরকারই ছিল না। ও চাইলে স্টারসুলভ মনোভাব নিয়ে আসতেই পারত যে আমি আসছি এটাই তো ধন্য হয়ে যাবার মতো ব্যাপার। চ্যানেল ধন্য হয়ে যাবে, টিআরপি বেড়ে যাবে, এ রকম কত কিছু। আমির এ সব কিছুই ভাবেনি। সে কঠিন প্রতিযোগী হিসেবে লড়তে এসেছিল। এমনকী ওর বৌ কিরণ যখন টেনশনে পড়ে বলছে, খেলা ছেড়ে দিই, খেলা ছেড়ে দিই, হাজব্যান্ডের সঙ্গে একমত হচ্ছে না, তখনও আমির রাজি হয়নি, বলেছে, না খেলবে। এই স্পিরিটটা অভিভূত করার মতো।

পত্রিকা: সবাই বলে আমির খান উদগ্র পারফেকশনিস্ট।
সৌরভ: সে তো বটেই। মুম্বইতে দু’মাস আগে ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালের সময় ওর সঙ্গে যখন দেখা হল, সামান্য মোটা দেখেছিলাম। দু’মাস পর অবাক হয়ে দেখলাম টানটান মাসকুলার চেহারা। ফিল্মের জন্য নিজেকে ঝরিয়ে ফেলেছে!

পত্রিকা: আর ঠিক ছ’দিন বাদে তুমি ৩৯। থার্টি-নাইন গোয়িং অন ফর্টি। চল্লিশের ঘরে চালসের ভয়ের মতো কোনও টেনশন হচ্ছে?
সৌরভ: আমার কোনও টেনশন নেই। ভারতের হয়ে খেলা ছেড়ে দিয়েছি সাড়ে-ছত্রিশ বছর বয়সে। আর সবাই খেলছে। ক্যালিস খেলছে, পন্টিং খেলছে, সচিন খেলছে, রাহুল খেলছে। চল্লিশে পা দেওয়ার আগে স্পোর্টসম্যানের কাছে বয়স শুধুই একটা সংখ্যা। আমার ক্ষেত্রে টেনশনের কোনও ব্যাপার নেই। দেশের হয়ে খেলাই তো থেমে গেছে।

Previous Item Patrika Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.