|
|
|
|
শিল্পমন্ত্রীকে লিখিত প্রস্তাব প্রসূনের |
পেট্রো-রসায়ন নয়, পরিবেশ-বান্ধব শিল্পই নয়াচরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পেট্রো-রসায়ন তালুক নয়। নয়াচরে বরং তৈরি হবে পরিবেশ-বান্ধব পর্যটন শিল্প। গড়া হবে হাল্কা শিল্প এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পও। এত দিন মৌখিক আলোচনার স্তরে থাকা এই প্রস্তাব অবশেষে লিখিত ভাবে জমা পড়ল রাজ্য সরকারের ঘরে।
এ বিষয়ে শুক্রবার রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন এই প্রকল্পের ‘ডেভেলপার’ ইউনিভার্সাল সাকসেস-এর কর্ণধার প্রসূন মুখোপাধ্যায়। আলোচনা শেষে পার্থবাবু জানান, নয়াচরে ‘কেমিক্যাল হাব’ (পেট্রো-রসায়ন তালুক) সম্পর্কে বিধানসভা নির্বাচনের আগেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল তাঁর দল। তাই ওই প্রতিশ্রুতি মেনেই হাব গড়া হবে না নয়াচরে। তিনি বলেন, “ওখানে বরং পরিবেশ-বান্ধব শিল্প ও পর্যটন প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা করেছে লগ্নিকারী সংস্থা। সেই প্রস্তাব লিখিত ভাবে পেশও করেছে তারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদনের জন্য তা জমা দেওয়া হবে।”
নয়াচরে তেল শোধনাগার তৈরির কোনও পরিকল্পনা যে আর নেই, তা জানিয়েছেন অনাবাসী বাঙালি শিল্পপতি প্রসূনবাবু-ও। নাকচ করে দিয়েছেন রসায়ন শিল্প তালুক গড়ার সম্ভাবনা। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ বাঁচানোর বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি কাঁচামাল আনার বিষয়ে কিছু সমস্যা থাকায় এমনিতেই তেল শোধনাগার গড়া যেত না বলে তাঁর দাবি। প্রসঙ্গত, নয়াচর প্রকল্প নিয়ে গত মাসেই পার্থবাবুর সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেন প্রসূনবাবু। সে দিন মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, লিখিত প্রস্তাব পাওয়ার পরেই আলোচনা শুরু হবে। তাই এ দিন দ্বিতীয় বৈঠকে শিল্পমন্ত্রীর কাছে রসায়ন শিল্প তালুক বাদ দিয়েই নতুন বিনিয়োগ-প্রস্তাব জমা দিয়েছেন প্রসূনবাবু।
কিন্তু কী রয়েছে নয়া লগ্নি প্রস্তাবে?
প্রসূনবাবু জানান, ৬ হাজার একর জমিতে তৈরি হবে পর্যটন শিল্প। আর ৪ হাজার একরে শিল্প তালুক। বিদ্যুৎ, নিকাশি, জল, ইত্যাদি প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়তে চিহ্নিত করা হয়েছে ১,০২৮ একর জমি। ২৫০ থেকে ৪০০ একর জমি ব্যবহার করা হবে স্থানীয় বাসিন্দাদের পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজে। এখানকার প্রস্তাবিত প্রকল্পে উৎপাদিত হবে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। যার ৮৫ শতাংশ বিক্রির জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার সঙ্গে ইতিমধ্যেই চুক্তি হয়ে গিয়েছে বলে প্রসূনবাবুর দাবি। তিনি জানান, এই প্রকল্পে কাজ করবেন প্রায় ১ হাজার দক্ষ কর্মী। এ ছাড়া, পর্যটন প্রকল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কর্মসংস্থান হবে ৫০ হাজার মানুষের। সম্ভাব্য মোট লগ্নির অঙ্ক ২০ হাজার কোটি। ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আইডিবিআই ব্যাঙ্ক প্রাথমিক ভাবে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে বলেও প্রসূনবাবুর দাবি।
প্রসঙ্গত, পেট্রো-রসায়ন তালুকের জন্য তৈরি হয়েছিল নয়া সংস্থা এনকেআইডি। তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সালিম গোষ্ঠী, ইউনিভার্সাল সাকসেস এবং বেঙ্গল ইউনিটেক মিলে তৈরি হয় এই সংস্থা। ওই তালুক তৈরির লক্ষ্যে এনকেআইডি-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রফুল্লচন্দ্র কেমিক্যালস প্রাইভেট লিমিটেড গড়ে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। গত অক্টোবরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে ‘মেমোরেন্ডাম অফ এগ্রিমেন্ট’ বা উভয়পক্ষের দায় নিয়ে চুক্তিও হয় এই প্রকল্প নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও গুজরাত, তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশে এ ধরনের তালুক তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। পরে অবশ্য এনকেআইডি থেকে বেরিয়ে যায় ইউনিটেক। সরে দাঁড়ায় সালিম গোষ্ঠীও।
নয়াচরে পেট্রো-রসায়ন শিল্প তালুক হলে পরিবেশের উপর কী প্রভাব পড়বে, প্রাথমিক ভাবে তা খতিয়ে দেখে কেন্দ্রকে আগেই জানিয়েছিল রাজ্য। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রও। জানিয়েছিল, পরিবেশ আইন লঙ্ঘন না-করে কোথায় কোথায় শিল্প গড়া সম্ভব। আবার অন্য দিকে, বিনিয়োগকারী সংস্থার তরফে পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিল সিঙ্গাপুরের জুরং গোষ্ঠী। নয়াচরের প্রাথমিক রিপোর্ট-ও তৈরি করেছিল তারা।
কিন্তু এখন প্রায় আমূল বদলে গিয়েছে সেই চিত্র। প্রকল্প-পরিকল্পনা থেকে বাদ গিয়েছে ‘কেমিক্যাল হাব’। নেই ‘বিতর্কিত’ সালিম গোষ্ঠীও। এ দিন প্রসূনবাবু জানান, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পের আর্থিক বিষয় (‘ফিনান্সিয়াল ক্লোজার’) চূড়ান্ত হবে। আর নভেম্বরে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলেও তাঁর দাবি।
|
|
|
|
|
|