|
|
|
|
জঙ্গলমহলে বন্ধের ডাক |
বন্দিমুক্তির দাবির মধ্যেই ফের গ্রেফতার মনোজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর |
রাজ্যে পালাবদলের পর জঙ্গলমহলে অসংখ্য মানুষের নামে চলা মামলা প্রত্যাহার এবং রাজনৈতিক কারণে বন্দিদের মুক্তির দাবিতে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই আন্দোলনের অন্যতম নেতা মনোজ মাহাতোকে দু’বছর আগের একটি পুরনো মামলার সূত্রে শুক্রবার গ্রেফতার করল পুলিশ। আর তার পরেই পুরনো সেই বন্ধ-রাজনীতির প্রত্যাবর্তন ঘটল জঙ্গলমহলে। এই গ্রেফতারের প্রতিবাদে আজ, শনিবার ২৪ ঘণ্টার জঙ্গলমহল বন্ধের ডাক দিয়েছে ‘সন্ত্রাস, দুর্নীতি, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন-বিরোধী গণতান্ত্রিক মঞ্চ’। এই মঞ্চের ব্যানারেই ইদানীং বন্দিমুক্তি, মামলা প্রত্যাহার, যৌথ বাহিনী প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন মনোজরা।
লালগড়ে জনগণের কমিটির আন্দোলনেও প্রথম সারিতে ছিলেন এই মনোজ মাহাতো। এক সময়ে কমিটির মুখপাত্র থেকে সম্পাদকও হয়েছিলেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার হন। দশটি মামলায় প্রায় ৮ মাস জেলবন্দি থাকার পরে বিধানসভা ভোটের কয়েক দিন আগে জামিনে মুক্তি পেয়ে ঝাড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে মঞ্চের প্রার্থী জেলবন্দি ছত্রধর মাহাতোর সমর্থনে প্রচারে যোগ দেন। পুলিশের দাবি, ২০০৯-এর ১৪ সেপ্টেম্বর লালগড়ের আমলিয়া থেকে সিপিএম সমর্থক জিতেন মাহাতোকে অপহরণের মামলায় জড়িত মনোজ। এই মামলায় গত সোমবার ঝাড়গ্রাম আদালত মনোজের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। শুক্রবার লালগড়ের বীরকাঁড়ের লাগোয়া জামশোল গ্রামের বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। পরে আদালত তাঁকে ৫ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।
|
|
ঝাড়গ্রাম আদালতে মনোজ মাহাতো। ছবি: দেবরাজ ঘোষ |
দুপুরে আদালতে হাজিরার সময়ে মনোজ দাবি করেন, বন্দিমুক্তির দাবিতে জঙ্গলমহলে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা দমন করতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে তাঁর আইনজীবী সুমন সেনও বলেন, “তাঁর মক্কেলকে বন্দি করে রাখাটাই সরকার তথা পুলিশের উদ্দেশ্য। সে-কারণেই মামলার এফআইআর-এ নাম না-থাকা সত্ত্বেও চার্জশিটে মনোজের নাম যুক্ত করা হয়েছে।” একই বক্তব্য ‘সন্ত্রাস, দুর্নীতি, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন-বিরোধী গণতান্ত্রিক মঞ্চ’-এর সম্পাদক অশোকজীবনেরও। কলকাতায় লালগড় মঞ্চ, এপিডিআর-এর মতো সংগঠনগুলি এ দিনই কলেজ স্ট্রিটে বিক্ষোভ-অবস্থান করেছে। সিপিএম নেতৃত্ব মনোজ মাহাতোর গ্রেফতার নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম শুধু বলেন, “ওঁর বিরুদ্ধে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের খুন করার অভিযোগ ছিল। গ্রেফতার করার পরে সরকার কী বার্তা দিতে চায়, আগে দেখি।”
পুলিশের দাবি, জিতেন মাহাতো অপহরণের মামলায় এফআইআর-এ নাম না থাকলেও তদন্তে মনোজের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে বলেই তাঁর নাম রয়েছে চার্জশিটে। মাওবাদী নেত্রী সুচিত্রা মাহাতো, সন্তোষ পাত্র ও অশোক মাহাতোকেও এই মামলায় ‘ফেরার’ অভিযুক্ত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে চার্জশিটে। ২০০৮ সালে লালগড়ের বৈতার বাঁশকোনা গ্রামে সিপিএম কর্মী খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ দিনই আবার বীরকাঁড় গ্রামের জয়দেব মাহাতোকেও গ্রেফতার করে ঝাড়গ্রাম আদালতে হাজির করেছিল পুলিশ। তাঁর ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে ধৃতদের ‘রাজনৈতিক বন্দি’র মর্যাদা দেওয়ার জন্য এ দিন মেদিনীপুর আদালতে আবেদন পেশ করেন তাঁদের আইনজীবী কৌশিক সিংহ। ১৫ জুলাই এর শুনানি হবে। এই মামলায় ২৩ জনের নামে আগেই চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। তাঁদের মধ্যে ১৯ জন জেলে বন্দি। এক জন জামিনে মুক্ত এবং ৩ জন ফেরার। জয়দেব মাহাতো, জয়ন্ত ভক্তা ও বচন মান্না নামে সেই ৩ ফেরার-কে এ দিনই ‘পলাতক’ আসামি হিসেবে ঘোষণা করে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শুক্রবারই ছোট আঙারিয়া মামলায় বন্দি দিল মহম্মদকে মেদিনীপুর সিজেএমের এজলাসে হাজির করানো হয়। তাঁর আরও ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। |
|
|
|
|
|