দক্ষিণ কলকাতা
সংস্কারের দাবি
পুকুর ‘চুরি’
দীর্ঘ দিন সংস্কার হয় না। আবর্জনাও ফেলা হয়। ফলে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে হালতু ও সংলগ্ন এলাকার ১৮টি পুকুর। এ বার এই পুকুরগুলি সংস্কারের জন্য সরব হলেন এলাকার বাসিন্দারা।
ইএম বাইপাস-সংলগ্ন হালতু এলাকার আশুতোষ কলোনি, যাদবগড়, সুচেতানগর, নেলিনগর, শরৎ বোস কলোনি, শহিদনগর এবং রাজডাঙা মেন রোড সংলগ্ন এলকায় আগে অনেকগুলি পুকুর ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নগরায়ণের ফলে পুকুরের সংখ্যা দ্রুত কমে গিয়েছে। এখন এলাকায় মাত্র ১৮টি পুকুর রয়েছে। সেগুলির অবস্থাও ভাল নয়। কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পুকুর থাকা জরুরি। তাই এগুলির আশু সংস্কার প্রয়োজন।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার পুকুরগুলি ধীরে ধীরে আবর্জনা ফেলে বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে। যে ক’টি পুকুর রয়েছে তা বাঁচাতে বাসিন্দাদের একাংশ ‘হালতু জলাশয় সংরক্ষণ ও সংস্কার প্রস্তুতি কমিটি’ নামে একটি সংগঠনও তৈরি করেছেন। তাঁদের দাবি, পুকুরগুলির যথাযথ সংস্কার করতে হবে। পুরসভার নজরদারির ব্যবস্থাও করতে হবে। ১২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তৃণমূলের দীপু দাসঠাকুর বলেন, “এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকার স্বার্থেই পুকুরগুলি সংস্কার করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি হালতুর মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আগুন লাগলে প্রাথমিক ভাবে এই পুকুরগুলিই ভরসা। ২০০৮-এ পাড়ার একটি পুজোমণ্ডপে আগুন লাগলে পুকুরের জল ব্যবহার করে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুকুরগুলির দুরবস্থার জন্য বাসিন্দাদের একাংশও দায়ী। তাঁরা পুকুরগুলিতে ময়লা ফেলেন। বারণ করা হলেও শোনেননি।
পুকুরগুলি কচুরিপানায় ভরা। পুকুরের চার দিকে আবর্জনা ফেলা হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৌমেন চক্রবর্তী বলেন, “কলকাতা পুরসভার ১০৫ নম্বর ওয়াডের্র্র হালতু এলাকা উদ্বাস্তুপ্রধান। সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই ১৮টি জলাশয়ের মধ্যে ১৬টি উদ্বাস্তু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের অধীন। দু’টি ব্যক্তি মালিকানাধীন। কিন্তু কে সংস্কার করবে তা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে ধন্দ রয়েছে। আমরা চাই দ্রুত সংস্কার হোক।” এর মধ্যে সংগঠনের তরফে কলকাতা পুরসভা, রাজ্য সরকারের পরিবেশ, মৎস্য এবং উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের কাছে আবেদনও জানানো হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) সঞ্চিতা মণ্ডল বলেন, “১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে নিযুক্ত কর্মীদের দিয়ে এই পুকুরগুলি পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হবে। চুক্তি ভিত্তিক কর্মী নিয়োগের কথাও বিবেচনা করব। তবে জলাশয় বাঁচানোর জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদেরও সচেতন হবে।”
রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার বলেন, “উন্নয়নের কাজ পরিবেশকে বাঁচিয়েই করতে হবে। রাজ্যের কোথাও কোনও জলাশয় বোজানো যাবে না এটাই রাজ্যের নতুন সরকারের নীতি। তাই এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মৎস্য মন্ত্রী আবু হেনার কথায়: “রাজ্যে মাছের উৎপাদন বাড়াতে হলে এই ধরনের জলাশয়ের সংস্কার খুব জরুরি। তাই যে দফতরের অধীনে এই জলাশয়গুলো রয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।”
উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর বলেন, “দফতরের আওতায় বিভিন্ন জেলায় এই ধরনের জলাশয়-সহ অন্যান্য সম্পদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এই বিষয়ে বিশদ তথ্য জানাতে প্রত্যেকটি জেলার সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই তথ্য হাতে এলে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ছবি: পিন্টু মণ্ডল
Previous Story

Kolkata

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.