যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে প্ল্যাটফর্ম সারানো হয়েছে। তৈরি হয়েছে সিমেন্টের বাঁধানো বসার জায়গা ও যাত্রী-ছাউনি। কিন্তু অভিযোগ, সেই ছাউনিই চলে গিয়েছে হকারদের দখলে। অগত্যা রোদ-বৃষ্টিতে যাত্রীদের বাইরে দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করতে হয়। পূর্ব রেলের দক্ষিণ শাখায় টালিগঞ্জ, সন্তোষপুর-আক্রা এবং বজবজ স্টেশন নিয়ে এমন অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের।
যেমন, টালিগঞ্জ স্টেশন। এখানে নতুন কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত টিকিট কাউন্টার, যাত্রী-ছাউনি ও বসার জায়গা তৈরি হয়েছে। কিন্তু টিকিট কাউন্টারের সিঁড়ি দিয়ে উঠে সামনেই হকার বসে গিয়েছে। চপ, মুড়ি, চা, ঘুগনি থেকে শরবত সবই বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া এখানে প্ল্যাটফর্ম একটিই। তাই কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ট্রেন আসে। সব সময় চাপ থাকে। সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। বর্ষায় খুবই অসুবিধা হয়। ছাতা মাথায় বাইরে দাঁড়াতে হয় যাত্রীদের। |
নিউ আলিপুরের বাসিন্দা অর্চনাদেবী টালিগঞ্জে নেমে ট্রেন ধরেন শিয়ালদহে যাওয়ার জন্য। নিত্যযাত্রী অর্চনাদেবীর বক্তব্য: “ছাউনির সামনেই লেডিজ কামরা থামে। কিন্তু হকারদের জন্য মহিলা যাত্রীরা সেখানে দাঁড়াতে পারেন না।” নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা হকার বললেন, “আমরা এক পাশে বসে থাকি।” যদিও নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক হকার জানান, আগে এখানে সিটুর ইউনিয়ন থাকলেও এই মুহূর্তে কোনও ইউনিয়ন নেই। ফলে হকারদের সে ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। খারাপ অবস্থা বেসব্রিজ স্টেশনেরও। সেখানে প্ল্যাটফর্মে টালির ছাউনি দেওয়া দোকান তৈরি হয়ে গিয়েছে।
সন্তোষপুর-আক্রা স্টেশনের যাত্রী-ছাউনিরও একই অবস্থা। এখানেও প্ল্যাটফর্ম জুড়ে খাবার-সহ নানা জিনিসের দোকান। বাকি জায়গাটুকুতে কোনওক্রমে যাত্রীরা অপেক্ষা করেন। শুধু তা-ই নয়, অভিযোগ, রেলের অনুমতি ছাড়াই বাইরে থেকে বাঁশের খুঁটিতে করে বিদ্যুতের তার এনে আলো জ্বালানো হয়। |
সন্তোষপুরেরই বাসিন্দা এবং প্যাসেঞ্জারস অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য জানান, বহু বার প্রশাসনকে বলেও লাভ হয়নি। ‘বেআইনি’ দোকান প্রসঙ্গে সন্তোষপুর-আক্রা স্টেশনের কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি আজম খান বললেন, “স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম এবং রানিং হকার মিলিয়ে আমার মোট ২০২ জন সদস্য আছে।” দোকানগুলি কি রেলের অনুমতি নিয়ে বসেছে? এ প্রশ্নের উত্তর না দিলেও আজম খানের দাবি, “আমরা ইউনিয়ন থেকে যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবেই হকারদের এক ধারে বসতে বলি। তা ছাড়া, প্ল্যাটফর্মে মোট ১০২ জন হকার বসেন। তাঁদের মধ্যে আমাদের ইউনিয়নের ৬৫ জন। বাকিরা সিটুর। বিদ্যুতের জন্য আবেদন করে আমরা প্ল্যাটফর্মের পিছনে মিটার বসিয়েছি। সেখান থেকে লাইন টেনে দোকানগুলিতে আলো জ্বালানো হয়। তা ছাড়া বাজারে জায়গা পাওয়া সত্ত্বেও কিছু ব্যবসায়ী প্ল্যাটফর্মে সব্জি নিয়ে বসেন।” এই স্টেশনের সিটু নিয়ন্ত্রিত হকার্স ইউনিয়নের নেতা অরুণ রায় বলেন, “আমাদের হকারের সংখ্যা অনেক কম। তাই নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কংগ্রেসের ইউনিয়নকে নিতে হবে।” বজবজ স্টেশনেও দখলদারি রয়েছে। যাত্রী-ছাউনির তলায় ফল বিক্রেতারা বসে থাকেন। যাত্রীদের কোনওক্রমে ছাউনির তলায় জায়গা করে নিতে হয় বলে অভিযোগ। |
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “প্ল্যাটফর্ম এ ভাবে দখল করা যায় না। কিন্তু হকার তোলার দায়িত্ব জিআরপির। তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে যাত্রীদের একাংশ এদের কাছ থেকে মালপত্র কেনেন। সমস্যাটি আর্থ-সামাজিক। ইউনিয়নগুলির সঙ্গেও কথা বলেছি। আশা করছি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।” |