|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা
সুরাহা কবে |
জলে ভাসা জীবন |
জয়তী রাহা |
উত্তর কলকাতার পাঁচটি ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমার সমস্যা আগেই ছিল। কিন্তু, এ বছর বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকেই ওই সব এলাকার মানুষ টের পাচ্ছেন, সমস্যা যে অবস্থায় ও যে মাত্রায় ছিল এখনও সেখানেই আছে। বদল হয়নি বিন্দুমাত্রও। আগামী বর্ষায় জল জমার সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে যে আশ্বাস প্রতি বছর শোনা যায় তা যে কতটা নিষ্ফল, কলকাতা পুরসভার ১ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জল-ছবিটা দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
এক নম্বর ওয়ার্ডের ‘উদ্যানবাটী’র সামনের রাস্তা কাশীপুর রোড। দীর্ঘ দিন ধরে কেইআইপি-র নিকাশির কাজ চলেছে এই রাস্তায়। খানাখন্দ ভর্তি রাস্তার এক ধারে গাড়ির সারি। একটু বৃষ্টি হলেই বিপজ্জনক এই রাস্তায় জল জমে এক হাঁটু। হাঁটুজল জমে গোবিন্দ মণ্ডল লেন (কাঁটাকল), নরেন্দ্র পাল রোডের মতো নিচু এলাকায়। জল জমে প্রাণনাথ শূর লেন-সহ ৯৫, ৯৬, ৯৯ ও ১০০ নম্বর বস্তি এলাকায়। বাসিন্দা শেখ শাকিলের কথায়: “ঘরে জল ঢুকে যায়। রান্নাবান্না, শোওয়া সব কিছুই খাটে বসে চলে।” কাঁটাকলের বাসিন্দা অমিয় চৌধুরী বললেন, “পরিস্থিতি বদলায়নি গত ২৫-৩০ বছরেও। এক তলায় থাকা যায় না এখানে। কেউ ভাড়াও নিতে চায় না। অনেকেই সাজানো বাড়ি সস্তায় বেচে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র।” স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের ইলা দাম বলেন, “নিকাশির সমস্যা এখানে দীর্ঘ কালের। তার উপর বস্তির অবৈধ নির্মাণ, নির্মাণ সামগ্রী এবং অসমাপ্ত কেইআইপি-র কাজের জন্য গালিপিট আটকে আছে। তাই এতখানি দুর্ভোগ”। |
|
দুই নম্বর ওয়ার্ডের জলমগ্ন অঞ্চল সেন্টার সিঁথি, দীপেন ঘোষ সরণি, কালীচরণ ঘোষ রোডের মতো এলাকা। বৃষ্টি হলেই জল জমে ৫ নম্বর, ফোয়ারা মোড়, রেডিও গলিতে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রায়পাড়া বাই লেন, রাজাবাগান লেনের। “রাজাবাগানের জল হাঁটু ছাড়িয়ে যায়। প্রতিটি বাড়ির ভিতর জল ঢোকে। যাঁরা এক তলায় বা নিচু বাড়িতে থাকেন তাঁদের সংসার এখানে খাটের ভরসায়।” বলছেন বাসিন্দা অসীম সরকার। স্টেশন রোডে জল জমলে দোকান-বাজার বন্ধ হয়ে যায়। মাত্র কয়েক দিন আগের বৃষ্টিতেই প্রায় দশ ইঞ্চি জল জমেছিল।
জল জমে গেলেই দমদম রোডের একাংশ রীতিমতো দিঘির চেহারা নেয়। ব্যবসায়ী হীরেন দত্তের অভিযোগ, “বর্ষার নামেই আতঙ্ক। রাত জেগে জিনিসপত্র তুলতে হয়। গত দু’টো বর্ষায় বৃষ্টি কম হওয়ায় কিছুটা রেহাই পেয়েছিলাম।” রায়পাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২০০৭ থেকে শুরু হয়েছে ওয়ার্ডে নিকাশির কাজ। কিন্তু তার ফল কবে পাবেন তাঁরা তা জানেন না। আগের থেকে ছবিটা একদমই বদলায়নি। এই বর্ষাতেও সেটা বোঝা যাচ্ছে। যদিও স্থানীয় পুর প্রতিনিধি তৃণমূলের শান্তনু সেনের দাবি, “আগের থেকে পরিস্থিতি ভাল। একটু বৃষ্টি ধরলেই পাম্প চালিয়ে জল নামানো হয়েছে। যেহেতু কেইআইপি-র পুরো কাজ শেষ হয়নি তাই এর সুফল এখনও পাচ্ছেন না মানুষ।” |
|
তিন নম্বর ওয়ার্ডেও কোথাও হাঁটু, কোথাও বা কোমর ছোঁয়া জল জমে। কুণ্ডু লেনের সাত নম্বরের দিকে, পাইকপাড়া ফার্স্ট রো, অনাথদেব লেন, বীরপাড়া এ বারেও জলের তলায়। বীরপাড়ার বাসিন্দাদের বক্তব্য, এখানে একটি চওড়া নর্দমা রয়েছে। নর্দমা উপচে রাস্তা আর নর্দমার জল মিশে যায়। না জানা থাকলে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাঁরাই সাবধান করে দেন মানুষকে।” গত বছর স্থানীয় তৃণমূল পুর প্রতিনিধি ব্রজেন্দ্রকুমার বসু দাবি করেছিলেন, জে কে মিত্র রোডে জল জমার সমস্যা আর নেই। কেইআইপি-র কাজের সাফল্য এটি। কিন্তু এ বছর আবার জলমগ্ন জে কে মিত্র রোড নিয়ে কার্যত হতাশ ব্রজেন্দ্রবাবু বলেন, “বাঙুর পাম্পিং স্টেশনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট, দত্তবাগান পাম্পিং স্টেশন থেকে জল উপচে আসার জন্য এমনটা হয়েছে। তার উপর কেইআইপি-র কাজ এখন আশুবাবুর বাজারের কাছে চলেছে।”
জমা জলের সমস্যাসঙ্কুল চার নম্বর ওয়ার্ডের রানি দেবেন্দ্রবালা রোড, রানি ব্রাঞ্চ রোড, রানি হর্ষমুখী রোড, শ্রীনাথ মুখার্জি লেন, তারিণীচরণ ঘোষ লেন এলাকায় কয়েক দিন আগের প্রবল বর্ষণে জল কোথাও হাঁটুর ওপর, কোথাও কোমর ছাড়িয়ে যায়। স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের পুষ্পালি সিংহ বললেন, “আগামী বছর জুনের আগে কেইআইপি-র কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।” অতএব দুর্ভোগ অব্যাহত। |
|
পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় কম-বেশি জল জমলেও সব থেকে খারাপ অবস্থা পরেশনাথ মন্দির ও ওলাইচণ্ডী মন্দির এলাকায়। সেখানে এক কোমর জল। স্থানীয় পুর প্রতিনিধি ও এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তৃণমূলের তরুণ সাহা বলছেন, “প্রথমত, কেইআইপি-র কাজ এখনও চলছে। তাই কোনও সংযোগ দেওয়া হয়নি। অতএব পুরনো পদ্ধতিই এখনও বহাল। দ্বিতীয়ত, এত পরিমাণ বৃষ্টি তো দুর্যোগ। সাধারণ বৃষ্টি হলে এত সমস্যা হবে না।” যদিও বাসিন্দাদের ক্ষোভ, বর্ষাকালে কম-বেশি বৃষ্টি হবেই। কিন্তু, কোটি কোটি টাকা খরচ করার পরেও সমস্যা থেকে যদি রেহাই পাওয়া না যায় তা হলে এত খরচের অর্থ কী?”
মেয়র পারিষদ (নিকাশি) রাজীব দেব বলেন, “দত্তবাগান ও বাঙুর পাম্পিং স্টেশনে আরও দু’টি নতুন পাম্প বসানো হচ্ছে। তাতে কিছুটা সমস্যা মিটবে।” তিনি জানান, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতিতে সাকশান দিয়ে ময়লা পরিষ্কারের কাজ আরও নিয়মিত করা হবে। মেয়র পারিষদের বৈঠকে বাকেট মেশিন কেনার প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এর ফলে মানুষ ছাড়া সম্পূর্ণ যান্ত্রিক উপায়ে ময়লা বের করে আনা যাবে। এ ছাড়াও বৃষ্টি একটু কমলেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা পাম্প চালিয়ে জল বের করে দিচ্ছেন। |
|
|
|
|
|