উত্তর কলকাতা
নাকাল পথচারী
পথ জুড়ে...
সাবওয়ের বাইরেই ফুটপাথ জুড়ে হকার বসেছে। চলছে খাবারের দোকান। চার দিক নোংরা। সামনের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে বাস, মালবাহী ভ্যান ও টানা রিকশা। একই পথ ব্যবহার করেন অসংখ্য ট্রেনযাত্রীও। ফলে প্রায়ই জট লেগে যায়। ব্যস্ত সময়ে জট চরমে ওঠে। শিয়ালদহ সাবওয়ের বাইরে বিদ্যাপতি সেতু বা শিয়ালদহ উড়ালপুলের নীচে এই দুর্ভোগ নিত্যদিনের।
সাবওয়ে থেকে বেরিয়েই বেলেঘাটা মেন রোড। এই রাস্তা দিয়ে এক দিকে শিয়ালদহ কোর্ট, অন্য দিকে লালবাজারে যাওয়া যায়। শিয়ালদহ কোর্ট এবং রাজাবাজার ট্রাম ডিপো থেকে সরকারি বাস এই পথে চলাচল করে। অনেক ট্রেনযাত্রী এই পথ ব্যবহার করেন। শিয়ালদহ সাবওয়ে হয়ে প্রতি দিন মৌলালির অফিসে পৌঁছতে হয় ব্যারাকপুরের রিমিতা মৌলিককে। রিমিতার কথায়: “এই পথ পেরোতেই অনেক সময় লাগে। প্রচণ্ড ধাক্কাধাক্কি হয়।” একই অভিযোগ অনির্বাণ সাঁতরার। তিনি বলেন, “প্রচণ্ড ব্যস্ত রাস্তা। বাস, টেম্পো, অটো সবই চলে। গাড়ি দাঁড় করিয়ে মালপত্র ওঠানো-নামানোর কাজ চলে। মাঝেমধ্যেই যানজট তৈরি হয়।”
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, স্টেশন চত্বর হওয়ায় মালবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। চলে মালবাহী ভ্যান ও সাইকেলও। ফলে জট চরমে ওঠে। এর উপরে রয়েছে হকার। শিয়ালদহ উড়ালপুল তৈরি হওয়ার সময়ে কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের জন্য শিশির মার্কেট তৈরি করে দেওয়া হয়। উড়ালপুলের নীচে শিশির মার্কেটের পাশ দিয়ে সমান্তরাল ভাবে চলে যাওয়া রাস্তাটির কিছু অংশ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড। বাকি অংশ আচার্য জগদীশচন্দ্র রোড। এই রাস্তা জুড়ে নানা মালপত্র নিয়ে হকার বসে। কয়েকটি জায়গায় কার্যত পুরো ফুটপাথই হকারদের দখলে। কয়েকটি জায়গায় পথচারীদের জন্য এক ফালি জায়গা পড়ে আছে। ভিড় এড়িয়ে কোনওক্রমে হাঁটতে হয়।
এক নিত্যযাত্রীর কথায়: “সোজা হাঁটার জো নেই। সরু রাস্তার দু’দিকে সব্জি ও ফলমূল নিয়ে হকাররা বসেন। মালপত্র ওঠানো-নামানোর সময়ে গায়ে এসে পড়ে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, “কাছেই দু’টি স্কুল আছে। স্কুল শুরু আর ছুটির সময়ে অনেক ছাত্রছাত্রী আসে। তখন খুব সমস্যা হয়।” যদিও ফরওয়ার্ড ব্লক নিয়ন্ত্রিত বেঙ্গল হকার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর শিয়ালদহ ইউনিটের সম্পাদক বিজয় করের বক্তব্য: “এই রাস্তায় গাড়ি কম চলে। পথচারীরাই বেশি ব্যবহার করেন। অতএব হকারদের জন্য কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
সাবওয়ে থেকে বেরিয়েই ফুটপাথ জুড়ে খাবারের দোকান বসে গিয়েছে। রাস্তার উপরে বেঞ্চ পেতে ব্যবসা চলছে। ভুগতে হচ্ছে পথচলতি মানুষকে। যদিও বিজয়বাবুর দাবি, “ওঁদের সরে যাওয়ার জন্য অনেক বার বলা হয়েছে। চেষ্টা করব বোঝানোর।” অন্য দিকে, মধ্য কলকাতা জেলা তৃণমূল হকার্স ইউনিয়নের সেক্রেটারি সুকুমার শোনকার বলেন, “যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।”
এই অঞ্চলটি পুরসভার ৪৯ এবং ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের মৌসুমী দে বলেন, “পথচারীদের জন্য জায়গা ছেড়ে হকারদের বসতে বলা হয়েছে। যতটা পারি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। ওখানে সে রকম সমস্যা আমার নজরে পড়েনি।” ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের অপরাজিতা দাশগুপ্ত বলেন, “বহু বার হকারদের নিয়ে বসেছি। হকার নিয়ন্ত্রণ পুলিশের দায়িত্ব। তাঁদেরও জানিয়েছি।”
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) দেবব্রত মজুমদার বলেন, “ওই রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। এত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এই অবস্থায় থাকা উচিত নয়। পুলিশের সঙ্গে কথা বলব। সব হকার সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে হকারদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পথচারীদের সুবিধার কথাও মাথায় রাখা হবে।” ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনার ট্রাফিক বিশাল গর্গ বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

ছবি অর্কপ্রভ ঘোষ
First Page

Kolkata

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.