|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা:লেকটাউন, বারাসাত
উদ্যোগী সাংসদ |
মুমূর্ষু হাসপাতাল |
অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য |
বছর পাঁচেক আগে ১০ লক্ষ টাকারও বেশি খরচ করে তৈরি হয়েছিল অত্যাধুনিক আইটিইউ। কিন্তু, তা এখনও চালু হয়নি উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত জেলা হাসপাতালে। অবহেলায় পড়ে থাকা দামি বিদেশি যন্ত্রপাতি এখন মরচে ধরে নষ্ট হচ্ছে সেখানে। শুধু তাই নয়, রয়েছে হাজারো সমস্যা, কথায়-কথায় কলকাতার হাসপাতালে রোগী স্থানান্তর।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই সব সমস্যা দূর করতে নামলেন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। জেলা প্রশাসনের কর্তা থেকে শুরু করে হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে বৈঠক করে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ প্রস্তাব। কাকলিদেবী বলেন, “সাংসদ তহবিলের ১ কোটি টাকায় বারাসত হাসপাতাল ছাড়াও মধ্যমগ্রাম ও ছোটজাগুলিয়া হাসপাতালেরও সমস্যাগুলি দূর করা হবে। নেওয়া হচ্ছে কয়েকটি নতুন প্রস্তাবও। দেড় মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে।” |
|
হাসপাতাল পরিদর্শনে বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার |
হাসপাতাল ঘুরে জেলা হাসপাতালের একরাশ সমস্যা উঠে এসেছে। হাসপাতালের কর্মী ও রোগীরাই অভিযোগ তুলেছেন, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার তৈরি হলেও শল্য চিকিৎসার জন্য আগে দিন পেতে কর্মীদের টাকা দিতে হয়। আরও অভিযোগ উঠেছে, এই হাসপাতালের এক শ্রেণির চিকিৎসকই বিভিন্ন নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত। কিছু দালাল, কর্মী ও চিকিৎসকের মধ্যস্থতায় হাসপাতালের রোগীদের নার্সিংহোমে না হলে কলকাতার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত বিনিময় বা ‘ক্রস ম্যাচিং’ করার উপায় নেই এখানে। মহকুমা হাসপাতালে ব্যবস্থা থাকলেও বেলা ২টোর পর এক্স-রে বা দুর্ঘটনায় আহত কোনও রোগী এলে চিকিৎসক ও কর্মীদের ডাকার ব্যবস্থাও নেই। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও সাফাইকর্মীর সংখ্যা এখানে অর্ধেকেরও কম। বার্ন ইউনিট নেই। মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য আলাদা বিভাগ থাকলেও হাসপাতালের মধ্যেই চিকিৎসার অভাবে পড়ে থাকেন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ। রোগী দেখতে দেখতে আবার ‘কাজে’ বেরিয়ে যান অনেক চিকিৎসক। সকাল-সন্ধে রোগী দেখার পর আত্মীয়দের সঙ্গে কথাও বলেন না অনেক চিকিৎসক। |
|
জননী সুরক্ষা যোজনা ও প্রসূতিদের যাতায়াত ভাড়া বা বিপিএল রোগীদের টাকা পাওয়ায় ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ নানা জটিলতায় সেই টাকা মেলে না। রোগীদের প্রতীক্ষালয়ে এখন রয়েছে পুলিশ আবাস। ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আত্মীয়স্বজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় খোলা আকাশের নীচে। হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স মাঝেমধ্যেই খারাপ হয়ে পড়ে থাকে। না হলে চিকিৎসকদের বাড়ি থেকে আনতে যায় অ্যাম্বুল্যান্স। হাসপাতালের মধ্যে ডাঁই করে ফেলা নোংরা আবর্জনায় দুর্গন্ধে হাসফাঁস অবস্থা রোগী ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে কিছুই নেই এই হাসপাতালে। সন্ধ্যা হতেই পুলিশ মর্গ, ব্লাড ব্যাঙ্ক, নার্স-ডক্টরস আবাসন সংলগ্ন অঞ্চল কার্যত নেশারু ও সমাজবিরোধীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে যায়।
হাসপাতাল সুপার পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘পরিকাঠামোর কারণে এই ধরনের বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। কর্মী সমস্যা রয়েছে। আইটিইউ চালু করার জন্য আরএমও লাগবে। এই সব সমস্যার সমাধান ও কিছু নতুন পরিকল্পনা নিয়েছেন সাংসদ। সে সব জানিয়ে রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। সাংসদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হবে।”
কাকলিদেবী বলেন, “এই সব সমস্যা দূর করার পাশাপাশি বার্ন ওয়ার্ড, মানসিক রোগী, আর্সেনিক আক্রান্তদের জন্য আলাদা বিভাগ চালু হবে। ডায়াবেটিস, চোখের রোগ, রক্তচাপজনিত সমস্যার চিকিৎসা শুরু হবে। হাসপাতালের ভিতরে-বাইরে ইঁদুর, বেড়াল, দালালের উৎপাতও বন্ধ করা হবে। এ সব ঠিক করলেই আর কথায়-কথায় কলকাতার হাসপাতালে রোগী পাঠানো বন্ধ হয়ে যাবে।”
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|