|
|
|
|
মারা গেলেন মণিলাল, শোকে ভার দুই শহর |
সৌমিত্র কুণ্ডু • শিলিগুড়ি |
অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার! বৃষ্টিও হচ্ছিল থেকে থেকেই। তার মধ্যে খবরটা যখন পৌঁছয় তখন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ল শহরবাসীর হৃদয়ও। তিনি আর নেই! উত্তরবঙ্গের সেরা ফুটবলার মণিলাল ঘটক শুক্রবার সকালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। কলকাতার যোধপুর পার্কের বাড়িতে। জলপাইগুড়ির বাবুপাড়ায় তাঁর বাড়িতে, তাঁর এই শহরের পরিচিত মানুষদের কাছে খরবটা পৌঁছতে আর দেরি হয়নি। জলপাইগুড়ি টাউন ক্লাবের এক সময়ের ফুটবলার তথা গোলকিপার কলকাতার ময়দানে সাড়া ফেলেছিলেন। কলকাতা লিগ, আইএফএ শিল্ড লাল হলুদ শিবিরে এসেছে এক সময় তাঁর হাত ধরেই। কার্যতই তাঁর মৃত্যুতে শোক বিহ্বল উত্তরের ক্রীড়া মহল। পঞ্চাশের দশকের সাড়া জাগানো ওই ফুটবলারের সঙ্গে এই শহরের সম্পর্কটা বরাবরের। তাঁর সমসাময়িক জলপাইগুড়ির আরেক কিংবদন্তী ফুটবলার ছিলেন রুনুগুহ ঠাকুরতা। শহরের টাউন ক্লাবের মাঠে তাদের দু জনকে একই সঙ্গে খেলতেও দেখেছেন প্রবীণদের অনেকে। তাঁদের পরবর্তীতে সুকল্যাণ ঘোষ দস্তিদার, প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ফুটবলার উঠে এসেছে এই শহর থেকে। খেলার তাগিদে কলকাতায় চলে গেলে মণিলালবাবু মাঝে মধ্যেই জলপাইগুড়িতে আসতেন। তাঁর একটা বড় কারণ জলপাইগুড়ি এবং ডুয়ার্সে বিভিন্ন চা বাগানে রাসায়নিক সার সরবরাহের তাঁর একটা ব্যবসা ছিল। ২০০৫ সাল পর্যন্ত সে কারণে তাঁকে এখানে প্রায়ই আসতে দেখা যেত। তার পরেও বছরে ১/২ বার আসতেন। বিশেষ করে পুজোর সময় শহরে কাটিয়ে যেতেন কয়েকটা দিন। এমন মানুষের প্রয়াণ স্মৃতির সরণিতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় সন্টু চট্টোপাধ্যায়, অশোকপ্রসাদ রায়দের মতো শহরের প্রবীণ বাসিন্দাদের। দু’ জনেরই চোখের মণি ছিল অকৃতদার মণিলাল দা। বিকেল ৩ টা হলেই টাউন ক্লাবের মাঠে হাজির হতেন তাঁরা। কোচ অবশ্যই মণিলালদা। তাঁর কাছ থেকেই ফুটবল প্রশিক্ষণ নিতেন সন্টুবাবুরা। সন্টুবাবু নিজেও গোলকিপারে খেলতেন। সে কারণে মণিলালদা তাঁর কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছিল। কয়েক বছর আগেও জলপাইগুড়িতে এলে সকালে দৌড়তে যেতেন। সঙ্গ দিতেন সন্টুবাবুরাও। অশোকবাবু এখন কলকাতায় থাকেন। এ দিন সকালে তিনিই ফোন করে সন্টুবাবুকে দুঃসংবাদটা দেন। বাড়িতে পড়ে অসুস্থ জেনে ২৬ জুন অশোকবাবু, সন্টুবাবুরা যোধপুর পার্কের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের প্রিয় মণিদার সঙ্গে দেখাও করে আসেন। “তাঁর মৃত্যু আজ, মনে শূন্যতার সৃষ্টি করেছে”—জানালেন সন্টুবাবু। জলপাইগুড়ির বাবুপাড়ার বাড়িতে রয়েছেন ভাই রেণুলাল ঘটক এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা। খবর পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে। শহরে মণিলালের চেনা পরিচিতদের ফোনেই খবর জানান সন্টুবাবুরা। তা শুনে বাবুপাড়ার বাড়িতে আসেন অনেকেই। টাউন ক্লাবে সংস্থার পতাকা অর্ধনমিত থাকে। সন্টুবাবু বলেন, “জলপাইগুড়ির টাউন ক্লাবের হয়ে দীর্ঘদিন ফুটবল খেলেছেন মণিলালদা। চল্লিশের দশকের শেষের দিকে প্রথমে জর্জ টেলিগ্রাফ এবং তার পরে ইস্টবেঙ্গল দলের হয়ে খেলেন। পার্ক স্ট্রিটে মেসে থাকতেন। তার অতিথি হয়ে আমরা খেলা দেখতে যেতাম। দিন কয়েক আগেই তাঁর সঙ্গে দেখাও করে এলাম। পুরনো দিনগুলির কথা আজ বারবার মনে পড়ছে।” উত্তরের কিংবদন্তী ওই ফুটবলারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব অঞ্জন সেনগুপ্ত, শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সচিব নান্টু পাল কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব জগৎরঞ্জন ভট্টাচার্য সকলেই। |
|
|
|
|
|