জেনকাপুরের রথ ঐতিহ্যে আজও অনন্য
ম্প্রীতির ঐতিহ্যে আজও অমলিন জেনকাপুরের রথযাত্রা। প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন এই উৎসব দুই মেদিনীপুরের মানুষের কাছেই সমান জনপ্রিয়। রাজরাজড়ার অনুষঙ্গে অতীত ঐতিহ্য আর নানা সম্প্রদায়ের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান এই উৎসবকে অনন্য করে তুলেছে। মেদিনীপুরের জনৈক লোককবির রচনানুসারে, ‘গৌড়েশ্বর শশাঙ্ক শরশঙ্কা করিল খনন/তাহার পূর্ব পার্শ্বে জেনকাপুর রাজবংশে/আদিরাজা রায় কালীয় গঞ্জন।’ দাঁতন শহরের ১০ কিলোমিটার পূর্বে জেনকাপুর গড়। মেদিনীপুরের প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায়, কলিঙ্গরাজ গঙ্গদেব খ্রিস্টিয় দ্বাদশ শতকে মেদিনীপুর-সহ দক্ষিণ রাঢ় অঞ্চল তাঁর শাসনসীমার অন্তর্ভুক্ত করেন। সেই সময় নদী ও সমুদ্র উপকূলবর্তী এইর্ অঞ্চলের জনজীবন জলদস্যুদের দাপটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। কলিঙ্গ-সম্রাট দেবরাজের নির্দেশে জলদস্যু দমনে দুঃসাহসিক অভিযান চালান গঞ্জাম থেকে আসা কালীয় গঞ্জন। অভিযানে সফল হয়ে গঞ্জন পারিতোষিক স্বরূপ রাজা উপাধি ও বেশ কিছু তালুক লাভ করেন। পরবর্তীকালে দিল্লি কেন্দ্রিক মুঘল বাদশা ও ব্রিটিশ সরকার এই রাজপরিবারের উপাধি এবং জমিদারি বহাল রাখে। এই পরিবারের উত্তরসূরিরা বিভিন্ন সময়ে চৌধুরী, রায়, প্রদল, সিংহ, ভুঁইয়া ইত্যাদি নানা উপাধি পান।
নিজস্ব চিত্র।
ষোড়শ শতকের প্রথম ভাগে জেনকাপুরে গড় স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু রথোৎসব। মেলার সূচনাও সমসাময়িক। রায় পরিবারের এই রথ শুরু হয় জৈষ্ঠ্য মাসের স্নানযাত্রায়। রথযাত্রার আগের দিন নেত্র উৎসবের মাধ্যমে মেলার সূচনা হয়। রায় পরিবারেত সদস্য অতুলকৃষ্ণ রায়, অচিন্ত্যকৃষ্ণ রায়রা জানালেন, আগে ৪০ ফুট উঁচু ৯টি চূড়া বিশিষ্ট রথ ছিল। এখন প্রায় ২২ ফুট উঁচু পঞ্চচূড়ার রথে দেবদেবী যাত্রা করেন। মূলত পারিবারিক উৎসব হলেও গোড়া থেকেই তা সর্বজনীন রূপ পেয়েছে। সেই সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য। পরিবারের সদস্য বিশিষ্ট চিকিৎসক অনাদিকৃষ্ণ রায়, বিশ্বব্রত রায়রা জানালেন, কালীয় গঞ্জন উদার ধর্মীয় চেতনার মানুষ ছিলেন। তাঁর আমল থেকেই নানা সম্প্রদায়ের মানুষ এই উৎসবে মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। রীতি মেনে আজও রাজবংশের প্রধান পুরুষ প্রথম রথের রশিতে টান দেন। বিগ্রহগুলি সাজানো হয় সোনা-রুপোর অলঙ্কারে। প্রথা মেনেই পালিত হয় যাবতীয় আচার। রথের দিন খোল-কীর্তন সহযোগে শোভাযাত্রা বেরোয়। আদিবাসীরাও ধামসা মাদল নিয়ে সামিল হন। শোভাযাত্রার আগেই আদিবাসী নৃত্য পরিবেশিত হয়। রথের গায়ে তুলসির মালা বেঁধে মানত করেন নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ। রায়বাড়ির মন্দির সংলগ্ন বিরাট মাঠে বসে মেলা। তিন দিন ধরে বিকিকিনি চলে। রায়বাড়ির নবনির্মিত মন্দিরে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার সঙ্গেই রয়েছেন রাম-সীতা-রাধাকৃষ্ণ। এখানেও প্রতিফলিত সেই সহাবস্থানের ছবি।
Previous Story Medinipur Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.