একটু জোরে বৃষ্টি হতে না হতেই ভেঙে যায় কংসাবতীর অ্যানিকেত বাঁধ। প্রতি বর্ষায় এই এক ছবি। এ বারও মেদিনীপুর শহর লাগোয়া এই বাঁধ মাত্র দু’দিনের বৃষ্টিতেই ভেঙে গিয়েছে। অথচ অ্যানিকেতের নীচেই রয়েছে স্টনিস গেট। নিয়মমতো সেই গেট খুলে দিলেই খাল দিয়ে জল বেরিয়ে যায়। নদীতে জল বাড়লেই গেট খুলে দেওয়ার কথা। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে এ বার আর তা খোলা হয়নি। ফলে, জলের চাপে ফের ভেঙেছে অ্যানিকেত। এখন প্রশ্ন, স্টনিস গেট খোলা হল না কেন? সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া নিজেই এই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “কেন ও কার নির্দেশে ওই গেট খোলা হয়নি তা তদন্ত করে দেখা হবে। গেট না খোলার জন্যই আবার বাঁধটি ভেঙেছে। তদন্তে যাঁর বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
২০০৭ সালে ভয়াবহ বন্যা হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে। জুলাই, অগস্ট ও সেপ্টেম্বর পরপর তিন মাসে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয় জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায়। বানভাসি হন বহু মানুষ। জুলাইয়ে তেমন কোনও ক্ষতি না হলেও অগস্ট ও সেপ্টেম্বরের বন্যায় অ্যানিকেতের একটি অংশ ভেঙে পড়ে।কংসাবতীর এই অ্যানিকেত বাঁধটির দৈর্ঘ্য ৫১৬.১ মিটার। তার মধ্যে উঁচু অংশটি ৩৬৮.৮০ মিটার (হাই ওয়্যার), আর তার ঠিক নীচের অংশটি ৯১.৪৪ মিটার (লো ওয়্যার)। তারপর রয়েছে ৩৭.৫৭ মিটারের বে শাটার। আর স্টনিস গেট ১৮.২৯ মিটারের। ২০০৭ সালের বন্যায় বাঁধের ৯১.৪৪ মিটার অংশ অর্থাৎ লো ওয়্যারটি একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। আর হাই ওয়্যারের প্রায় ১৫০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তা সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের বন্যায় আবারও ৩৫ মিটার অংশ ভেঙে পড়ে। পুনরায় তার সংস্কারে ব্যয় হয় প্রায় দু’কোটি টাকা। কিন্তু পরপর দু’বার প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ করেও যে কাজের কাজ হয়নি, তার প্রমাণ এ বছর ফের অ্যানিকেতের ভেঙে পড়া। স্বভাবতই সেচ দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। টাকা নয়ছয়ের অভিযোগও উঠছে। এই প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন সেচ দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মানস ভারতী। তাঁর বিরুদ্ধেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। এই মানস ভারতীকেই কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাহলে কি সঠিক তদন্ত হবে? মন্ত্রীর জবাব, “তদন্ত হোক। তারপরই বোঝা যাবে।” সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার অ্যানিকেতকে আধুনিক পদ্ধতিতে সংস্কার করা হবে। ইট-সিমেন্ট নয়, স্টিলের পাত দিয়ে তৈরি করা হবে বাঁধ। এর জন্য ৬০ কোটি টাকা ব্যয় ধার্য করা হয়েছে। ধাপে ধাপে কাজ হবে। প্রথম ধাপে বাঁধের ২১০ মিটার অংশ নতুন ভাবে তৈরি করা হবে। প্রকল্প রিপোর্ট ইতিমধ্যেই নাবার্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প রূপায়ণের অনুমতি ও অর্থ গেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে সেচ দফতর জানিয়েছে। তবে সেই কাজ এ বছর বর্ষার মধ্যে হবে না। ফলে, অ্যানিকেত-সঙ্কট মেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
|