রাজ্যজুড়ে বাম কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলার খতিয়ান দিয়ে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র। এ নিয়ে চাপানউতোরের মধ্যেই সূর্যকান্তবাবুর নিজের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমের চন্দ্রকোনা রোড জোনাল কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটল শুক্রবার। গুরুতর জখম হলেন সাত জন নেতা-কর্মী। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের অভিযোগ, “তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই হামলা চালিয়েছে।” সরাসরি অভিযোগ অস্বীকার করেননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। তাঁর বক্তব্য, “শুনেছি চন্দ্রকোনা রোডে সিপিএম পার্টি অফিসে হামলা হয়েছে। ঘটনাটি নিন্দনীয়। যদি দলের কেউ জড়িত থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খোঁজ নিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বকে সব জানাতে বলেছি।”
|
সিপিএমের দাপুটে নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষের খাসতালুক চন্দ্রকোনা রোড। এলাকায় থাকলে চন্দ্রকোনা রোডের এই পার্টি অফিসেই দীর্ঘক্ষণ কাটাতেন সুশান্তবাবু। তিনি এ বারও জিতেছেন। তবে রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই এলাকায় সিপিএমের প্রভাব ক্রমশ কমেছে। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, এ দিন বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ চন্দ্রকোনা রোড সংলগ্ন নবকলা, মেটাডহর, রাঙামাটি গ্রাম থেকে তৃণমূল সমর্থকেরা এসে জোনাল অফিসে হামলা চালায়। ভাঙচুর, লুঠপাট, নেতা-কর্মীদের মারধর সবই চলে। চন্দ্রকোনা রোড জোনাল কমিটির সম্পাদক সনাতন মাঝি, জেলা কমিটির সদস্য অরবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সাত জন গুরুতর জখম হন। তাঁদের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও চন্দ্রকোনা রোড ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পুলিশকে লক্ষ করে ছোড়া হয় ইট-পাথর। সাংবাদিকদের ক্যামেরা, মোটরবাইকও ভাঙচুর করা হয়। জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, “পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তল্লাশি শুরু হয়েছে।” গোয়ালতোড়, হুমগড়, গড়বেতা থেকে কিছু সিপিএম নেতা এসে চন্দ্রকোনা রোডের পার্টি অফিসে রয়েছেন। সেখানে আছেন গড়বেতা, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা রোডের কিছু ঘরছাড়া নেতা-কর্মী। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা এ দিন ওই পার্টি অফিসের সামনে জড়ো হন। চন্দ্রকোনা রোড রেল স্টেশনের পাশেই রয়েছে সিপিএমের দোতলা কার্যালয়টি। হামলার সময় পার্টি অফিসে বৈঠক চলছিল। সিপিএমের গোয়ালতোড় জোনাল কমিটির সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসাদ দুলের অভিযোগ, “বৈঠকের মধ্যেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা পার্টি অফিসে ঢুকে লোহার রড, লাঠি নিয়ে মারধর শুরু করে দেয়।” অভিযোগ, তছনছ করা হয় দলীয় অফিস। বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি ছিঁড়ে ফেলা হয়। নগদ কয়েক হাজার টাকা লুঠ করা হয়। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা সুশান্ত ঘোষের স্ত্রী করুণাদেবীর কথায়, “তৃণমূলের গুন্ডারা দলের কর্মীদের জন্য রান্না করা ভাত-তরকারিও নষ্ট করে দেয়।” ঘটনাস্থলে এসেছিলেন ডিএসপি (ক্রাইম) ওয়াংদেন ভুটিয়া-সহ জেলার পুলিশ আধিকারিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছে পুলিশ। |