ডানকুনিতে রেল কারখানা নির্মাণের উপরে কলকাতা হাইকোর্ট যে-স্থগিতাদেশ দিয়েছিল, শুক্রবার তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে আপাতত ওই কারখানা তৈরির বাধা দূর হল ঠিকই। তবে সংশ্লিষ্ট জনস্বার্থের মামলায় যদি দেখা যায় যে, রেল জলাভূমি বুজিয়ে কারখানা গড়েছে, তা হলে রেলকেই সেই নির্মাণ ভেঙে জলাভূমি ফিরিয়ে দিতে হবে।
রেল ওই এলাকায় কারখানা তৈরির কাজ শুরু করার পরেই ডানকুনির বাসিন্দাদের তৈরি জলাভূমি বাঁচাও কমিটি একটি জনস্বার্থের মামলা দায়ের করে হাইকোর্টে। আবেদনে তারা জানায়, ওই কারখানা তৈরির জন্য নির্বিচারে জলাভূমি বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে ভীষণ ভাবে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কোনও অনুমতি না-নিয়েই ওখানে জলাভূমি বোজানোর কাজ চলছে। ওই এলাকার জমা জল যে-সব খাল দিয়ে নদীতে গিয়ে পড়ে, বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেই সব খাল। এর ফলে পরবর্তী কালে জমা জল বেরোনোর আর কোনও পথই থাকবে না। বিপর্যস্ত হয়ে যাবে জনজীবন।
এই মামলার প্রথম দিকের শুনানির সময় রাজ্য সরকার ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফ থেকেও এই সম্ভাব্য বিপর্যয়ের ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলা শেষ হওয়া পর্যন্ত ওই কারখানা তৈরির কাজে স্থগিতাদেশ দেয়। এ দিন মামলার শুনানির সময় রাজ্য সরকারের পক্ষে অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পক্ষে নয়ন বিয়ানি হাজির ছিলেন। শুনানি শুরুর সময় আবেদনকারীদের পক্ষে বিকাশ ভট্টাচার্য হাজির ছিলেন না। পরে অবশ্য তিনি মামলায় যোগ দেন।
রেলের পক্ষে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ডানকুনিতে রেল যে-প্রকল্প হাতে নিয়েছে, রাজ্যের উন্নয়নের জন্য সেটা অত্যন্ত প্রয়োজন। মামলার জন্য যদি কাজ বন্ধ থাকে, তা হলে কর্মসংস্থান এবং সেই সঙ্গে রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন পিছিয়ে যাবে। তাই ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য ডিভিশন বেঞ্চের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে রেলের আইনজীবী বলেন, রেলের পক্ষ থেকে তিনি কথা দিচ্ছেন, মামলার বিচারে যদি দেখা যায় যে, বেআইনি ভাবে জলাজমি বোজানো হয়েছে, তা হলে রেল সেই সব নির্মাণ ভেঙে আবার জলাভূমি ফিরিয়ে দেবে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল এবং বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ রেলের এই প্রতিশ্রুতির কথা তাদের রায়ে উল্লেখ করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। সেই সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়, রাজ্য সরকার এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হলফনামা দিয়ে তাদের বক্তব্য জানাতে হবে। ২৯ জুলাই ফের মামলাটির শুনানি হবে। |