রাত পোহালেই রথযাত্রা।
হুগলির মাহেশের মতোই রথকে ঘিরে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায় গুপ্তিপাড়াতেও। প্রাচীন এই রথের রশিতে টান দিতে লাখো মানুষের সমাগম হয়। কিন্তু যে রথকে ঘিরে এই উৎসাহ, সেই রথেরই এখন জীর্ণদশা। প্রতি বছর রথযাত্রার কয়েক দিন আগে রথটিতে প্রয়োজনীয় মেরামত করা হয় ঠিকই, কিন্তু তার আমূল সংস্কারের দাবি ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের। একই দাবি শ্রীশ্রী বৃন্দাবনচন্দ্র জিউ অ্যান্ড এস্টেটেরও। তারাই রথযাত্রা পরিচালনা করে। তাদের অভিযোগ, রথটি সংস্কারের জন্য বলাগড় ব্লক প্রশাসনের উদাসীনতার জেরেই রাজ্যের পুরাতত্ত্ব দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট কাজের টাকা পেতে দেরি হচ্ছে।
গুপ্তিপাড়ার বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দিরে থাকে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার বিগ্রহ। রথের দিন বিগ্রহ তিনটিকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের মাসির বাড়ি বা গুণ্ডিচা ঘরে। এর ঠিক ৮ দিন পরে উল্টোরথের দিন গুণ্ডিচা ঘর থেকে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাকে ফের রথে চাপিয়ে মন্দিরে আনা হয়। মন্দির সংলগ্ন স্থানেই বছরভর রোদ-বৃষ্টির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকে সুদৃশ্য রথটি। ফলে, সংস্কারের পাশাপাশি রথের একটি শেড করারও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। |
এস্টেট সূত্রের খবর, গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা আড়াইশো বছরেরও বেশি পুরনো। প্রথম যে রথটি ছিল, সেটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ১৩টি চূড়াবিশিষ্ট সুদৃশ্য বিশালাকার একটি রথ তৈরি করা হয়। কিন্তু এক বার রথযাত্রায় রথের তলায় পিষ্ট হয়ে কয়েক জনের মৃত্যু হয়। তার পরে ১৯৫৭ সালে কাঠের রথটির কলেবর ছোট করা হয়। ১৩টি চূড়ার পরিবর্তে ৯টি চূড়া করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর রথযাত্রার আগে এর ছোটখাটো সংস্কার হলেও বর্তমানে চাকা-সহ এর বিভিন্ন অংশ জীর্ণ হয়ে পড়েছে। এস্টেটের কর্মকর্তাদের দাবি, ইতিমধ্যে রথের ঐতিহ্য এবং গুরুত্ব খতিয়ে দেখে রাজ্যের পুরাতত্ত্ব দফতর প্রায় ১০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে বলে তাঁদের জানানো হয়েছে। যদিও সেই টাকা পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি এস্টেট কর্তৃপক্ষের।
এস্টেটের প্রশাসক স্বামী গোবিন্দানন্দ পুরী বলেন, “রথটির আমূল সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু তার জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করার কথা আমাদের জানানো হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। রথ সংস্কার এবং শেড তৈরির জন্য অন্তত ২৮ লক্ষ টাকা জরুরি। সে কথা পুরাতত্ত্ব দফতরকে জানিয়েছি।” তাঁর দাবি, “ওই দফতর জানিয়েছে, বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব। এ জন্য বিডিও-র মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।” বিডিওকে অনুরোধ করা হলেও তিনি পুরাতত্ত্ব দফতরে এ ব্যাপারে চিঠি পাঠাতে গড়িমসি করছেন বলে অভিযোগ গোবিন্দানন্দ পুরীর।
গ্রামবাসীরাও দীর্ঘদিন ধরে রথ সংস্কারের দাবি তুলছেন। এ জন্য ‘রথ পুনর্নিমাণ কমিটি’ও তৈরি করা হয়েছে। কমিটির সদস্য গোপাল কর্মকার বলেন, “রথের সঙ্গে গুপ্তিপাড়ার ঐতিহ্য এবং ইতিহাস জড়িত। অবিলম্বে এর সংস্কার করা হোক।” একই বক্তব্য স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত মণ্ডলেরও।
চুঁচুড়া (সদর) মহকুমাশাসক জলি মুখোপাধ্যায় জানান, গুপ্তিপাড়ার রথটি সংস্কারের জন্য গত বছর একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে। ওই দফতরই বিষয়টি পুরাতত্ত্ব দফতরকে জানায়। সমীক্ষা করে পুরাতত্ত্ব দফতর সংস্কারের ৪০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু সেই টাকা এখনও আসেনি।
মহকুমাশাসকের বক্তব্য, “স্থানীয় প্রশাসনকে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, পুরাতত্ত্ব দফতর ৪০ শতাংশ টাকা দেবে। বাকি টাকা এস্টেটকেই জোগাড় করতে হবে। কিন্তু টাকা বাড়ানোর আবেদনের ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি।” ‘রথ পুনর্নিমাণ কমিটি’র সদস্য গোপালবাবুর অবশ্য দাবি, “আমাদের টাকা জোগাড় করতে হবে, এমন কথা কেউ জানাননি।” মহকুমাশাসক বলেন, “এত দিন রথ সংস্কারের বিষয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষ আমাকে কিছু জানাননি। এ বার ওঁরা আমাকে জানালে বিষয়টি নিশ্চয়ই গুরুত্ব দিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।” |