|
|
|
|
জোটবদ্ধ কংগ্রেস, কর্মীদের চাঙ্গা করার প্রস্তুতি |
আশিস বসু • আগরতলা |
জোটবদ্ধ লড়াই যদি পশ্চিমবঙ্গের সাড়ে তিন দশকের তথাকথিত ‘বাম-অচলায়তনকে’ ভেঙে ফেলতে পারে, তবে ত্রিপুরাতে দেড় দশকের বাম সরকারকে ধাক্কা কেন দেওয়া যাবে না?কার্যত এই বোধকে সামনে রেখেই বিধানসভা নির্বাচনের বছর দেড়েক আগে থেকেই ঘর গোছাতে উদ্যোগী হল ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। আপাতত রাজ্য কংগ্রেসের দুই যুযুধান গোষ্ঠীকে জোটবদ্ধ করা এবং দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়ানোই প্রদেশ নেতৃত্বের লক্ষ্য।
সেই লক্ষ্যের সূচনা তাঁরা করলেন গত বুধবার, এক বিশাল জনসভা দিয়ে। আপাতত, ২০১১ সালের দলীয় কর্মসূচির ‘ক্যালেন্ডার’-টিও তাঁরা চূড়ান্ত করেছেন। এবং এই লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে দিয়েই তাঁরা দলীয় কর্মী ও ভোটব্যাঙ্ককে চাঙ্গা করতে চাইছেন। বর্ষার জল-কাদার মধ্যে, মাথায় আষাড়ের জলভরা মেঘ নিয়ে প্রত্যন্ত জেলাগুলি থেকে যে ভাবে রাজধানী আগরতলার প্রগতি স্কুল ময়দানে কাতারে কাতারে কংগ্রেস কর্মীরা জড়ো হলেন, বসে বসে দুই গোষ্ঠীর নেতাদের বক্তব্য শুনলেন, মুহূর্মুহূ হাততালি দিলেন— তা ইদানীংকালের বিরল ঘটনা।
|
|
ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর সমাবেশে জনতার একাংশ। উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী |
ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস আয়োজিত এই বিক্ষোভ সমাবেশে রাজ্য কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ সব গোষ্ঠীকে এক মঞ্চে বসিয়ে কংগ্রেসের রাজনৈতিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ রাজ্যের বাম রাজত্বের অপসারণে ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিলেন ত্রিপুরা কংগ্রেসের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি সম্পাদক লুইজিনো ফেলেইরো। এই সমাবেশের প্রস্তুতি পর্বে ঘটা করে প্রচার করা হয়েছিল, এআইসিসি’র সাধারণ সম্পাদক রাহুল গাঁধী, এআইসিসি’র সম্পাদক জিতেন্দ্র সিংহ, অসমের মুখামন্ত্রী তরুণ গগৈ, পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের সভাপতি তথা সাংসদ মৌসম বেনজির নূর-সহ আরও অনেককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কাজও হয়েছে। আগরতলা শহরকে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল কংগ্রেসের পতাকা, সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধীর বড় বড় ‘ফ্লেক্স’ দিয়ে।
প্রগতি ময়দান অকুলান, সংলগ্ন রাস্তায় জনতার ঢেউ আছড়ে পড়ে। আদিবাসী দলীয় সমর্থকদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্যণীয়। ‘হেভিওয়েট’ আমন্ত্রিতদের অধিকাংশ না এলেও, এই সমাবেশে লুইজিনো ফেলেইরো ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এআইসিসি-র সম্পাদক কে জয়কুমার, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সুরজিৎ দত্ত, বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা রতনলাল নাথ, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সমীর রঞ্জন বর্মন-সহ কংগ্রেসের সমস্ত বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা। মঞ্চে এ দৃশ্য দেখে যারপরনাই খুশি দলীয় কর্মী ও সমর্থকরা। জনসংযোগ বৃদ্ধি এবং নেতা-কর্মীদের ঐক্য অটুট রাখতে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফ থেকে জুলাই থেকে ডিসেম্বর, ছ’মাসের নিরবিচ্ছিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
তবু কংগ্রেসেরই একটা অংশের মতে, এআইসিসি নেতাদের উপস্থিতিতে এই সমাবেশে যে ভাবে, যে ভাষায় বিজেপির ‘সাম্প্রদায়িক’ রাজনীতি এবং এ রাজ্যের বামফ্রন্টের প্রধান শরিক, সিপিএমের ‘দলতন্ত্রের’ বিরুদ্ধে কংগ্রেসের দুই গোষ্ঠী একত্রে আক্রমণ শানাল, তা স্মরণাতীত কালে প্রদেশ কংগ্রেসের কোনও জমায়েতে হয়নি। এতে কংগ্রেস নেতারা অনেকেই আশান্বিত। একই সঙ্গে তাঁরা সন্দিহানও, যুযুধান দুই গোষ্ঠী জোটবদ্ধ থাকবেন তো?
তাঁদের একটা বড় হতাশার জায়গাও তো রয়েছে: আমাদের তো ‘মমতা’ নেই। |
|
|
|
|
|