জাল টিকিট, জাল ভিসা
দুষ্ট চক্রের ফাঁদে বিদেশে চাকরির স্বপ্ন জলাঞ্জলি
ড়ানের নম্বর ‘এফডি ৩৭৮৩’। কলকাতা থেকে ব্যাঙ্কক যায় ‘তাই এয়ার এশিয়া’র এই উড়ান।
অথচ টিকিটে উড়ান নম্বর হিসেবে লেখা আছে ‘একে ৩৭৮৩’।
সেই টিকিট নিয়ে গিয়ে শুক্রবার সকালে কলকাতা থেকে উড়ান ধরতে পারলেন না ২৮ জন যুবক। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব-সহ বিভিন্ন রাজ্যের যুবক রয়েছেন সেই দলে। তাঁদের সকলেই চাকরির আশায় ব্যাঙ্কক ঘুরে সিঙ্গাপুর যাচ্ছিলেন।
সকালে ওই ২৮ জন। বিকেলে আরও ৪০ জন। কাজের আশায় বিদেশ যাওয়ার পথে প্রতারিত হয়েছেন ৬৮ জন। প্রত্যেকের কাছ থেকে গড়ে সওয়া এক লক্ষ টাকা নিয়ে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে জাল টিকিট আর ভিসা।
বিমানবন্দরের বাইরের ‘ডিসপ্লে বোর্ড’-এ পরপর উড়ানের নম্বর লেখা। এ দিন সকালে কলকাতা বিমানবন্দরের বাইরে সেই বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের টিকিটের সঙ্গে উড়ান নম্বর মিলিয়ে দেখতে গিয়ে প্রথম হোঁচট খান শেখ ইউনুস। দেখেন, তাঁর টিকিটে লেখা রয়েছে ‘একে ৩৭৮৩’। ‘একে’ কথাটি এয়ার এশিয়ার উড়ানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সেই উড়ান কলকাতা থেকে মালয়েশিয়া যায়। আর ‘তাই এয়ার এশিয়া’ ভিন্ন সংস্থা হিসেবে ব্যাঙ্কককে কেন্দ্র করে উড়ে বেড়ায়। সেটি অবশ্য এয়ার এশিয়ারই সহযোগী সংস্থা।
স্বপ্নভঙ্গ। প্রতারিত দুই যুবক। দেশকল্যাণ চৌধুরী
ই-টিকিটে কোনও ভুলচুক হয়েছে ভেবে বিমানবন্দরের গেটে সেই টিকিট দেখিয়ে সটান ভিতরে চলে যান ৪২ বছরের ইউনুস। তাঁর পিছনে আরও ২৭ জন যুবক। সিঙ্গাপুরের ‘পার্ক হোটেল’-এ তাঁদের চাকরি করার কথা। সকলের হাতেই বিমানের টিকিট। এবং সব টিকিটেই উড়ানের নম্বর ‘একে ৩৭৮৩’!
বিমান সংস্থার কাউন্টারে গিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁদের। জানা যায়, বিমানের টিকিট এবং একটি পাতায় করে দেওয়া সিঙ্গাপুরের ‘ভিসা’ দু’টিই জাল। টিকিটে যাত্রীর নাম লেখা নেই। পিএনআর নম্বরও ভুল। শেখ ইউনুস, নিসার খানেরা বুঝে যান, তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন।
সকালের ওই ২৮ জনের মতো বিকেলেও ভুয়ো টিকিট নিয়ে এসেছিলেন ৪০ জন। চাকরির জন্য বাংলাদেশের জিএমজি-র উড়ানে তাঁদের ঢাকা হয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। তাঁরাও যেতে পারেননি। মুম্বইয়ের এক সংস্থা এই ৬৮ জনের কাছ থেকে মাথাপিছু গড়ে সওয়া এক লক্ষ টাকা নিয়ে সকলের হাতেই ধরিয়ে দিয়েছে জাল বিমান টিকিট ও ভিসা। এ দিন কলকাতা বিমানবন্দর থেকে এঁদের বিদায় জানাতে যে-দু’জন দালালের আসার কথা ছিল, তাঁরা যথারীতি আসেননি।
রাঁধুনির কাজ করেন ইউনুস। হায়দরাবাদের একটি হোটেলে রান্না করতে করতে বন্ধু মারফত খবর পান, সিঙ্গাপুরের হোটেলে রাঁধুনির চাকরি হতে পারে। কাগজেও নাকি বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে। বন্ধু মুম্বই থেকে ফোনে বলেন, “ভিসা রেডি। তুই রাজি হলে মুম্বই চলে আয়।” মাসখানেক আগে মুম্বই গিয়ে ইন্টারভিউ দেন ইউনুস। ঠিক হয়, সিঙ্গাপুরের পার্ক হোটেলে ইউনুস মাসে ভারতীয় মুদ্রায় ৬৫ হাজার টাকা বেতন পাবেন। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও পাচকের কাজ করেছেন তিনি। পাসপোর্ট আগে থেকেই ছিল। সিঙ্গাপুরে চাকরি করতে যাওয়ার জন্য ভিসা, যাতায়াতের খরচ মিলিয়ে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়ে যান ইউনুস।
হায়দরাবাদের চাকরি ছেড়ে ওড়িশার কটকে বাড়িতে ফেরেন ইউনুস। ব্যাঙ্কে স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে টাকা নেওয়ার পাশাপাশি মহাজনদের কাছ থেকেও ধার করেন। দু’দফায় সেই টাকা দালাল মারফত পৌঁছে যায় মুম্বইয়ে।
নির্দেশ আসে, “৩০ জুন কলকাতায় পৌঁছে যাও। টিকিট, ভিসা সব পৌঁছে যাবে।” বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার একবালপুরে বন্ধুর বাড়িতেই পৌঁছে যায় সেই টিকিট ও ভিসা। এক মূহূর্তের জন্যও সন্দেহ দানা বাঁধেনি ইউনুসের মনে।
বিকেলে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য সকালেই পৌঁছে গিয়েছিলেন পঞ্জাবের গুরপ্রীত সিংহ। ২৪ বছরের এই যুবক বলেন, “আমার মা এই খবর পেলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। আমি গাড়ি চালানোর চাকরি পেয়ে মালয়েশিয়া যাচ্ছিলাম। এখন দেখছি, পঞ্জাবে ফিরে গিয়ে গাড়ি চালানো অনেক ভাল।” প্রতারণা করে প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নভি মুম্বইয়ের ভাসি এলাকার তানিয়া ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি সংস্থা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে চান গুরপ্রীতেরা। তাই এ দিনই সদলবল মুম্বই রওনা হন তাঁরা।
Previous Story Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.