|
|
|
|
জোড়া কচ্ছপ সঙ্গী, কলকাতা আসছেন সুনীল |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে পেয়েছেন প্রিয়তম উপহার— হার্ভার্ডের অধ্যাপক নিয়াল ফার্গুসনের লেখা বই ‘সিভিলাইজেশন: দ্য ওয়েস্ট অ্যান্ড দ্য রেস্ট’। সেই উপহার আর দীর্ঘদিনের সঙ্গী দুই কচ্ছপ, ওমেগা ও টেক্সাসকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা ফিরে যাচ্ছেন গত কাল কেন্দ্রীয় অর্থসচিবের পদ থেকে অবসর নেওয়া সুনীল মিত্র।
সুনীলবাবুর ছোটবেলা কেটেছে দিল্লিতেই। এখানকার স্কুল-কলেজেই পড়াশোনা। কিন্তু শৈশবের বন্ধুরা সবাই এ দিক ও দিক ছিটকে গিয়েছেন। আত্মীয়স্বজনরা সব পশ্চিমবঙ্গে। স্ত্রী-কন্যাও কলকাতাতেই থাকেন। এত দিন সুনীলবাবু মজা করে বলতেন, “আমি দিল্লিতে তপস্বীর জীবন কাটাই।” আজ বললেন, “কলকাতা আমার ছোটবেলার শহর নয় বটে। কিন্তু কলকাতায় দীর্ঘদিন রাজ্য সরকারের দায়িত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছি। এখন অবশ্য পরিবারের কাছে ফিরে যাচ্ছি।’’
এ বার কি তবে শুধুই অবসর যাপন আর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো? সুনীলবাবুর জবাব, “একেবারেই না। ওই শুধু মাটি কুপিয়ে বাগান করব, এখনই সেটা ভাবতে পারছি না।” কলকাতা গিয়ে নতুন রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাজ করার কথাও ভেবে দেখতে রাজি তিনি। তাঁর কথায়, “এখনও কোনও প্রস্তাব আসেনি। তবে কোনও চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পেলে অবশ্যই নেব।”
১৯৯৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত রাজ্য সরকারে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সুনীলবাবুর। তিনি যখন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার দায়িত্বে, তখনই কলকাতার গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল বিক্রি ও বহু বন্ধ সরকারি সংস্থার পুনর্গঠন হয়। আবার বিদ্যুৎ দফতরেও তাঁর আমলেই সংস্কারের কাজ শুরু হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহণ ও বণ্টনের জন্য পৃথক সংস্থা তৈরির কাজ রাজ্যেই সব থেকে সফল বলে সুনীলবাবুর দাবি। কারণ অন্যান্য রাজ্যে যখন এই ধরনের সংস্থাগুলি লোকসানে চলছে, তখন রাজ্যের তিনটি বিদ্যুৎ সংস্থাই লাভ করছে।
গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে প্রথমে বিলগ্নিকরণ সচিব, তার পর রাজস্বসচিব এবং আরও পরে একই সঙ্গে অর্থসচিব হিসেবে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকে কাজ করেছেন সুনীলবাবু। এবং যথেষ্ট দাগ রেখেছেন বলেই মন্ত্রকের সকলের মত। শুধু প্রণববাবু নয়, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও তাঁকে পছন্দ করতেন।
সুনীলবাবুর বিচারে এই দু’বছরে সব থেকে ‘চ্যালেঞ্জিং টাস্ক’ ছিল ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারি রাজস্বসচিবের দায়িত্ব নেওয়া। তিনি বলেন, “সে একেবারে অগাধ সমুদ্রে পড়েছিলাম। কারণ রাজস্ব দফতরের আসল কাজই হচ্ছে কর-ব্যবস্থা। আমি তার কিছুই বুঝতাম না। এ দিকে ২৬ দিন পরেই বাজেট! ঠাকুরের দয়ায় ভালয় ভালয় উতরে গিয়েছিলাম।”
গত আর্থিক বছরে কেন্দ্রের রাজস্ব আয় নিয়ে যথেষ্ট খুশি সুনীল। কারণ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছিল ৭ লক্ষ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আয় হয়েছে তার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তবে যে আর্থিক পরিস্থিতিতে তিনি অর্থসচিবের দায়িত্ব ছাড়ছেন, সেখান থেকে আগামী দিনে সাবধানে পা ফেলতে হবে বলেই সুনীলবাবুর মত। কারণ মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের চড়া হার। তাঁর ব্যাখ্যা, “মুদ্রাস্ফীতির কারণ অনেকটাই আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম। তাই ক্ষতিস্বীকার করেও শুল্ক কমানো হয়েছে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির ফলে মানুষের ব্যয় কমলে, আর্থিক বৃদ্ধির হারও কমতে পারে। আবার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার বাড়ালে দীর্ঘ মেয়াদে কর্পোরেট বিনিয়োগও শ্লথ হয়ে যেতে পারে। যেটা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার বিষয়।”
তবে এর মধ্যেও ‘রুপোলি রেখা’ দেখছেন সদ্য প্রাক্তন অর্থসচিব। তাঁর বক্তব্য, “ভাল দিক হচ্ছে চলতি অর্থবর্ষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আদায়ের পরিমাণ খুব ভাল। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এই রকম চললে এ বছরও রাজস্ব আয় খুব ভাল হওয়ার কথা।” তবে আর্থিক ঘাটতি নিয়ে এখনই কোনও ভবিষ্যৎবাণীতে যেতে চান না। তাঁর যুক্তি, “চলতি বছরে আর্থিক ঘাটতির হার ৪.৬%-এ বেঁধে রাখার কথা বলা হয়েছে। তা করতে গেলে সরকারকে সবর্শক্তি নিয়ে ঝাঁপাতে হবে।”
এত দিন দিল্লিতে সুনীলবাবুর সঙ্গী ছিল তাঁর দুই পোষা কচ্ছপ। মস্কোতে থাকার সময় নৌবাহিনীর এক অফিসার তাঁকে ওই কচ্ছপ দু’টি উপহার দিয়েছিলেন। সুনীলবাবু মনে করিয়ে দেন, এরা কিন্তু বিপন্ন প্রজাতির নয়। তবে তারাও ৩০০ বছর বাঁচবে। সেই ওমেগা ও টেক্সাস-ও এ বার সুনীলবাবুর সঙ্গে কলকাতায় যেতে তৈরি। |
|
|
|
|
|