সিএসটিসি
হাঁড়ির হাল কী ভাবে ঘুচবে, জানে না কেউ
য় একর জায়গা নিয়ে সিএসটিসি-র বাস ডিপো। সংরক্ষিত এলাকা, ভিতরে প্রবেশ নিষেধ। এক-তৃতীয়াংশ জায়গা জুড়ে অচল বাসের সারি। দোতলা দু’টি ভবনের অবস্থাও ভাল নয়। ক’দিন আগে ডিপোর হাল দেখতে গিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সী। ক্ষিপ্ত মন্ত্রী সিএসটিসি-র কর্তাদের কাছে ডিপোর ওই অবস্থার কারণ জানতে চান। বলেন, “১ জুলাইয়ের মধ্যে আমাকে এ সবের সবিস্তার রিপোর্ট দেবেন।”
মন্ত্রী ঠিক কী দেখেছিলেন কসবার ওই ডিপোয়? সম্প্রতি এক সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বিভাগে কর্মীদের বসার আসন বেশির ভাগই ফাঁকা। বিভিন্ন কর্মী-সংগঠনের জন্য বরাদ্দ হয়েছে অন্তত পাঁচটি অফিসঘর। অপরিচ্ছন্ন, অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার। ছাদ ফেটে জল পড়ছে। দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে নানা জায়গায়। ডিপোর ভিতরে বর্জ্যের একাধিক স্তূপ। পুলিশের বাজেয়াপ্ত করা বেশ কিছু অটো পড়ে আছে ডিপোয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ডিপোর ১০৯টি বাসের মধ্যে ৬৩টি বাতিল করার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। চলার উপযুক্ত ৪৬টি। এর মধ্যে রাস্তায় চলছে ২৮টি।
কেবল কসবা ডিপোই নয়, প্রায় একই হাল সিএসটিসি-র ১১টি ডিপোর। বিভিন্ন রুটে কমছে সিএসটিসি-র বাস। শিয়ালদহ থেকে হাওড়া রুটের বাস দু’-চার মাস আগেও ছাড়ত গড়ে প্রতি তিন মিনিট অন্তর। এখন ব্যবধান বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ মিনিট। দেখা মেলে না এক সময়কার অতি পরিচিত ৫, ৬, ২, ২বি-র মতো বিভিন্ন রুটের বাসের। বাস চলছে কম। তাই লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেও টিকিট বিক্রি থেকে আয় বাড়ানো যাচ্ছে না। সব চেয়ে বেশি আয় হাওড়া এবং সল্টলেক ডিপো থেকে ছাড়া নানা রুটের বাসে। এ ক্ষেত্রেও মাসে এক-একটি ডিপোয় ৬০ লক্ষ টাকাও আয় হচ্ছে না।
পড়ে আছে বেহাল বহু বাস। সিএসটিসি-র কসবা ডিপোয়। নিজস্ব চিত্র
পরিবহণমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সিএসটিসি-র কর্তারা যে রিপোট তৈরি করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে: সিএসটিসি-র বাসের সংখ্যা ৮৮০। চলছে প্রায় ৪৭০টি। মোট কর্মী-সংখ্যা ৬১৭৩। এই হিসেবে প্রতিটি চালু বাসের জন্য কর্মী আছেন ১৫.২ জন। প্রতিটি চালু বাসের জন্য অফিসারের গড় সংখ্যা ৫। কর্মীদের অর্ধেকের বেশির বয়স ৫০ বা তার বেশি। কিমি-পিছু যেখানে আয় হচ্ছে ১৭.৬৩ টাকা, ব্যয় সেখানে ৪৮.৪২ টাকা। প্রায় ১৪ কোটি টাকা মাসে খরচ হচ্ছে সিএসটিসি-র জন্য। এর মধ্যে বেতনেই লাগছে প্রায় ১০ কোটি। সরকারি হিসেবেই উদ্বৃত্ত চালক ও কন্ডাক্টরের সংখ্যা যথাক্রমে ২,৮৬৮ ও ৩,৫৫৮। যাত্রী ছাড়াই সিএসটিসি-র বাস চলে মাসে প্রায় সওয়া ১ লক্ষ কিমি। বেহাল বাসের কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন ডিপোয় বাসের সূচি ঘোষিত হয়। কিন্তু তার ২০ শতাংশ বাস রাস্তায় বার হচ্ছে না।
কেন এই হাল? সংস্থার এমডি অশোক ধর বলেন, “এ সব ‘ডিরেক্টর অফ অপারেশন’ (ডিওপি) বলতে পারবেন।” ডিওপি সুপ্রতিম সোমের কথায়, “অনেক বাসের যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে গিয়েছে। সেগুলি ঠিক করার প্রয়োজনীয় অর্থ নেই। বর্ষায় অপেক্ষাকৃত বেশি বাস বসে যাচ্ছে।” তিনি স্বীকার করেন, বাস কম চলায় অনেক কর্মীকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সিএসটিসি-র কর্তারা স্বীকার করেছেন, তাঁদের নানা ভবন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনও নির্দিষ্ট তহবিল নেই। কর্মীদের মাইনে দিতেও হাত পাততে হয় সরকারি কোষাগারে, বাড়তি টাকার সঙ্কুলান তাই করা যায় না। অন্য দিকে, আইএনটিইউসি-সমর্থিত ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক তথা সিএসটিসি শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক উত্তম দাস বলেন, “আমলা-অফিসারদের সর্বস্তরে আসছি-যাচ্ছি মানসিকতার জন্যই এই হাল।”
লোকসানে চলা সিএসটিসি-কে নিয়ে বামফ্রন্ট সরকার নানা সময়ে অস্বস্তিতে পড়েছে। ২০১০-এ বিখ্যাত পরামর্শদাতা সংস্থা ‘ডেলয়েট টুশে ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’কে সংস্থার রোগ সারানোর পথ বাতলানোর দায়িত্ব দেয় সরকার। রিপোর্টে তারা বলে, সিএসটিসি-র পিছনে সরকারের ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে। সরকারি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে, সুদ ৩৪৪ কোটি, আসল ১৯১ কোটি। অর্থাৎ মোট ৫৩৫ কোটি টাকা। ওই সংস্থা সুপারিশ করে, ১২ হাজার কর্মীকে বসিয়ে দিতে হবে। অলাভজনক ১২টি রুট বন্ধ করা, কিমি-পিছু আয় বাড়িয়ে ১৭.২৫ টাকা করা, বাসপিছু কর্মী কমানো এ সব সুপারিশও করে। কিন্তু কোনওটি রূপায়িত হয়নি। ক্রমেই রোগ জটিল হয়েছে সিএসটিসি-র।
Previous Story Calcutta Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.