|
|
|
|
কম্পিউটার নেই, স্থানাভাব |
দ্রুত বিচারে আদালতে শিফ্ট চান মমতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশে তিন কোটি মামলা জমে আছে বিভিন্ন আদালতে। এই পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বলেছেন, প্রয়োজনে রাজ্যের আদালতে শিফ্ট চালু করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে আদালতের পরিকাঠামো উন্নয়নের উপরে জোর দিয়েছেন তিনি।
কলকাতা হাইকোর্টে এ দিন সারা দেশে জমে থাকা মামলার সংখ্যা হ্রাস প্রকল্প রূপায়ণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন, এ রাজ্যের আদালতের পরিকাঠামো অত্যন্ত খারাপ। রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে পরিকাঠামোর অভাবের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জায়গা নেই। বিচারকদের অনেকে গাড়ি পান না। কম্পিউটার চালানোর লোক আছে, কিন্তু কম্পিউটার নেই। কয়েক দিন আগে রাজ্যের বিচারমন্ত্রী ব্যাঙ্কশাল কোর্টে গিয়েছিলেন। সেখানকার অবস্থা সম্পর্কে তিনি তাঁকে একটি রিপোর্ট দিয়েছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আদালতগুলোতে দ্রুত ই-গভর্ন্যান্স চালু করতে হবে। আমি বলে দিয়েছি।”
কলকাতা হাইকোর্টের ১৫০ বছর উপলক্ষে বিকেলে অন্য একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার আইনজীবীদের জন্য আবাসন প্রকল্প গড়তে চায়। মঞ্চে বসা রাজ্যের বিচারমন্ত্রী মলয় ঘটককে প্রয়োজনীয় রূপরেখা তৈরির নির্দেশও দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আইনজীবীদের সুরক্ষার ব্যপারটা মাথায় রাখতে হবে আমাদের। ওঁদের কোনও অবসরকালীন নিশ্চয়তা নেই। বিমা বা স্বাস্থ্য প্রকল্পের মাধ্যমে ওঁদের এবং ওঁদের পরিবারের লোকেদের জন্য কিছু করতে হবে।” ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির’ রবীন্দ্রনাথের এই কবিতা উদ্ধৃত করে মমতা বলেন, “কলকাতা হাইকোর্টকে সহযোগিতা করলে সারা দেশের মধ্যে মাথা তুলে পথ দেখাতে পারবে এই হাইকোর্ট।” বিকেলের অনুষ্ঠানেও কখনও ‘অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো...’ কখনও বা ‘দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে...’ উদ্ধৃত করে রবীন্দ্রনাথের শরণাপন্ন হন মুখ্যমন্ত্রী। |
|
হাইকোর্টের অনুষ্ঠানে প্রণব-মমতা। নিজস্ব চিত্র |
জমে থাকা মামলা কমানোর প্রকল্পের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি। তিনি বলেন, “আগামী ছ’মাসের মধ্যে অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিম্ন আদালতগুলিতে জমে থাকা মামলার ৪০ শতাংশ কমানোর চেষ্টা হবে। কাজটা খুব কঠিন। কিন্তু আমরা আশাবাদী। কাজ ঠিকমতো হলে বিচারাধীন বন্দিদের দুই-তৃতীয়াংশ জেলের বাইরে আসতে পারবেন।” মইলি জানান, গোটা দেশে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা প্রায় আট লক্ষ। নিম্ন আদালতগুলির পরিকাঠমোর জন্য ২১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। লাগলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে আরও অর্থের জন্য আর্জি জানানো হবে। মইলি বলেন, “আশার কথা, দেশের ২১টি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিরা এই প্রকল্প রূপায়ণে উদ্যোগী হয়েছেন।” তিনি জানান, যত লোক আইনি ব্যবস্থা নিতে চান, এখন তাঁদের মাত্র ৫% আদালতে যেতে পারছেন। “বিচার ব্যবস্থার সুযোগ নেওয়ার দরজা সাধারণ মানুষের কাছে আরও দরাজ করে খুলে দিতে হবে,” মন্তব্য করেন মইলি।
বিকেলে হাইকোর্টের বার কাউন্সিলের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও বকেয়া মামলার চাপ কমানো এবং আইনজীবীদের সামাজিক সুরক্ষার প্রয়োজনের উপরে গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, “বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতার অর্থ, মানুষকে এই ব্যবস্থার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা। আদালতে আধুনিক নানা যন্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি আইনজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধির উপরেও নজর দিতে হবে।” কলকাতা হাইকোর্টের দেড়শো বছর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। তিনি এই হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা ও বিবর্তনের ইতিবৃত্ত শোনান। এই নিয়ে অনুষ্ঠানে একটি বই উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। দেখানো হয় হাইকোর্ট নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্র।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেল, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ-সহ বিশিষ্ট অনেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। |
|
|
|
|
|