ভর্তির দাবিতে স্কুলে-কলেজে তালা দিয়ে বিক্ষোভ
বেদনপত্র জমা দিয়েও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে না পারায় স্কুলের মূল দরজায় তালা দিয়ে শিক্ষকদের আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাল কিছু ছাত্র। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটে দুবরাজপুরের হেতমপুর রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ে। ছাত্রদের এই বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও। পরে পুলিশ এসে দু’পক্ষকে নিয়ে বসে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করার আশ্বাস দেওয়ায় দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ স্কুলের তালা খুলে দেন বিক্ষোভকারীরা।
এ দিনই একাদশ শ্রেণিতে ছাত্র-ভর্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে মুরারই কবি নজরুল কলেজেও। সবাইকে না নিয়ে সীমিত সংখ্যক পড়ুয়াকে ভর্তি করা হয়েছে, এই অভিযোগে ওই কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির টিচার-ইন-চার্জ-সহ ৬ জন শিক্ষক এবং এক জন শিক্ষাকর্মীকে এ দিন তালাবন্দি করে রাখে কিছু ছাত্রছাত্রী। নেতৃত্বে ছিল ছাত্র পরিষদ। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
দুবরাজপুরে শুক্রবার দয়াল সেনগুপ্তের তোলা ছবি।
হেতমপুর রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপনকুমার সাধু বলেন, “ভর্তি সমস্যা নিয়ে আগামী বুধবার দুবরাজপুরের বিডিও এলাকার সমস্ত উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আশা করি তাতে সমস্যা মিটবে।” তবে, এ দিনের বিক্ষোভের জেরে স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ করে দিতে হয় বলে দাবি করেছেন হেতমপুর রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। তাঁদের অভিযোগ, এতক্ষণ শিক্ষকদের আটকে রাখার ফলে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী বাড়ি ফিরে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শ’তিনেক পড়ুয়ার জন্য রান্না করা মিড ডে মিলের খাবারও ফেলা গিয়েছে। এ সবের জন্য তৃণমূল নেতাদেরই দায়ী করেছেন স্কুল-শিক্ষকদের একাংশ।
আর যাঁদের ‘মদতে’ এ দিনের বিক্ষোভ, সেই তৃণমূল নেতাদের অন্যতম শম্ভুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, যখন তালা খোলা হয়েছিল, তখনও স্কুলে প্রচুর ছাত্রছাত্রী ছিল। ইচ্ছে করলেই ক্লাস নিতে পারতেন শিক্ষকেরা। তাঁর আরও দাবি, “এই বিক্ষোভের কথা আগে থেকেই জানানো হয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষকে। তাই মিড-ডে মিল ফেলা গেলে সে দায় শিক্ষকদেরই। আমাদের বা আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের নয়।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই স্কুলের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল আশপাশের গাঁড়াপদুমা, শিমুলডিহি, তরুলিয়া, মেটেগ্রাম-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা। ভর্তি প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়ে গেলেও ৩০ জন ছাত্র ওই স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। সেই ঘটনাকে ঘিরেই এ দিন ঝামেলার সূত্রপাত। গাঁড়াপদুমা গ্রামের উদয় বাউরি, শিমুলডিহির শেখ সইফুদ্দিন বা তরুলিয়া গ্রামের শেখ হাসিবুল হোসেনরা বলে, “আমাদের গ্রামে কোনও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল না থাকায় ৮-১০ কিলোমিটার দূরের এই স্কুলই একমাত্র ভরসা। আবেদনপত্র জমা দিয়েও ভর্তির হতে না পেরে অথৈ জলে পড়েছি। বাধ্য হয়েই আন্দোলনের পথে যেতে হল।” ওই স্কুলে ভর্তি হতে না পারলে ফের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।
শম্ভুনাথবাবুর অভিযোগ, “প্রতি বারই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করা নিয়ে এই স্কুল টালবাহানা করে। এ বারেও ওই সব ছাত্রের ভর্তির আর্জি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। নৈতিক কারণেই ছাত্রদের আন্দোলনে আমরা সামিল হয়েছি।”
স্কুল সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, প্রায় ৯০০ ছাত্রছাত্রী বিশিষ্ট এই স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ১৫০ জন পড়ুয়ার ভর্তির সুযোগ থাকলেও ইতিমধ্যেই ১৮৪ জনকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে স্কুলেরই একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে অনুত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরাও রয়েছে। অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রীদের বসার জন্য ক্লাসঘর, বেঞ্চ প্রভৃতি পরিকাঠামোগত সমস্যার পাশাপাশি অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যার শিক্ষকের অভাব অসুবিধা আরও বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আর নতুন করে ছাত্রভর্তির ব্যাপারে আপাতত সাড়া দিতে রাজি হননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষকের কথায়, “আমরাও চাই সকলেই পড়াশোনা করুক। কিন্তু পরিকাঠামো না থাকলে কী ভাবে সেটা করা সম্ভব?” ছাত্রেরা অবশ্য এই সব যুক্তি শুনতে নারাজ। তাদের একটাই প্রশ্ন, “আমরা এখন কোথায় যাব। আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে।” এর উত্তর জানা নেই স্কুল কর্তৃপক্ষেরও।
মুরারই কবি নজরুল কলেজে এ দিন একই কারণে বিক্ষোভ হয়েছে। আবেদনকারী আরও ছাত্রছাত্রীকেই কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির দাবি তুলেছে বিক্ষোভকারীরা। ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে হওয়া বিক্ষোভের সময় শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে সাত জনকে অফিসঘরে আটকে রেখে ঘরের আলো, পাখার স্যুইচ বন্ধ করে দেওয়া হয়। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির টিচার-ইন-চার্জ মজিদ শেখ বলেন, “এখানে যা পরিকাঠামো, তাতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি মিলিয়ে ৩০০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা সম্ভব নয়। পরিচালন সমিতির সঙ্গে আলোচলা করে এ বার একাদশে অতিরিক্ত ৭৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের দাবি, আরও বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি করাতে হবে। ক্লাসঘরের অভাব থাকলে আমরা কী করতে পারি? বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি।” ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক মাফিজুল শেখের অবশ্য দাবি, “আরও ছাত্রছাত্রী ভর্তি করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তা করছেন না। এর ফলে ভর্তি হতে না পারা ছাত্রছাত্রীরা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।” হেতমপুর স্কুলের মতো এখানেও বিশৃঙ্খলার জেরে চারটি পিরিয়ড হওয়ার পরে আর কোনও ক্লাস হয়নি। মুরারই ১ ব্লকের যুগ্ম-বিডিও অমর ভট্টাচার্য কলেজে পৌঁছে ভর্তি সমস্যা মেটাতে এলাকার সমস্ত হাইস্কুলকে নিয়ে বৈঠকে বসার আশ্বাস দেন। এর পরেই বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ বিক্ষোভকারীরা তালা খুলে মুক্তি দেন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের।
Previous Story Purulia Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.