মা ও দুই ছেলের ঝুলন্ত দেহ নবদ্বীপে
কই ঘরে মা ও দুই ছেলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে নবদ্বীপের পোড়ামাতলায়। মৃতেরা হলেন, মৃদুলা সাহা (৫৫), সঞ্জয় সাহা (৩৫) ও সমরেশ সাহা (৩০)। তিন জনেরই গলায় নাইলনের দড়ির ফাঁস দেওয়া ছিল। সঞ্জয় ও সমরেশের পকেট থেকে দু’টি ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়া গিয়েছে। তাতে তাঁরা দু’জনেই বড় ছেলে সঞ্জয়ের স্ত্রী পায়েল সাহা ও তাঁর বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে ‘মানসিক নির্যাতন’ করার অভিযোগ করেছেন। সঞ্জয়ের স্ত্রীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “সুইসাইড নোটে বড় ছেলের স্ত্রীর দিকেই পারিবারিক অশান্তি তৈরির করার অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা তাই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্তও শুরু হয়েছে। তদন্তে অন্য কোনও দিক উঠে এলে, আমরা তা-ও খতিয়ে দেখব।” এই দিন রাতে পায়েলের বাবা গোপাল সাহা বালেশ্বর থেকে নবদ্বীপে আসেন। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নবদ্বীপের তিন মৃতদেহ।
পায়েল অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, “অন্য অনেক পরিবারের মতো আমার সঙ্গেও আমার শাশুড়ির সম্পর্ক তিক্ত ছিল। কিন্তু কোনও মানসিক নির্যাতনের প্রশ্নই ওঠে না। বরং তিনিই আমাকে মানসিক নির্যাতন করতেন। গোটা পরিবারই চলত শাশুড়ির কথায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটা তিনি কী করলেন?” তিনি বলেন, “আমার স্বামীও তাঁর মায়ের কথা শুনেই চলতেন। সম্প্রতি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু কী চিকিৎসা হচ্ছে, তা-ও আমি জানতে পারিনি। ফলে আমার উপর রাগে আত্মহত্যার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।”
মৃদুলাদেবীর স্বামী পবিত্ররঞ্জন সাহা বস্ত্র ব্যবসায়ী। তিনি জানান, রোজকার মতো এই দিন সকালেও তিনি প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। ফিরে এসে পাড়ার চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। এ দিন ছিল নবদ্বীপে তাঁত কাপড়ের হাট। হাটে তাঁদের দোকানে যাওয়ার জন্য সঞ্জয়বাবুকে ডাকতে লোক এসেছিল। তাই পবিত্রবাবু বাড়ি ফিরে আসেন।

বড় ছেলে সঞ্জয়
সাহার স্ত্রী পায়েল।
কিন্তু বারবার ডাকার পরেও সঞ্জয়বাবুর সাড়া না পেয়ে পবিত্রবাবুর সন্দেহ হয়। তিনি বলেন, “আমার স্ত্রীর ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। দরজা কিছুতেই খুলছে না দেখে আমি ও বৌমা অবাক হয়ে যাই। তার পরে দরজা ভেঙে ফেলে দেখি, তিন জনের দেহ পরপর ঝুলছে।” তার পরে তাঁরাই দেহগুলি এক এক করে নামান। প্রতিবেশী বাবন চৌধুরী জানান, গত সোমবার সঞ্জয়বাবু নবদ্বীপের বড়বাজার থেকে নাইলনের দড়ি কিনেছিলেন। বাবনবাবু বলেন, “সঞ্জয়কে খুব অসুস্থ মনে হচ্ছিল। বলল বাড়িতে কাজ হচ্ছে, তাই দড়ি লাগবে।” সঞ্জয়বাবুর সঙ্গে পায়েলের বিয়ে হয় ছ’বছর আগে। তাঁদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। ছেলেমেয়েদের নিয়ে পায়েল থাকেন তিন তলায়। পাশের ঘরেই থাকতেন তাঁর
দেওর। সঞ্জয়বাবুরও একটি আলাদা ঘর ছিল। দোতলায় থাকেন সস্ত্রীক পবিত্রবাবু। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কিছু দিন আগে পায়েল বাপের বাড়ি ওড়িশার বালেশ্বরে চলে যান। তাঁর বাবাও সেখানকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। পায়েল ফেরেন সপ্তাহখানেক আগে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, তার পরে সম্প্রতি ওই পরিবারে অশান্তি হয়েছিল। কিছু দিন যাবৎ পবিত্রবাবুর ব্যবসায় মন্দা তৈরি হয়েছিল বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে তাঁর অনেক টাকা ঋণও রয়েছে। সেই দেনা নিয়েও পরিবারে অশান্তি হত। পবিত্রবাবু বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদের বাজারে কিছু ঋণ থাকে। আমারও রয়েছে। কিন্তু তার জন্য কেউ আত্মহত্যা করবে কেন?”

সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
First Page Murshidabad Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.