|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
পূর্ত দফতরের কাজ |
মহাকরণের শৌচাগারে কি অবশেষে পরিবর্তনের সুবাতাস বহিবে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাকরণের অলিন্দে জমিয়া থাকা আবর্জনার স্তূপ, পূতিগন্ধময় শৌচাগার দেখিয়া যৎপরোনাস্তি বিরক্ত হইয়াছেন। এবং, তাহার পরেই পূর্তমন্ত্রী জানাইয়া দিয়াছেন, মহাকরণ সাফ রাখিবার কাজটি অতঃপর বেসরকারি হাতে ছাড়িয়া দেওয়া হইবে। পরিভাষায় যাহাকে বলে ‘আউটসোর্সিং’ বা কাজ-চালান। সাধু প্রস্তাব। যে কাজ ‘বাহির হইতে’ করাইয়া লওয়া যায়, তাহা সরকারের নিজের হাতে রাখিবার কোনও যুক্তি নাই। কেবল দুইটি প্রশ্ন বিবেচ্য। পূর্ত দফতরের যে কর্মীদের কাজ মহাকরণ সাফ রাখা, তাঁহারা যে সেই কাজে ফাঁকি দেন, তাহার কোনও শাস্তি হইবে না? অন্তত তিরস্কার? দ্বিতীয় প্রশ্ন, তাঁহাদের দায়িত্বটি বাহিরে চালান করিলে মহাকরণ সাফ হইবে বটে, কিন্তু তাঁহাদের কী হইবে? সরকারি চাকুরি প্রায় কলঙ্কের ন্যায়, এক বার লাগিলে যাইতে চাহে না, কিন্তু অন্তত তাঁহাদের অন্য কাজে নিয়োগ করা জরুরি, এবং সেই কাজ তাঁহারা ঠিক ঠিক করিতেছেন কি না তাহার তদারকি জরুরি।
মহাকরণ সাফ রাখিবার কাজটি বেসরকারি চালান করিবার সিদ্ধান্তটি গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু আরও গুরুত্বপূর্ণ তাহার পশ্চাতের চিন্তাটি। মুখ্যমন্ত্রী বলিয়াছেন, আবর্জনাময়, অপরিষ্কার মহাকরণ রাজ্যের পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন নহে। কথাটি তাৎপর্যপূর্ণ। মহাকরণ রাজ্যের মূল ক্ষমতাকেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের মুখ। সেই মুখটি যদি অবহেলার, অযত্নের চিহ্ন বহন করে, তবে রাজ্যের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সম্যক কারণেই চিন্তা জন্মাইতে পারে। স্বাস্থ্য বলিতে শুধু অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য নহে। সংস্কৃতির স্বাস্থ্য। আবর্জনাময় মহাকরণ একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় এই রাজ্যে নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা নাই। অযত্নই এই রাজ্যে স্বাভাবিক। যাঁহারা এই রাজ্যে নূতন, রাজ্যের সহিত সম্পর্ক গড়িতে আগ্রহী, তাঁহারা এই বার্তাগুলি হইতেই রাজ্যের সম্বন্ধে ধারণা তৈরি করিবেন। আর যাঁহারা এই রাজ্যেরই মানুষ, এই বার্তায় তাঁহারা বুঝিবেন, কিছুই বদলায় নাই। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের ভাবমূর্তি উদ্ধারে উদ্যোগী। তাহার সূচনাটি যে ক্ষমতার অলিন্দ হইতেই করিতে হইবে, এই উপলব্ধি পরিণতমনস্কতার পরিচায়ক। তবে, অচলায়তন ভাঙিবার উদ্যোগ যখন আরম্ভ হইয়াছে, তখন তাহা শুধু মহাকরণে সীমাবদ্ধ না থাকাই বিধেয়। অন্যান্য সরকারি ভবন তো বটেই, গোটা কলিকাতা শহরের মুখ পরিষ্কার করিবার সময় আসিয়াছে।
কিন্তু এই সূত্রেই দ্বিতীয় একটি প্রশ্ন ওঠে। মহাকরণের দেখাশোনা, পূর্ত দফতরকে করিতে হইবে এই পুরানো ধারণাই যদি বাতিল হইল, তবে তাহাকে বৃহত্তর পরিসরে সম্প্রসারিত করা হইবে না কেন? রাস্তাঘাট, সরকারি ইমারত, সেতু ইত্যাদি নানাবিধ পূর্ত-সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেন উপযুক্ত সংস্থার হাতে তুলিয়া দেওয়া হইবে না? অন্তত তাহার জন্য যথার্থ চেষ্টা করা জরুরি। এই ধরনের কাজ সরকারের মূল দায়িত্ব হইতে পারে না, অন্য উপায় না থাকিলে সরকারকে বাধ্য হইয়া তাহার দায়িত্ব লইতে হয়। পূর্ত-সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ সরকারকেই করিতে হইবে এই ধারণা ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্যমাত্র। পরবর্তী কালে তাহা লালিত হইয়াছে, তাহার কারণ একটিই: বৃহৎ সরকার কর্তাব্যক্তিদের মহিমা বৃদ্ধি করে। এই কারণেই সরকার কিছুই ছাড়িতে চাহে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক ঐতিহ্য ভাঙিতেছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত সরকারের কলেবর কমাইবার চেষ্টা করেন নাই। করিবেন কি? পূর্ত দফতর এখনই তুলিয়া দেওয়া হয়তো কঠিন, কিন্তু মেদ কমানো? মুখ্যমন্ত্রী ভাবিবেন কি? |
|
|
|
|
|