সম্পাদকীয় ১...
সর্বৈব অন্যায়
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নগুলি দেখাইয়া দিল, তাহারা চিন্তায় এবং কর্মে মান্ধাতার আমলেই পড়িয়া আছে। এই প্রতিষ্ঠানের হৃত মর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য যখন সরকার ও বিদ্বজ্জনদের তরফে একটা বহু-প্রতীক্ষিত সার্বিক প্রচেষ্টা শুরু হইয়াছে, ঠিক তখনই টিউশন-ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ কলেজ স্ট্রিট অবরোধ, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রিলে-অনশন ইত্যাদি আন্দোলন কর্মসূচি রূপায়ণে ব্যস্ত। এক দিকে বামপন্থী ইউনিয়ন কলেজ স্ট্রিট অবরোধ করে, তো অন্য দিকে বাম-বিরোধী ইউনিয়ন রিলে-অনশনে বসিয়া যায়। এই সূত্রে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পোস্টারের জঞ্জাল, স্লোগানের চিৎকার, প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনিয়নের অনুগামীদের বচসা, হাতাহাতি সব মিলাইয়া নরক গুলজার। গত শতাব্দীর ষাট-সত্তরের দশকে অনুরূপ পরিবেশই ক্রমে শিক্ষায় রাজ্যব্যাপী নৈরাজ্য আবাহন করিয়া আনিয়াছিল। বর্তমানেও শিবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং ও সায়েন্স ইউনিভার্সিটি এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন শিকেয় তোলা আন্দোলন ওই প্রতিষ্ঠানগুলির কুখ্যাতি বাড়াইয়া দিয়াছে। ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রেসিডেন্সির উৎকর্ষের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের প্রয়াসও কি এ ভাবে বানচাল করা হইবে?
আন্দোলনের পদ্ধতি যেমন অন্যায় এবং উন্নয়নবিরোধী, আন্দোলনের দাবিও তেমনই। ফি কত বাড়ানো হইয়াছে? বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়াদের জন্য মাসিক পঞ্চাশ টাকা আর কলা বিভাগের জন্য পঁচাত্তর টাকা। দেশের প্রথম শ্রেণির বিভিন্ন উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানের (যথা আই আই টি বা আই আই এম) সহিত তুলনা করিলে বৃদ্ধির এই অঙ্ক হাস্যকর রকমের কম। উপরন্তু যে সকল পড়ুয়া এই বর্ধিত ফি দিতে অপারগ, মেধাবী হইলে তাহাদের ফি মকুবের ব্যবস্থাও আছে। তাহার পরেও যখন বৃদ্ধি রদ করার দাবিতে দুই দল ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি করিতে এবং সমগ্র বিদ্যাস্থানের পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত করিতে ব্যগ্র, তখন বুঝিতে হইবে বিষয়-মাহাত্ম্য নয়, ছাত্রস্বার্থ নয়, কোন দলের ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উপর অধিকতর প্রভাব খাটাইতে পারিবে, তাহার ন্যক্কারজনক প্রতিযোগিতাই আন্দোলনের নিহিত তাগিদ। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণকে হবু রাজনীতিক গড়ার প্রশিক্ষণ-শিবির রূপে ব্যবহার করার যে-সংস্কৃতি এই রাজ্যে দৃঢ়মূল, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়কেও আজ তাহারই মূল্য দিতে হইতেছে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য এই অন্যায়ের বিরোধিতা করা, নচেৎ তাঁহারাও নিছক সুবিধাবাদী বলিয়াই সাব্যস্ত হইবেন।
যাঁহারা রাজনীতিতে কেরিয়ার গড়িতে চাহেন, ছাত্রনেতা হইতে পরবর্তী কালে মুখ্যমন্ত্রী হইতে চাহেন, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁহাদের জন্য নয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেবল যথার্থ উচ্চ মানের মেধা লালন করার এবং আন্তর্জাতিক স্তরের শিক্ষা বিতরণের কেন্দ্র হিসাবে গড়িয়া তোলার চেষ্টা শুরু হইয়াছে। উচ্চশিক্ষায় একদা অগ্রগণ্য পশ্চিমবঙ্গের ক্রমিক অধোগমনের ইতিবৃত্তে যে সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতির প্রতিযোগিতার ক্রিয়া থাকিয়াছে, তাহাকে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ হইতে নির্বাসিত করা সর্বতোভাবে আবশ্যক। রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাসম্পন্ন ব্যক্তিরা অন্যত্র চলিয়া যান, প্রেসিডেন্সিকে তাহার পঠন-পাঠনের, অধ্যয়ন-অধ্যাপনার হৃত গৌরবে স্থিত হইতে দিন। প্রেসিডেন্সিতে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীর কুশপুতুল দাহ করিয়া উল্লাসে মাতিবার দিন গত হইয়াছে। সেই দুর্দিন ফিরাইয়া আনার অপচেষ্টা বঙ্গীয় সমাজকে রুখিতে হইবে। এ ব্যাপারে সরকার যদি কোনও কঠোর পদক্ষেপ করে, সমাজকে তাহা অনুমোদন করিতে হইবে। প্রেসিডেন্সিকে প্রেসিডেন্সিতে ফিরাইয়া লইতে হইবে, বঙ্গীয় সমাজকে শাসক দল এই প্রতিশ্রুতি দিয়া জনাদেশ চাহিয়াছিল। তাহা পূরণের পথে যাবতীয় বাধা দৃঢ় ভাবে অপসারণ করা দরকার।
First Page Editorial Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.